ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

কাজ হারানো মানুষের জন্য বরাদ্দ ৭৬০ কোটি টাকা হবে না

সাব্বির আহমেদ

প্রকাশিত : ০৩:৪২ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২০ শনিবার

সাব্বির আহমেদ

সাব্বির আহমেদ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৩ এপ্রিল তাঁর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছেন, দিনমজুর, রিক্সা বা ভ্যান চালক, মোটর শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, পত্রিকার হকার, হোটেল শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষ যাঁরা দীর্ঘ ছুটি বা আংশিক লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন তাঁদের নামের তালিকা ব্যাংক হিসাবসহ দ্রুত তৈরির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা প্রণয়ন সম্পন্ন হলে এককালীন নগদ অর্থ সরাসরি তাঁদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। এ খাতে ৭৬০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে।

এদের কাছে নগদ অর্থ পৌঁছানোর কথা বলে আসছি মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে। এত দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী তাদের দিকটা লক্ষ্য করেছেন, সমাধানের পথ বলেছেন। ধন্যবাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!

দেশে এরকম কাজে নিযুক্ত মানুষের সংখ্যা ৫.২ কোটি বা ১.৫ কোটি পরিবারের বেশি। এই কাজ হারানো মানুষেরা একেবারে নিরুপায়। একদিন কাজ করতে না পারলে তাদের বাজার চলে না। ইতোমধ্যে প্রায় একমাস দুঃসহ সময় চলে গেছে। এদের আর চলে না। ঢাকার বাড্ডা, খুলনা, রংপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে এরই মধ্যে ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ হয়েছে। দুই একটা চুরি ডাকাতির কথাও শোনা গেছে। অনেক দেরি হয়ে গেছে। সরকার ঘোষিত তালিকা কবে তৈরি হবে তা কেউ জানে না। 

দ্রুত তালিকা করতে হবে। একজনকে লিড নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী একা সব সামলাতে পারবেন না। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সবাই যার কথা শুনবে, মানবে এমন একজনকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই তালিকা তৈরির। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় হতে পারেন এই কাজের নেতৃত্বদাতা। তিনি দ্বায়িত্ব নিলে আজকে শুরু করলেও ডিজিটাল এবং প্রথাগত–দুই পদ্ধতির সমন্বয়ে একটা তালিকা তৈরি করতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা নয়। দেরি হয়ে যাচ্ছে। অনেক দেরি।

নিম্ন আয়ের একেকটি পরিবার চালাতে এক মাসে একেবারে কম করে হলেও ৫,০০০ টাকা প্রয়োজন। অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেছেন পরিবার প্রতি মাসে ১২,০০০ টাকা দিতে। সিপিডি বলেছে পরিবার প্রতি মাসে ৮,০০০ করে টাকা দিতে। মাসে পরিবার প্রতি ৫,০০০ টাকা দিতে হলে দরকার ৭,৫০০ কোটি টাকা। সরকার বরাদ্দ করেছে মাত্র ৭৬০ কোটি টাকা। হবে না। বরাদ্দ বাড়াতে হবে অনেক অনেক বেশি। কাজ হারানো মানুষদের কাজ ফিরে পাওয়া পর্যন্ত নগদ অর্থ পৌঁছে দিতে হবে তাদের ব্যাংক বা মোবাইল একাউন্টে।

নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে টাকা না থাকলে অর্থনীতি থেমে যাবে। এখনই শোনা যাচ্ছে, ক্রেতার অভাবে সবজি ও ফলমূল পচে যাচ্ছে, পানির দামে বিক্রয় হচ্ছে; মরতে বসেছে কৃষক। এদের হাতে টাকা থাকলে কৃষি পণ্যের দাম থাকবে; ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে; শিল্প পণ্যের বাজার থাকবে, অর্থনীতি সচল থাকবে। বাঁচবে কৃষক; বাঁচবে শ্রমিক। সিপিডি বলেছে, পরিবার প্রতি মাসে ৮,০০০ করে টাকা দিলে তা অর্থনীতিতে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকার কাজ করবে।

এই করোনাকালে সবার লক্ষ্য একটাই - মানুষ বাঁচাও!

লেখকঃ চার্টার্ড একাউন্টেন্ট (এফসিএ) এবং লিড কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, ঢাকা কনসাল্টিং লিমিটেড। 

এমবি//