রাজশাহী মেডিকেলের ডাক্তারসহ ৪২ জন কোয়ারেন্টিনে
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:৪১ এএম, ২২ এপ্রিল ২০২০ বুধবার
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ২১ চিকিৎসকসহ ৪২ জনকে কোয়ারেন্টিানে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন চিকিৎসক ও ১৫ জন ইন্টার্নি চিকিৎসক। বাকিদের মধ্যে ১২ জন নার্স ও নয়জন সহায়ক (আয়া-পরিছন্নকর্মী)। এদের মধ্যে ছয় চিকিৎসককে পর্যটন মোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। বাকিরা প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, যাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে তারা জরুরী বিভাগ, রেডিয়োলজি বিভাগ, ৪২ ও ৩৯ নং ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন। আগামী দুই দিনের মধ্যে সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার দিনভর তাদের চিহ্নিত করা হয়। সন্ধ্যায় তাদের কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও লকডাউন করা হয়েছে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড। পরবর্তি নির্দেশনা দেয়া না পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডের কোন রোগি প্রবেশ ও বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সাইফুল ফেরদৌস বলেন, রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আব্দুস সোবহান নামের ৮০ বছর বয়সের ওই রোগি গত ১৭ এপ্রিল রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। প্রথমে তাকে ৪২ ও পরে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে নেয়া হয়। পরের দিন তার এক্স-রে করার পর করোনার লক্ষণ পাওয়া গেলে তাকে সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর করোনা পাওয়া যায়।
এই করোনা রোগি নিয়ে হাসপাতালকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ্য করে চিকিৎসকদের প্রকাশ্যে নিয়মিত ব্রিফিং বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের গেটে করোনাভাইরাসের রাজশাহীর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকরা ব্রিফিং করতেন। কিন্তু বুধবার থেকে এখনো আর ব্রিফিং করা হবে না। তবে সেটি অনলাইনে করার চিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন করোনা নির্ণয় ও চিকিৎসক টিমের প্রধান ডা. আজিজুল হক আজাদ।
মঙ্গলবার সকালে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ডা. আজাদ বলেন, সংক্রমক হাসপাতালে ভর্তি রোগির বয়স ৮০ বছর। তাকে বুঝতে আমাদের একটি দেরি হয়ে যায়। কারণ তিনি বলেননি বাহির থেকে আসা কারও সংস্পর্কে গিয়েছিলেন। তিনি জ্বর ও প্রস্রাবের সমস্যার কথা বলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেভাবেই তার চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে তার এক্সে করার পর করোনার উপসর্গ কিছুটা বোঝা যায়। এর পর তাকে করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায়।
ডা. আজাদ বলেন, এই রোগির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তিনি এখন পর্যন্ত ভাল আছেন। সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে তার স্ত্রী ও ছেলে রয়েছেন। তাদের আজ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা হবে তাদের অবস্থা। এছাড়াও সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে আরও যে নয়জন ভর্তি রয়েছেন তারা সুস্থ্য আছেন। তাদের নমুনায় করোনা পাওয়া যায়নি। তাদের ছেড়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে আক্রান্ত অপর সাত রোগি ভাল রয়েছেন। সবার চিকিৎসা চলছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ১৪ দিন পার হওয়ার পর প্রত্যেকের দ্বিতীয় পরীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রেস ব্রিফিং অন্যদের মধ্যে রাজশাহী সদর আসেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার পরীক্ষার পর রাজশাহীতে আরও তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন মহিলা ও একজন পুরুষ। এ নিয়ে রাজশাহীতে করোন ভাইরাসে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা দাড়িয়েছে আটজনে।
রাজশাহী জেলার আটজনের মধ্যে পুঠিয়া উপজেলায় পাঁচজন, বাঘায় একজন, বাগমারায় একজন ও মোহনপুরে একজন আক্রান্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন নারী ও চারজন পুরুষ। তাদের মধ্যে সাতজন ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে এসেছেন।
এমবি//