ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সংকটে ভরসা অনলাইন ব্যাংকিং

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৭ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২০ রবিবার

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে মানুষকে ঘরে থাকতে হচ্ছে। দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনীয়তার কারণে লেনদেন করতে হবে। প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে মানুষকে লেনদেন করতে হচ্ছে। এজন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহারও বাড়ছে। এদিকে, চলমান সংকটে ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকদের ভিড় না করে অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশিরভাগ মানুষই চাইছে ইন্টারনেট সুবিধা কাজে লাগিয়ে অথবা মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে মানি ট্রান্সফারসহ তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধ কিংবা ব্যাংকিং খাতের সব তথ্য নিজে জেনে রাখতে। অর্থাৎ সবকিছু থেমে গেলেও থেমে থাকবে না অনলাইন ব্যাংকিং, অতন্দ্র প্রহরী হয়েই থাকবে মানুষের পাশে। 

বর্তমানে দেশজুড়ে ১১ হাজারের বেশি এটিএম বুথের অস্তিত্ব রয়েছে। যার মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকেরই এটিএম বুথ রয়েছে পাঁচ হাজারের মতো। ‘কিউ ক্যাশ’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০। এর বাইরে আরো দুটি এটিএম নেটওয়ার্ক রয়েছে, যেগুলো হচ্ছে- ব্র্যাক ব্যাংক নিয়ন্ত্রণাধীন ওমনিবাস এবং এবি ব্যাংকের ক্যাশ লিংক। তাছাড়া ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকও বৃহৎ এটিএম নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে। দেশজুড়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি এগুলোর কর্মকর্তারা মনে করছেন, পয়েন্ট অব সেলস তথা পিওএসের হারও বেড়ে গেছে বহুগুণে। প্রতিদিন দেশজুড়ে ৬০ হাজারের মতো পিওএস কাজ করছে। দি সিটি ব্যাংকের রয়েছে প্রায় ১০ হাজার পিওএস। ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচে তথা এনপিএসে একটা পর্যায়ে বেশ টিথিং প্রবলেম ছিল। এরপর সব জটিলতা কাটিয়ে বর্তমানে অনলাইন ব্যাংকিং একটা সন্তোষজনক অবস্থানে উপনীত হতে পেরেছে। 

জানা যায়, দেশে এখন দুই কোটির মতো ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী রয়েছেন। এদের বেশিরভাগই ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেন তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে। এছাড়া দেশজুড়ে মোবাইল নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিসর বাড়িয়ে দিয়েছে নানা দিক থেকে। দেশে তিন কোটির ওপর লোক মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করছেন। তার মধ্যে ৬০ শতাংশের অধিক ‘বিকাশ’-এর গ্রাহক। বাকিরা সাধারণত ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেটের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। তাছাড়া ইদানীং ‘নগদ’ এসেছে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে।

মানুষ দেশের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে তাদের অর্থ প্রেরণ করছেন এভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে। এক্ষেত্রে তারা একদিকে যেমন দ্রুত লেনদেন করতে পারছেন, অন্যদিক থেকে ভোক্তারাও লাভবান হচ্ছেন এর মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রেরণ কিংবা যে কোনও বিল প্রদানের সুবিধার আওতায় মানুষের কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে মোবাইল ও অনলাইন ব্যাংকিং। 

দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখন চাইছে ইন্টারনেট সুবিধা কাজে লাগিয়ে মানি ট্রান্সফার করতে, তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধ করতে কিংবা ব্যাংকিং খাতের সব তথ্য নিজে জেনে রাখতে। অনেক ব্যাংক এরই মধ্যে এসএমএস পদ্ধতি চালু করেছে, যেখানে প্রতিটি লেনদেন ঘটার সঙ্গে সঙ্গে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার। যা তার আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ৮ কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে মোট ২২ কোটি ৬১ লাখ ৯ হাজার ৪০৫টি লেনদেনের মাধ্যমে ৪১ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

ফেব্রুয়ারির হিসাবে দেখা গেছে, দেশে সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাবধারী রয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার। আর মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা ৯ লাখ ৮৬ হাজার জন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে ফেব্রয়ারিতে জমা পড়েছে ১৪ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। উত্তোলন করেছে ১৩ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। রেমিট্যান্স এসেছে ২৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ৯ হাজার ৭৯৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪৪১ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৫৮১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সরকারি পরিশোধ ২৭৫ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা।

জানা যায়, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচবারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন বা জমা করতে পারবেন। আর মাসে ২৫ বারে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুই বারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারতেন একজন গ্রাহক। আর মাসে ২০ বারে এক লাখ টাকা ক্যাশ ইন করতে পারতেন গ্রাহক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) সর্বশেষ তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি এনসিসি ব্যাংক তাদের এমএফএস সেবা বন্ধ করেছে। ফলে বর্তমানে দেশে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে।

মূলত মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের মাধ্যম।

এরই ধারাবাহিকতায় সহজে বেতন-ভাতা পেতে এ পর্যন্ত মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১৯ লাখ ২০ হাজার নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন পোশাক শ্রমিকরা। শনিবার (১৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে, চলমান করোনা সংকট মোকাবেলায় ঘোষিত সরকারি ছুটির মধ্যেও সীমিত আকারে হলেও ব্যাংকিংসেবা চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি জেলা শহরে কমপক্ষে একটি করে শাখা ও পোশাকশিল্প এলাকার সব শাখা খোলা রাখতে হবে। লকডাউন এলাকারও একটি শাখা খোলা রাখতে হবে। পাশাপাশি এসব শাখায় এখন ঋণ মঞ্জুরি ও ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চালু থাকবে। আর এই পরিষেবা বা লেনদেন চালু রাখতে হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। যা আজ রোববার থেকে কার্যকর হবে।

নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অনলাইন–সুবিধা আছে, এমন ব্যাংকের শাখা দূরত্ব বিবেচনা করে এবং প্রতিটি জেলা সদর অথবা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত শাখার একটি খোলা রাখতে হবে। মহানগর ও বিভাগীয় শহরে সব এবং গুরুত্বপূর্ণ জরুরি বৈদেশিক লেনদেনের জন্য নির্ধারিত শাখা রাখতে হবে। 

এনএস/