ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকেও এভাবে বলা যায়!

শওগাত আলী সাগর

প্রকাশিত : ০২:৪৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০ বুধবার

:কিন্তু কেউ কি তোমাকে বলেছে, তুমি যেটা করেছো সেটি ঠিকই করেছো?- আবার প্রশ্ন ছুঁড়েন সাংবাদিক।

‘সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই প্রশ্ন করছে, সবখানে সবাই জানতে চাচ্ছে- এই ব্যতিক্রমটা তোমার জন্য কেন সঠিক? তুমি তোমার ফ্যামিলির সাথে সময় কাটাতে কটেজে যাবে- এটা কেন সঠিক?
একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে প্রশ্ন বানে জর্জরিত করা যায়! হ্যাঁ, মঙ্গলবার সকালে এভাবেই একজন সাংবাদিক প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন কাানডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে। না, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রেগে যাননি, কেউ এসে সাংবাদিকের মাইকও বন্ধ করে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে কেনো এইভাবে প্রশ্ন করা হলো সে জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই সাংবাদিকের চৌদ্দগোষ্ঠীর পরিচয় নিয়ে কেউ টানাটানি করেনি। সরকারের কোনো এজেন্সীও তার খোঁজখবর করতে ছুটে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে, বিনীতভাবে নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, আমার পরিবারের সদস্যরা তিন সপ্তাহ ধরে সেখানে বসবাস করছে। আমার স্ত্রী, ছেলে মেয়েরা সেখানে বসবাস করে….’

ইস্টার কানাডীয়ানদের বড় একটি উৎসব। আমাদের ঈদের মতোই ইষ্টারে তারা উপাসনালয়ে জমায়েত হয়ে প্রার্থনা করে, বাড়ীতে বাড়ীতে ভোজের আয়োজন করে। বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয় সেই পার্টিতে। করোনা পরিস্থিতি এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়ম চলতে এবার এসবের কিছুই হয়নি।

সপ্তাহের শেষ দিনের ব্রিফিং এ প্রধানমন্ত্রী নিজেও সবাইকে আহ্বান জানিয়েছিলেন এবার ইস্টারটা যেন অন্যভাবে উদযাপন করা হয়, প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। কেউ যেন স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে ভিড় জমিয়ে পার্টি না করেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজেই অটোয়ার রিডো হল কটেজ থেকে ছুটে গেলেন কুইবেকের হ্যারিংটন লেক কটেজে!

ট্রুডোর স্ত্রী যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে অটোয়ার রিডো হল কটেজে ১৪ দিনের আইসোলেশনে ছিলেন। এটিই এখন রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। আইসোলেশন শেষ হলে তিনি সন্তানদের নিয়ে চলে যান- কুইবেকের হ্যারিংটন লেক কটেজে। অটোয়ার বাসা থেকে যার দূরত্ব মাত্র আধা ঘণ্টার ড্রাইভ। হ্যারিংটন লেক কটেজ হচ্ছে কানাডার প্রধানমন্ত্রীদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া তাদের গ্রামের বাড়ি। হ্যারিংটন লেক কটেজে স্ত্রী আর সন্তানদের কাছে ছুটে গেছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো- পত্রিকাগুলো সেটিকে শিরোনাম করে ফেলে। নাগরিকদের সামাজিক দূরুত্ব মানার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে সেটি কেন মানলেন না- পত্রিকাগুলো সেই প্রশ্নও তুলে।

মঙ্গলবারের সকালে নিয়মিত ব্রিফিং এ একজন রিপোর্টার সরাসরি এ নিয়ে প্রশ্ন করেন জাস্টিন ট্রুডোকে। ‘গত ব্রিফিং এ আমি তো বলেছিলাম - উইকএন্ডে আমি ফ্যামিলির কাছে যাবো’।– উত্তরটা দিয়েই খানিকটা চুপ হয়ে যান তিনি। ভাবটা এমন, আমি তো আগেই বলেছিলাম। কিন্তু পরমুহূর্তেই রিপোর্টারের কণ্ঠস্বরটি পড়ে ফেলেন তিনি। এবার আরো একটি বিস্তৃত করে উত্তর দেন, তিন সপ্তাহ ধরে আমার স্ত্রী আর ছেলেমেয়েরা হ্যারিংটন লেকের কটেজে থাকছে। আর আমি এখানে (অটোয়া) থেকে কাজ করছি। ইস্টারের উইকএন্ডটা আমি তাদের সাথে কাটাতে গিয়েছিলাম। ট্রুডো রিপোর্টারকে আশ্বস্ত করেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং এর সব নির্দেশনাই আমরা পুরোপুরি অনুসরণ করেছি।

কিন্তু রিপোর্টার তাতে সন্তুষ্ট হলেন না, জানতে চাইলেন, কিন্তু কেউ কি তোমাকে বলেছে, তুমি যেটা করেছ সেটি ঠিকই করেছ?

কারো বুঝতে বাকি রইলো না রিপোর্টার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভুল স্বীকার করাতে চাইছেন। কিন্তু এ নিয়ে রিপোর্টারকে বিন্দুমাত্র বৈরি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি। শুধু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনানুষ্ঠানিক ব্যাখ্যায় কোনো কোনো রিপোর্টারকে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর সব ধরনের যাতায়াতকেই ‘এসেনসিয়াল সার্ভিস’ হিসেবে দেখার সুযোগ আছে।

করোনার কঠিন সময়ে দিনরাত খেটে খেটে হয়রান হ্ওয়া জাস্টিন ট্রুডোকেও নিজের স্ত্রী সন্তানদের দেখতে গিয়ে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয়, জবাবদিহি করতে হয়। একটা দেশের সৌন্দর্য তো এগুলোই!

লেখক: কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক

এমবি//