ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের চেহেরাটা কেমন হবে?

সৈয়দ নুরুল ইসলাম

প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার

করোনা পরবর্তী বাংলাদেশ নামক দেশটির চেহেরাটা কেমন হবে? প্রশ্নটা নিয়ে আজ সারাদিন ভেবেছি। মধ্য রাত অব্দি ভাবছি। যেখানে ইউরোপ আমেরিকা করোনার কাছে হেরে গেছে সেখানে আমাদের মত উঠতি অর্থনীতির একটি দেশ কিভাবে ঠিকে থাকবে!! ফোন করে জানতে চাইলাম সদ্য বিশ্বব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরা এক তরুণ অর্থনীতিবিদ বন্ধুর কাছে। ছোট একবাক্যে তার উত্তর, জীবন থাকলেইতো জীবিকা আর জীবিকার জন্যই অর্থনীতি। আমি বুঝে নিলাম কি সে বলতে চেয়েছে। আমি অর্থনীতির ছাত্র না। বানিজ্য নিয়ে পড়ালেখা করেছি আর বানিজ্যের পেছনেই কাটিয়েছি প্রায় ৩৫ বছর। আমি জীবন আর জীবিকা দুটিকেই একই সুতায় বাঁধা দেখি। করোনার থাবায় আমাদের জীবন আজ বিপন্ন। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমরা সবাই করোনার কাছে জীবন বিসর্জন দিয়ে হারিয়ে যাব। করোনার সাথে যুদ্ধ করে জীবন আমরা ফিরে পাব, এবারের নববর্ষে আমরা নাহয় গাইবনা গান। আগামী নববর্ষে অবশ্যই অবশ্যই বঙালি নতুন করে সাজবে, নতুন সুরে গাইবে।

জীবন নিয়ে আমি আমার অর্থনীতিবিদ বন্ধুর মত যতটানা উদ্বিগ্ন না তারছেয়ে আরো অনেক বেশি উদ্বিগ্ন জীবিকা নিয়ে।!! করোনা পরবর্তী জীবিকার মূল চালিকা শক্তি অর্থনীতির কি হবে?

গত ১০-১২ বছরে আমাদের অর্থনীতিতে বসন্ত আসার আগেই ফুল ফুটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ ঘাটতি কাটিয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন, বৈদেশিক মূদ্রার রিসার্ভ ৩৫ নিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপর। রফতানি আয় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁই ছুঁই। বিদেশে কাজ করা প্রায় ১ কোটি সোনার ছেলেদের পাঠানো রেমিট্যান্স ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। মাথাপিছু আয় ২০০০ মার্কিন ডলারের উপর। নিজের অর্থে গড়া পদ্মা সেতুর স্পানগুলোর উঁকি মারা,অর্থনীতির মূল যায়গা অভ্যন্তরীণ চাহিদা,
সেখানেও উচ্চ লম্ফ। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার, স্বাস্থ্য সেবা, গড় আয়ু সব মিলিয়ে আমরা একটা স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে...

হটাৎ সব থেমে ঘেলো। চাইনার উহানে জন্ম নেওয়া করোনা আমাদের থামিয়ে দিল। বস্তুত চাইনার নতুন বছরের ছুটি শেষে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে আমাদের অর্থনীতিতে বৈরী হাওয়া শুরু। তারপর মার্চ মাসে এসে করোনা ঝড়ে আমাদের সব লণ্ডভণ্ড। রফতানি আদেশ বাতিল। কারখানাগুলো বন্ধ। দোকানপাট বন্ধ। গণপরিবহন বন্ধ। রাস্তাগুলো সব ফাঁকা। কি হবে আগামী দিনগুলোয়?
ঢাকার আগেই লন্ডন নিউইয়র্কের সড়কগুলো ফাকা। লন্ডনের অক্সফোর্ড রোডের দোকানগুল বন্ধ। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের আকাশ ছোঁয়া দলানের বাতিগুলো নিবানো। ইতালি, স্পেন, ফ্রানসের সপিংমলগুলো কবে খুলবে কেউ জানেনা,কে কিনবে আমাদের কাপড়? সৌদি কুয়েত দুবাইসহ আরব দেশগুলোতে কার্ফু। কে পাঠাবে রিয়াল/ দিনার/দিরহাম?

আমার হিসাবে ২০২০ সালে আমাদের রফতানি আয় নেমে আসবে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে, রেমিট্যান্স নেমে যাবে ৮-১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। প্রায় ১৮-২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘাটতি। টাকার অংকে প্রায় ষোল থেকে সতর লক্ষ হাজার কোটি। ফলে কমে যাবে আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমা মানে উৎপাদন কমা। উৎপাদন কমা মানেই কর্ম সংস্থান কমা। কর্ম সংস্থান কমা মানেই মানুষের পকেটের টাকা কমা। পকেটে টাকা নাথাকলে মানুষের কেনা কাটা কমা যেটাকে বলে বাজারের চাহিদা কমা। বাজারের চাহিদা কমা মানেই আবার উৎপাদন কমা। আরো কর্ম সংস্থান কমা। এভানে কমার চক্রে অর্থনীতির চাকার গতি কমা। আলোকিত ঢাকার আলো আস্তে আস্তে নিবে যাওয়া। বড় বড় কর্পোরেট হাউসগুলো দেউলিয়া হয়ে যাওয়া। খেলাপিদের কাছে হেরে গিয়ে ব্যাংকগুলোর সদর দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া। কাজ হারা মানুষগুলোর চেহেরাগুলো মলিন হওয়া। মধ্যবিত্তের ফুটানি ফিকে হয়ে আসা। উচ্চ বিত্তেদের পালিয়ে যাওয়া।

তারপর? তারপর আবার ঘুরে ধাড়ানোর সংগ্রাম! আর একটি যুদ্ধ। আর একটি ৭১। এবারের যুদ্ধ অস্ত্র হাতে না,কাস্তে হাতে। সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রটা আমাদের সেই কৃষি। আবার সেই কৃষক যারা একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সড়া দিয়ে খালি গায়ে খালি হাতে যুদ্ধ করে পাক হানাদারদে হটিয়ে আমাদের একটি লাল সবুজে মোড়ানো স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছে, তারাই আবার থেকে লড়াই করে আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে। তারাই নতুন করে ফুল ফুটাবে। লাল সবুজের পতাকা হাতে ঢাকার রাস্তায় নতুন করে আলো জ্বালাবে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

আমরা কালো কালো কোট পরা, হাতে রোলেক্স ঘড়ি, পকেটে ক্রস পেন, চোখে কালো চশমা, এসিতে সারারাত ঘুমিয়ে সকালে দামি গাড়িতে চড়ে মন্ত্রী পাড়ায় ঘুরে বেড়ানো সাহেবরা আর পশ্চিমাা পোশাকে সারক্ষণ জাতিকে উপদেশ দেওয়া আমাদের ম্যাডামরা আবার ওপেক্ষার দিন গুনবে কবে আবার ব্যাংকের সদর দরজা খুলবে...আমি সব লুটেপুটে খাব।

নব বর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল আগামী দিনের যোদ্ধা কৃষক শ্রমিক মেহনতী জনতার জন্য।
লেখক: চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী (ওয়েল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ)