ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

রমজানে প্রয়োজন শুদ্ধাচারী হওয়া

ফাহমিদা ইসলাম ফারিয়া

প্রকাশিত : ১২:৫৬ এএম, ২২ এপ্রিল ২০২০ বুধবার | আপডেট: ১২:১০ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার

পবিত্র রমজান একেবারেই দোরগোড়ায়। রমজান আমাদের জন্য মহান আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার অনেক সুযোগ এনে দেয়। এই রমজান মাসে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর কাছে পবিত্র গ্রন্থ কোরআন অবতীর্ণ হয়। তাই এই রমজানে আমরা গুনাহ মাফ পাওয়ারও বিশেষ সুযোগ তৈরীর জন্য কাজ করবো। সময় পেলে আমরা নফল ইবাদত করবো, দান করবো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো।

তবে প্রথমেই আমরা উত্তম আচার ব্যবহার অর্জনের চেষ্টায় শুদ্ধচারে তৎপর হবো। দুর্ব্যবহার ও অশালীন আচরণ দূর করে ভদ্রতা-নম্রতা অর্জনের চেষ্টা করবো। মনে রাখতে হবে আমাদের নেকির পাল্লা ভারী করতে উত্তম আচরণ খুবই প্রয়োজন। আর উত্তম আচরণ শিখার জন্য আমাদের মাঝে আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় নবীকে প্রেরণ করেছেন। 

স্মরণ রাখতে হবে যা কিছু ন্যায় ও মানবিক তাই শুদ্ধ। আর যা কিছু অন্যায়, জুলুম ও অমানবিক তাই অশুদ্ধ। ধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর অধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। আর স্বাভাবিকভাবেই শুদ্ধাচারী জাতি নির্মাণে শুদ্ধাচারের চর্চা শুরু হতে হবে পরিবার থেকে। কারণ ব্যক্তির শুদ্ধাচার চর্চার লালনভূমি তার পরিবার। পরিবারে শুদ্ধাচারের চর্চা শুরু হলে তা ছড়িয়ে পড়বে চারপাশে, সমাজে। তার প্রভাব পড়বে জাতীয় জীবনে। ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ শুদ্ধাচারী হলেই দুর্নীতি ও অনাচারমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয় নবী (সো:)-কেও তার উম্মতের প্রতি উত্তম আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর আমাদের প্রিয় নবী ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী।  

রাসূল (সা.) সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-‘নিশ্চয়ই আপনি উত্তম নৈতিক চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত’। (আল-ক্বালাম: ৮)

কথাবার্তা ও মৌখিক আচরণে একজন মু’মিনকে কিভাবে শালীন হতে হবে সে ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-‘মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলো।’ (বাকারা: ৮৩)     

নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন-‘তোমার ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসির বিনিময় করাও সাদকার সওয়াব হয়ে যায়’। (তিরমিযী)।

অনেক হাদীসে নবী করীম (সা.) উন্নত নৈতিক চরিত্র অর্জন এবং খারাপ চরিত্র বর্জনের জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।

ঈমানের উচ্চ আসনে আসীন হওয়ার জন্য উন্নত নৈতিক চরিত্র ও আচার ব্যবহারের ন্যায় আর কোন আমল নেই। তিনি এরশাদ করেন-‘সবচেয়ে ঈমানদার হচ্ছে ঐ লোক যার চরিত্র সর্বোত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সে লোক সর্বোত্তম যে তাদের স্ত্রী-পরিবারের প্রতি উত্তম আচরণে অভ্যস্ত’। (আহমদ/তিরমিযী)   

রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো কোন আমল মানুষকে বেশি বেশি করে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন-‘আল্লাহ ভীতি ও উত্তম চরিত্র’। আবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো-কোন আমল মানুষকে বেশি বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন-‘মুখ (বচন) ও গোপন অঙ্গ (যিনা/ব্যভিচার)’। (তিরমিযী)  

শুধু তাই নয়, উত্তম চরিত্র ও আচার ব্যবহার এত উত্তম আমল যে, চরিত্রবান মু’মিনরাই পরকালে নবী করীম (সা.)-এর একান্ত সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পাবেন।   

তিনি এরশাদ করেন-‘তোমাদের মধ্যে ঐসব লোকেরাই আমার কাছে সবচেযে বেশি প্রিয় এবং ক্বিয়ামতের দিন আমার অতি নিকটে আসন পাবে, যাদের চরিত্র ও আচার ব্যবহার উত্তম’। (তিরমিযী)     

অন্য হাদীসে এসেছে-‘উত্তম নৈতিক চরিত্র ও আচার ব্যবহারের ন্যায় নেকীর পাল্লা ভারী করতে আর দ্বিতীয় কোন আমল নেই। আর আল্লাহ অশ্রাব্য গালমন্দ ও কটুকথা বলে এমন ব্যক্তিকে খুবই ঘৃণা করেন’। (তিরমিযী/আবু দাউদ)

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা লোকমানে উত্তম চরিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে লোকমান (আ.) তার সন্তানকে উত্তম আচরণ করতে আদেশ করেছেন। গর্ব ও অহংকার করে জমিনে বিচরণ করতে নিষেধ করেছেন।    

উত্তম চরিত্র ও আচার-আচরণ অর্জনের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতেন স্বয়ং আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ   (সা.)। তিনি যে দোয়া করতেন তার মর্মার্থ হচ্ছে-‘হে আমার প্রভু! আমাকে উত্তম চরিত্রের পথে ধাবিত করুন। আপনি ছাড়া আর কেউ সেদিকে ধাবিত করার নেই। আর আমাকে অসৎ চরিত্র ও আচরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। আপনি ছাড়া তা থেকে দূরে সরানোর আর কেউ নেই।’ আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের সুন্দর আদর্শে চরিত্রবান হয়ে দুনিয়াবাসীর কাছে ইসলামের প্রকৃত রূপ ফুটিয়ে তোলার গুরুদায়িত্ব পালনের তাওফিক দিন। আমীন!

এসি