রোগ প্রতিরোধের মহাতারকা রসুন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:১৯ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২০ রবিবার
রসুনের ছোট ছোট কোয়ার ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে রোগ প্রতিরোধের এত অসাধারণ ক্ষমতা। তিন হাজার বছর আগে গ্রীক চিকিৎসক ‘হিপোক্রেটাস’ (যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনকও বলা হয়) তিনি তার রোগীদের সুস্থ থাকার জন্যে প্রতিদিন একটা করে রসুন খেতে বলতেন। তবে আস্ত রসুন নয়, রসুনের একটা ছোট কোয়াও এজন্যে যথেষ্ট হতে পারে। কারণ রসুনের একটা কোয়ার ভেতরে থাকে- ৫ মিগ্রা ক্যালসিয়াম, ১২ মিগ্রা পটাসিয়াম, ১০০ এরও বেশি সালফিউরিক উপাদান (যা ব্যাকটেরিয়া ও ইনফেকশন তাড়াতে আদর্শ)।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত যেসব সৈনিকদের গ্র্যাংগ্রিন হতো তাদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো এই রসুন। ফ্লু বা ঠান্ডার অসুখবিসুখে রসুন দারুণ কার্যকর। একটা গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রসুন খেলে ফ্লু-র প্রকোপকে ৬৩% কমিয়ে ফেলা যায়। আর আক্রান্ত হলেও ৭০% ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো সেরে যায় অল্পতেই।
এমনকি ফ্লু বা জ্বর-ঠান্ডার জন্যে ডাক্তারের কাছ থেকে আমরা যে ওষুধ খাই, রসুন তার চেয়েও ভালো। কারণ এসব এন্টিবায়োটিক ওষুধ দেহের ভালো ও খারাপ- দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়াকেই ধ্বংস করে ফেলে। ফলে দেহে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা হ্রাস পায়। যে কারণে দেখা যায় এন্টিবায়োটিক ওষুধ খেলে হজমের সমস্যা হয়, গ্যাস হয়, অনেকের লুজ মোশন বা পাতলা পায়খানাও হয়। কিন্তু রসুন দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো মেরে ফেলে ঠিকই, কিন্তু ভালো ব্যাকটেরিয়াকে রাখে সুরক্ষিত।
আর এ কারণে রসুনকে বলা হয়- (Immunity Boosting Superstar) বা রোগ প্রতিরোধের মহাতারকা।
তবে রসুনের এই উপকারগুলো পেতে হলে রসুন খেতে হবে কাঁচা। কারণ রান্না করলে বা শুকালে রসুনের সালফার এনজাইমগুলো কমে যায়। আর এই সালফারের ভেতরেই থাকে রসুনের ‘এন্টিবায়োটিক’ প্রভাব। কিন্তু রসুন নিয়ে একটা সমস্যা হলো এর গন্ধ। গন্ধটা হয়তো পুরোপুরি দূর করা যাবে না। তবে কিছু উপায় আছে যাতে আপনি এর তীব্রতাকে কমাতে পারেন।
এ জন্য তাজা, পুষ্ট রসুন নিতে হবে (মিইয়ে যাওয়াগুলো নয়)। রসুনকোষের খোসা ছাড়িয়ে নিন, সবুজ অঙ্কুর থাকলে সেটাও খসিয়ে ফেলুন। রসুনের কোষটি ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে নিন। খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করুন।
মনে রাখতে হবে রসুনের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। শরীর ভাল রাখা ছাড়াও বিশেষ কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে রসুন প্রায় বিকল্পহীন। অনেকের ধারণা, রসুন খেলে শরীর গরম হয়, যা আদতে খারাপ। তাই রসুন খাওয়া উচিত কি না, এ বিষয়ে অনেকে আছেন দ্বিধাদ্বন্ধে। তবে ডায়াটিশিয়ানরা বলছেন, রসুনের মধ্যে নানা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায়, প্রতিদিন অল্প রসুন খাওয়া যেতেই পারে। কোলেস্টেরল ছাড়াও এটি নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তে সুগারের মাত্রা। সুতারাং রসুন খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যায় কিংবা শরীর গরম হলে তা ক্ষতিকর এর কোনও সত্যতা নেই।
রসুন কতটুকু খাওয়া যাবে এবং এর হরেক গুণ সম্পর্কে জেনেনিন-
• রসুন রক্ত পরিষ্কার রাখার কাজ করে। তাই মুখে বা ত্বকে নানা র্যাশ, চুলকানি প্রায়শই হয়, তাহলে রোজ রসুন খেতেই পারেন। প্রতিদিন দু’কোয়া রসুনই এর জন্য যথেষ্ট। সকালে এই কাঁচা রসুনের সঙ্গে খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে পানি।
• শরীরের টক্সিন বার করতেও সাহায্য করে রসুন। এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে অর্ধেক পাতিলেবুর রস আর দু’কোয়া রসুন কুঁচি গুলে খেলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে ক্ষতিকর টক্সিন।
• যাদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা রয়েছে, তাদের জন্য রসুন খুবই উপকারী। এর জন্য গার্লিক টি বানিয়ে খেতে পারেন। গরম পানিতে থেঁতো করা রসুন ফুটিয়ে নিয়ে, তারপরে ছেঁকে পান করতে হবে। আবার গরম ভাতের সঙ্গে ঘিয়ে ভাজা রসুন খেতে পারেন। ঠাণ্ডা লাগা তো কমবেই, সাইনাসাইটিসের কষ্ট থেকেও রেহাই মিলবে। রোজ রসুন খেলে নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা যেমন নিয়ন্ত্রণে আসে, তেমনই পুরো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
• রসুন কাঁচা কিংবা হালকা সিদ্ধ করে খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল পরিমাণ কমবে। ফলে হার্ট থাকবে ভাল।
• রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি প্যারাসাইটিক গুণাগুণ। শরীরে খারাপ ব্যাকটিরিয়া, ফাঙ্গাস আর প্যারাসাইটের মোকাবিলা করতে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে রসুন খাওয়ার ইতিহাস বেশ পুরনো। এমনকি কৃমি থেকে রেহাই পেতেও খাওয়া যেতে পারে রসুন।
• ব্রণ বা বড় পিম্পলের মুখে রসুন কেটে খানিকক্ষণ ধরে রাখলে জ্বালা কমবে। আবার ত্বকের কোলাজেন রক্ষা করতে সাহায্য করে বলে রসুনকে বলা যেতে পারে অ্যান্টিএজিংয়ের অন্যতম উপাদান।
এসএ/