ভাইরাসের গুজব ভাইরাল
ডা. মো. রেজাউল করিম
প্রকাশিত : ০৯:৪১ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৪:৪৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০ বুধবার
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। যা থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিয়েছে সতর্কতামূলক নানা প্রস্তুতি। নানাভাবে সচেতন করা হচ্ছে জনগণকে। এসব সচেতনতা ও সতর্কতার মধ্যেও ভাইরাস নিয়ে চলছে নানা গুজব ও গল্প কথা। যা নিয়ে মুখ খুলছেন স্বয়ং ডাক্তাররাও। যেমন ড. মো. রেজাউল করিম ভাইরাল হওয়া গুজব সম্পর্কে লিখেছেন। পাঠকের উদ্দেশ্যে তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
করোনা ভাইরাস নিয়ে সমাজে অনেক গুজব ও কুসংস্কার ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের মতোই ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ও তার প্রতিকার তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
১. করোনা ভাইরাসে কি নিশ্চিত মৃত্যু?
উত্তরঃ না, করোনা মানেই মৃত্যু নয়। যদিও করোনা ভাইরাসের কোন টিকা বা ঔষধ এখনো অাবিষ্কার হয়নি, কিন্তুু সাপোর্টিভ চিকিৎসায় ৯৫ ভাগ রোগীই সুস্থ হয়। হাঁ, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম,বয়স ৬০ এর বেশি এবং অাগে থেকেই কোন না কোন রোগে ( ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ , হাঁপানী, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ,ষ্ট্রোক) ভুগছেন তাদের মৃত্যুহার বেশি।
২. এই ভাইরাস কি ২৬-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মারা যায়? রোদে থাকলে কি এই ভাইরাস মারা যাবে?
উত্তরঃ মানুষের শরীরের ভিতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরকম কিছু সত্য হলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সাথে সাথে মারা যেত। এই ভাইরাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পার। তাই এই ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই।
৩. গরম পানি খেলে কি ভাইরাস মারা যাবে?
উত্তরঃ না৷ গরম পানি খেলে ভাইরাস মারা যাবে না। তবে সাধারণ গলাব্যাথায় মধু চা ভাল কাজ করে। কারণ, মধু গলাব্যাথা কমাতে পারে এবং কিছুটা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪. তাহলে করোনা ভাইরাস কিভাবে মারা যাবে?
উত্তরঃ ডিটারজেন্ট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ৭০% অ্যালকোহল, ০.১% ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারে করোনা ভাইরাস মারা যায়। তবে এসব খাওয়ার জন্য নয়, পরিষ্কারের জন্য।
৫. তবে কি আমরা অ্যলকোহল খাবো করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য?
উত্তরঃ না। ৭০% অ্যালকোহল পান করলে যে কোন সময় মৃত্যু হতে পারে । শুধুমাত্র হাত পরিষ্কারের কাজে ঔষধ কোম্পানী কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে প্রচলিত অ্যালকোহল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহার করা যেতে পারে।
৬. কিভাবে বুঝব আমি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত?
উত্তরঃ জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়।
৭. করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হলে কি আমি হাইড্রোক্সি- ক্লোরোকুইন বা অ্যাভিগান ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করব?
উত্তরঃ রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত সামাজিক মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যে কোন চিকিৎসা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই এসব থেকে ১০০% বিরত থাকুন।
৮. আমার কি মেডিক্যাল মাস্ক পরা উচিত?
উত্তরঃ করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগের বিস্তার সীমিত পর্যায়ে রাখতে মেডিক্যাল মাস্ক সাহায্য করে। তবে এটার ব্যবহারই এককভাবে সংক্রমণ হ্রাস করতে যথেষ্ঠ নয়। নিয়মিত হাত ধোয়া এবং সম্ভাব্য সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে মেলামেশা না করা এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায়।
৯. করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হলে আমার করণীয় কি?
উত্তরঃ আপনার যদি মনে হয় যে আপনি সংক্রামিত, তাহলে যে কোনো ব্যক্তি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলুন,হাঁচি বা কাশির পরে হাত ধুয়ে নিন,কাশি বা হাঁচির আগে মুখ ঢেকে নিন,নিজেকে সারাক্ষণ হাইড্রেট রাখুন,ধোঁয়াটে এলাকা বা ধূমপান করা এড়িয়ে চলুন,যথাযথ বিশ্রাম নিন,ভিড় থেকে দূরে থাকুন।
লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং IEDCR এর নির্ধারিত হটলাইন নাম্বারে ফোন দিন।
লেখক: ইনচার্জ, আইসিইউ অ্যান্ড এইচডিইউ, পিআরও-এক্টিভ মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেড
আরকে//