ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

নৈরাজ্য থেকে বাঁচাবে সূরা আল কাহাফ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫৪ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:০৯ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার

দাজ্জালের ফিতনা (‘ফিতনা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়, নৈরাজ্য, অমানবিকতা প্রভৃতি।) এই উম্মতের উপর সবচেয়ে বড় ফিতনা। এই দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য সূরা আল কাহাফ বার বার পড়ার উপদেশ এসেছে। যেহেতু সবচেয়ে বড় ফিতনার রক্ষাকবচ হিসাবে এই সূরাকে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেহেতু বর্তমানে আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া অন্য যে কোন ফিতনা ঐ দাজ্জালের ফিতনা থেকে কম।

যেহেতু দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য সূরা আল কাহাফকে রক্ষাকবচ হিসাবে নির্ধারন করা হয়েছে, সেহেতু আমাদের আশেপাশের সব ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য এই সূরা অনেক কার্যকরী হবে এটাই বাস্তব সত্য। সকল মুসলমানের জন্য ৭ দিন পর পর এই সূরা পড়া, বোঝা জরুরী। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম তার আশেপাশের ফিতনার মোকাবেলায় শক্তি পাবে। আল্লাহও এটাই চান। 

আজ আমরা সূরা আল-কাহফ : মূল আরবি, বাংলায় উচ্চারণ ও অর্থ (প্রথম ১০ আয়াত) জেনে নিব-

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

আরবি উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলা অনুবাদ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَهُ عِوَجَا

আরবি উচ্চারণ ১৮.১। আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী য় আন্যালা ‘আলা ‘আবদিহিল্ কিতা-বা অ লাম্ ইয়াজ্ব‘আল্ লাহূ ‘ইওয়াজ্বা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.১। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে রাখেননি কোন বক্রতা।

قَيِّمًا لِيُنْذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِنْ لَدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا

আরবি উচ্চারণ ১৮.২। ক্বাইয়্যিমাল্ লিইয়ুন্যির বাসান্ শাদীদাম্ মিল্লাদুন্হু অইয়ুবাশ্ শিরাল্ মুমিনীনাল্লাযীনা ইয়া’মালূনাছ্ ছোয়া-লিহা-তি আন্না লাহুম্ আজ্বরান্ হাসানা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.২। সরলরূপে, যাতে সে তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে এবং সুসংবাদ দেয়, সেসব মুমিনকে, যারা সৎকর্ম করে, নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।

مَاكِثِينَ فِيهِ أَبَدًا

আরবি উচ্চারণ ১৮.৩। মা-কিছীনা ফীহি আবাদা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.৩। তারা তাতে অনন্তকাল অবস্থান করবে।

وَيُنْذِرَ الَّذِينَ قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا

আরবি উচ্চারণ ১৮.৪। অইয়ুন্যিরল্লাযীনা ক্ব-লুত্তাখযাল্লা-হু অলাদা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.৪। আর যেন সতর্ক করে তাদেরকে, যারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’। 

مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ إِنْ يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا 

আরবি উচ্চারণ ১৮.৫। মা-লাহুম্ বিহী মিন্ ‘ইল্মিঁও অলা- লিআ-বা-য়িহিম্; কাবুরত্ কালিমাতান্ তাখ্রুজু মিন্ আফ্ওয়া-হিহিম্; ইঁইয়াকু লূনা ইল্লা-কাযিবা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.৫। এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও না। বড় মারাত্মক কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হয়। মিথ্যা ছাড়া তারা কিছুই বলে না! 

فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِنْ لَمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا

আরবি উচ্চারণ ১৮.৬। ফালা‘আল্লাকা বা-খি‘উন্নাফ্সাকা ‘আলা য় আ-ছা-রিহিম্ ইল্ লাম্ ইয়ুমিনূ বিহা-যাল্ হাদীছি আসাফা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.৬। হয়তো তুমি তাদের পেছনে পেছনে ঘুরে দুঃখে নিজকে শেষ করে দেবে, যদি তারা এই কথার প্রতি ঈমান না আনে। 

إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا

আরবি উচ্চারণ ১৮.৭। ইন্না- জ্বা‘আল্না-মা- ‘আলাল্ র্আদ্বি যীনাতাল্লাহা-লিনাব্লুঅহুম্ আইয়্যুহুম্ আহ্সানু ‘আমালা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.৭। নিশ্চয় যমীনের উপর যা রয়েছে, তা আমি শোভা করেছি তার জন্য, যাতে তাদেরকে পরীক্ষা করি যে, কর্মে তাদের মধ্যে কে উত্তম। 

 وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا 

আরবি উচ্চারণ ১৮.৮। অইন্না-লাজ্বা-‘ইলূনা মা-‘আলাইহা-ছোয়া‘ঈদান্ জুরুযা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.৮। আর নিশ্চয় তার উপর যা রয়েছে তাকে আমি উদ্ভিদহীন শুষ্ক মাটিতে পরিণত করব। 

أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا 

আরবি উচ্চারণ ১৮.৯। আম্ হাসিব্তা আন্না আছ্হা-বাল্ ক্বহ্ফি র্অরক্বীমি কা-নূ মিন্ আ-ইয়া-তিনা- ‘আজ্বাবা-। 

বাংলা অনুবাদ ১৮.৯। তুমি কি মনে করেছ যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা ছিল আমার আয়াতসমূহের এক বিস্ময়? 

 إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا

 

আরবি উচ্চারণ ১৮.১০। ইয্ আওয়াল্ ফিত্ইয়াতু ইলাল্ কাহ্ফি ফাক্ব-লূ রব্বানা য় আ-তিনা-মিল্লাদুন্কা রাহ্মাতাঁও অহাইয়ি লানা- মিন্ আম্রিনা- রশাদা-।

বাংলা অনুবাদ ১৮.১০। যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল অতঃপর বলল, ‘হে আমদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন এবং আমাদের জন্য আমাদের কর্মকাণ্ড সঠিক করে দিন’।

এই সূরায় আল্লাহ ৪টি সুন্দর কাহিনীর সমাবেশ ঘটিয়েছেন। এক একটা কাহিনী শিক্ষায় পরিপূর্ণ, হেদায়াতের আলোয় উদ্ভাসিত! তিনি কাহিনীর মাঝে মাঝে আবার কিছু উপদেশ দিয়েছেন। অসাধারণভাবে মিশিয়েছেন কাহিনী, বক্তব্য ও উপদেশ। এর একটি নমুনা দেওয়া যাক। 
১-৮ আয়াতে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। 
৯-২৬ আয়াতে বর্ণনা করেছেন আসহাবে কাহাফের ঘটনা। 
২৭-৩১ আয়াতে আবার বক্তব্য দিয়ে (৩২-৪৪) আয়াতে দুটি বাগানের মালিক এর ঘটনা বলেছেন। 
এরপর আবার লম্বা বক্তব্য ও উপদেশ দিয়েছেন (৪৫-৫৯) আয়াতে। 
যেহেতু বক্তব্য ও উপদেশ একটু লম্বা হয়েছে, সেজন্যই মনে হয় টানা ২টি কাহিনী বর্ণনা করেছেন তিনি (৬০-১০১) আয়াতে। 
সে দুটি হলো- মুসা (আঃ) এবং খিজির নামক জ্ঞানী ব্যক্তির ঘটনা ও যুলকারনাইন সম্পর্কিত ঘটনা। আবার সূরা শেষ করেছেন (১০২-১১০) নং আয়াতের বক্তব্য ও উপদেশ দিয়ে। 
এ এক অসাধারণ গাথুনি। ৪টা ঘটনা, ৪টা বক্তব্য ও উপদেশের অসাধারণ সমাবেশ।

আরও প্রতিবেদন : রমজান কাটুক সূরা কাহফের সাথে

এসএ/