ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৯ ১৪৩১

আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৪৫ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার

শব ই বরাত। এ রাতটিকে ভাগ্য রজনী বোঝানো হয়। শবেবরাত ক্ষমার রজনী আর লাইলাতুল কদর (রমজানের শেষ দশকের একটি রাত) ‘ভাগ্যরজনী’। তবে ১৫ শাবানের রাতটির ফজিলত অনেক। যা নির্ভরযোগ্য হাদিসে প্রমাণিত।

হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী) ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন’ (ইবনে মাজাহ)।

এ হাদিসে বলা হয়েছে, শবেবরাত তথা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানে (মধ্য শাবানের রাত) আল্লাহ বান্দাদের ক্ষমা করেন।

শবেবরাতের ফজিলত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আর লাইলাতুল কদরের ফজিলত পবিত্র কোরআনের পূর্ণ একখানা সূরা দ্বারা প্রমাণিত।

সূরা দুখানের ৩-৪ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে (পবিত্র কোরআন) এক মুবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, আমি তো সতর্ককারী। এ রাতেই প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরিকৃত হয় (সূরা দুখান-৩-৪)।

কোরআন নাজিলের রাতই ভাগ্য রজনী। আর কোরআন নাজিল হয়েছে লাইলাতুল কদরে তা সূরা কদরের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে। শবেবরাত ক্ষমার রাত।

শবেবরাত সংক্রান্ত উল্লিখিত হাদিসে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মধ্য শাবানের রাতে ক্ষমা পাওয়ার জন্য শর্ত হলো অন্তরকে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করা। কেউ যদি সারা রাত নফল নামাজ পড়ে কিন্তু তার অন্তরকে এ দুই জিনিস থেকে মুক্ত না করে তাহলে সে শবেবরাতের বিশেষ ক্ষমার অন্তর্ভুক্ত হবে না। আবার কেউ যদি এ রাতে কোনো নফল নামাজ না-ও পড়ে, কিন্তু তার অন্তরকে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করে তাহলে হাদিস অনুযায়ী তার ক্ষমা পাওয়ার আশা আছে। অবশ্য সে নফল ইবাদতের সওয়াব থেকে মাহরুম হবে।

শবেবরাতে নফল নামাজ বা আমলের গুরুত্ব অবশ্য রয়েছে কিন্তু এ রাতে ক্ষমা পাওয়ার জন্য আগে এ দুই শর্ত (অন্তরকে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করা) পূরণ করতে হবে। আর নফল আমলের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার, সব আলেমের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত, শবেবরাতের সব নফল আমল মসজিদে সম্মিলিত না করে ঘরে একাকী করা উত্তম। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদিস শরিফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম-২/৬৩১-৬৪১। বরং একাধিক হাদিসে নফল নামাজ ঘরে পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে (ফরজ) নামাজ সম্পন্ন করে তখন তার উচিত সে যেন তার নামাজের কিছু অংশ (সুন্নত নামাজ) নিজের বাড়ির জন্য রাখে। কারণ বাড়িতে আদায় করা কিছু নামাজের মধ্যে আল্লাহতায়ালা কল্যাণ নিহিত রেখেছেন’ (মুসলিম)।

সাধারণ অবস্থায় যে ফরজ নামাজ অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় হয়, তার ব্যাপারেও করোনাভাইরাসের এ সংকটময় সময়ে ওলামায়ে কেরাম নিরুৎসাহিত করেছেন; ঘরে নামাজ পড়তে বলছেন। আর শবেবরাতসহ অন্যান্য নফল তো স্বাভাবিক অবস্থায়ও ঘরে পড়া উত্তম। তাই এখন তো আরও বিশেষভাবে এ নফল ইবাদত ঘরে করার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। আল্লাহতায়ালার দরবার থেকে ক্ষমা পেতে হলে প্রতিটি মুসলমানের উচিত তার অন্তরকে শিরকমুক্ত করা এবং তার আত্মীয়স্বজন, ভাইবোন, প্রতিবেশী কিংবা যে কারও প্রতি অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ বা অমঙ্গল কামনা থাকলে তা থেকে অন্তরকে মুক্ত করা। সব ধরনের শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হোক আমাদের অন্তর। আল্লাহ যেন আমাদেরও ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নেন।

এসএ/