ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

সঙ্গনিরোধ নিয়ে সরব ফেবু আড্ডা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২৩ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার

বিশ্বজুড়ে মহামারী আকার ধারণ করা করোনার থাবা পড়েছে বাংলাদেশেও। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে (সঙ্গনিরোধ) থাকতে বলা হয়েছে। আর নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঘটছে খুনসুটি, আনন্দ-বেদনা ও ভালোবাসার বহি:প্রকাশসহ নানা মজার মজার ঘটনা। কেউ রান্না করছেন, কেউ ঘর মুছছেন, কেউবা আবার মাথা ন্যাড়াও করছেন, কেউবা সেইসব ছবি তুলে ফেসবুকে দিচ্ছেন। ঘরের কাজ করছেন বলে অনেক স্বামী তাদের এসব কাজের স্বীকৃতিও চাচ্ছেন।

ঘরের মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থেকে আবার কেউ কেউ পড়েছেন মাইনকা চিপায়। এই চিপায় আটকেপড়া পুরুষদের হাহাকারে সয়লাব ফেসবুকের পাতা। কে কতটা নির্যাতিত তা নিয়ে হচ্ছে নানা ট্রল। জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘের নতুন ভার্সন হলো ঘরে বউ, বাইরে পুলিশ। এ নিয়ে অনেক কৌতুক ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নারীবাদীরা হইচই করছে। এসব কৌতুক নিয়ে অবশ্য কারও কোনও আপত্তি নেই। 

তবে এসব কৌতুকের মধ্যে অন্যতম সেরা একটি হলো- দুই বন্ধু গল্প করছে। প্রথম বন্ধু বললো, দোস্ত আমার তো থার্ড ডিগ্রি চলছে। প্রথমে বিছানা গোছানো, পরে ঘর মোছা, এখন চলছে কাপড় ধোয়া। তোর কী অবস্থা? দ্বিতীয় বন্ধু বললো, আমাকেও চেষ্টা করেছে। অনেক মারছেও। কিন্তু কষ্ট করে সহ্য করছি। একবার যদি জেনে যায়, আমি এসব কাজ পারি; তাহলে সারাজীবন করতে হবে।

এদিকে, বিশিষ্ট একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে তার ফেসবুকে লেখেন, ঘরে মাইনকা চিপায় আটকাপড়া ফাঁকিবাজ পুরুষদের জন্য একটা কৌশল। বগলের নিচে রসুন রেখে একটু জ্বর আনাও। ছেলেবেলায় স্কুল ফাঁকি দেয়ার জন্য নিশ্চয়ই এই কৌশল কাজে লাগিয়েছো অনেক। আর নাকে কাঠি ঢুকিয়ে গোটা কয়েক হাঁচির ব্যবস্থা করো। ব্যস বউ তোমাকে কাজের কথা বলা তো দূরের কথা, সেবা করতে ব্যস্ত হয়ে যাবে, আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেবে। তবে সাবধান বাড়াবাড়ি করো না। যদি একবার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়, তাহলেই কিন্তু শেষ। আইসোলেশন থেকে কনডেম সেল। স্মার্টফোন নাই, ইন্টারনেট নাই, ফেসবুক নাই, ক্লাব ৮৫ নাই। সাবধান বন্ধুরা।

আরেক জন লিখছেন, এক ভিক্ষুককে এক কোটিপতি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাকে যদি ৫০০ কোটি টাকা দেই তাহলে কি করবেন? ভিক্ষুক: একটা ব......ড় শপিং মল বানাবো। কোটিপতি: তারপর? ভিক্ষুক: সেই শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে আমি একাই  ভিক্ষা করবো, অন্য কোন ফকিরকে দাঁড়াতে দিবো না।

এদিকে, লকডাউন নিয়ে একজন লিখেছেন, লকডাউন শেষ হবার পর, বর-বউ একসাথে বসে ডিনার করছিলো। খাওয়া শেষে বর গিয়ে থালা ধুয়ে রেখে দিলো। তখনই বউ রেগেমেগে কটমট করে বলে উঠলো- 'ব্যস আমার মান-সম্মান ধুলোয় না মেশানো অব্দি শান্তি পাচ্ছিলে না বুঝি...!!! বেতালা লোক একটা... এটুকু তো খেয়াল রাখবে... আমরা ঘরে নয়, হোটেলে খেতে এসেছি...!!! 

অন্যদিকে, আরেকজন লিখেছেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে মাথা ন্যাড়া করার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা। তাই সুবর্ণ সুযোগটা বউকে দিয়ে কাজে লাগিয়ে ফেললাম।

আরেকজন লিখেছেন, কোয়ারেন্টাইনে স্বামী-স্ত্রী মিলে ঘরদোর পরিষ্কার করতে গিয়ে পুরাতন তোষকের নীচ থেকে বউ কয়েকটা ঐতিহাসিক প্রেমপত্র উদ্ধার করেছে! স্বামী বেচারার মহাবিপদ! কঠিন জেরা চলছে! কে? কী? কাকে? কোথায়? কবে? কখন? ইত্যাদি.. ইত্যাদি..!

আমার বউকে পাঠালাম। বললাম, এই মহামারীর টাইমে এসব বাদ দিতে বলো। একটু যাও। ওই ভাবি তো তোমাকে খুব কদর করে! তুমি বললে শুনবে! বউ গিয়ে রিকোয়েস্ট করামাত্রই পাশের বাসার ভাবি চিল্লায়ে উঠছে, "আমারে বুঝাইতে আইসেন না! পুরুষগুলাইনের চরিত্র আমার মুখস্থ!! আপ্নে আপ্নার বাসার তোষক উল্টাইয়া দেখেন গিয়া! ভাইয়েও কিন্তু পুরুষ! তুলসী পাতা না!!

আমি পড়ছি মাইনকা চিঁপায়! বউ তোষক উল্টাইতেছে। দরজা বন্ধ! আমি দরজার বাইরে! বাইরে লকডাউন!
প্রেমপত্র সরাইয়া রাখছিলাম কিনা আমার নিজেরই খেয়াল নাই!

আরেকজনে লিখেছেন, করোনা সতর্কতায় মাথা ন্যাড়া করার জন্য সেলুনে গেলাম না। সহধর্মীনীকে বল্লাম তুমি কী পারবে? উত্তর না, আমি কোন দিন করিনি। অন্য কারো দিয়ে করে নাও। প্রতিবেশি এক ভাইকে ঠিক করে দিল। কিন্তু সে ভাইয়ের কাছে ন্যাড়া হতে লজ্জা করছিল আমার। শেষমেষ নিরুপায় হয়ে সহধর্মীনকে আবারও বল্লাম, তুমি বিসমিল্লাহ সহকারে শুরু করো। আমার বিশ্বাস তুমি ভালো পারবে।

যেই কথা সেই কাজ। বেলুকনিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে শুরু হলো মিশন। শেষ পর্যন্ত কোন ধরণের রক্তপাত ছাড়াই সে সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সে সফল হলেও আমি খেয়েছি ধরা।

চুল ছাটার পর যখন তাকে ধন্যবাদ দিলাম। তখন বলে উঠলো শুধু ধন্যবাদে কাজ হবে না মশাই; ৫০০ ফেলো। আমি বল্লাম কিসের? উত্তরে জানালো সেলুনে গেলে ১০০ টাকা নিতো। বাসাই বসে পরম যত্নসহকারে নিখুতভাবে করার জন্য ৫০০ টাকা গুণতে হবে।

কোন রকম ২০০ টাকা দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কচকচে দু খানা ১০০ টাকার নোট দিয়েও পার পায়নি। শেষ পর্যন্ত ৫০০ টাকা দেওয়ার পর দুপুরের ভাত জুটেছে কপালে। তবে শেষমেষ টাকাটা ভবিষ্যৎ সঞ্চয় মাটির ব্যাংকে জমা করতে দেখে দুঃখটা কিছুটা লাঘাব হয়েছে। তাই বলি আমার মতো ৫০০ টাকা না দিতে চাইলে আগে থেকে দর কষাকষি করে নিন।

আরেকজন লিখেছেন, বউঃ যাও মাস্ক পড়ে আসো। — কিন্তু কেন? আমি তো বাহিরে যাচ্ছি না। বউঃ জানি। এক চেহারা দেখতে দেখতে বিরক্ত লেগে গেছে...!!!

এরকমভাবে অনেকেই অনেক মজার মজার সমস্যায় পড়েছেন চলমান করোনা পরিস্থিতিতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে। আপনার এমন ঘটনা থাকলে আমাদের লিখে জানান। 

এনএস/