ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

চাল নিয়ে যুবলীগ নেতার চালবাজি

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০২:৩৩ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৩:১৬ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২০ বুধবার

যুবলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার হোসেন ভুলু

যুবলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার হোসেন ভুলু

ঢাকার নবাবগঞ্জে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাল নিয়ে চালবাজির অভিযোগ উঠেছে। সরকারের জনবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা দরের চাল ও কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উপজেলার আগলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি গোলাম সারোয়ার হোসেন ভুলুর বিরুদ্ধে। 

তিনি ওই ইউনিয়নের ওএমএস চালের একজন ডিলার। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে। ফেসবুকেও ভাইরাল যুবলীগ নেতার এমন কর্মকান্ড।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড বাবদ টাকা নেয়া ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ ডিলার গোলাম সারোয়ার ভুলুর বিরুদ্ধে। এছাড়া কয়েকজনের চাল আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ এই নেতার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ৩শ’ টাকায় ৩০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও তিনি দিয়েছেন প্রতি বস্তায় ২৪-২৬ কেজি। এছাড়া চালের কার্ড দিতে জনপ্রতি ১০০ ও ২০০ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া এবং অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও তিনি কোন কার্ড বা চাল সহায়তা দেননি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। একই সাথে একটি বাড়ি একটি খামারের প্রকল্পের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এই ডিলারের বিরুদ্ধে।

আগলা টিকরপুর ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাছিমা (কার্ড নং- ৪৭২) বলেন, দুই সপ্তাহ আগে আমাদের মহিলা মেম্বার ডলি আমাকে সুলভ মূল্যের কার্ডটি দিয়ে গেছে। এখন দেখি কার্ডে লেখা, মার্চ এবং এপ্রিল মাসের ১০ টাকা দরের ৬০ কেজি চাল আমাকে দেয়া হয়েছে। অথচ আমি তো এখনো কোন চালই পাইনি। 

একই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা তানজিলা আক্তার বেগম (কার্ড-৪৩) ও নাজমা আক্তারের (কার্ড নং- ২১৬) মা রাহিমা খাতুনের। তারাও জানান, তাদের কার্ড পেয়েছেন ৮/১০ দিন আগে। তাদের কার্ডে দুই মাসের চাল উত্তোলন করা হয়েছে বলে ডিলারের স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্ত তারাও এখনো কোন চাল পাননি বলে অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়া চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ কালুহাটি গ্রামের মো. ইমরান খান (কার্ড নং- ২৩৯), নাজমা বেগম (কার্ড নং- ২৪২) ও মুক্তরা নেছার (কার্ড নং-২২৬)। ইমরান খান বলেন, আমি দুই মাস ধরে ১০ টাকা দরের চাল পাচ্ছি। ৩শ টাকায় ৩০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও প্রতিবারই ২৬ কেজি করে পাচ্ছি। নাজমা বেগম বলেন, আমি দুই মাস ধরে ৩০ কেজির জায়গায় ২৬ কেজি চাল পাচ্ছি। বাড়িতে এনে চাল মেপে দেখি ৪ কেজি করে কম। আমি এর প্রতিবাদও করেছিলাম। তখন ডিলার ভুলু ও তার লোকজন আমার সাথে রাগারাগি করেছে। বলে ১০ টাকা করে চাল পাচ্ছেন এটাই তো বেশি। যদি বেশি কথা বলেন তাহলে চাল পাবেন না। 

আগলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ছাতিয়া মোহনপুর গ্রামের মো. ছাকিল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ১০ টাকা দরের চালের কার্ড করার জন্য আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়েছে। পরে কার্ড পেয়েছি ঠিকই তবে চাল পাইনি। একই অভিযোগ স্থানীয় মাকসুদা বেগম, রাহিমা বেগম ও শাম্মী আক্তারের। তারা জানান, তাদের কাছ থেকে কার্ড করার জন্য টাকা ও আইডি কার্ড নিয়েছিলেন। কিন্ত দীর্ঘদিন ঘুরানোর পর কার্ড দেননি তারা। দুইদিন ধরে ভুলু ব্যাপারে ফেসবুকে লেখালেখি হচ্ছে। তাই সোমবার টাকা ফেরত দিয়ে গেছে। 

তারা আরো বলেন, ভুলু এর আগে একটি বাড়ি একটি খামারের প্রকল্পের নামে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। কিন্ত এখনো আমাদের কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো টাকাটাই পেলাম না। 

এ বিষয়ে এলাকাবাসীর স্বহস্তে স্বাক্ষরপূর্বক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা ডিলারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবী জানিয়েছেন।

আগলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ খান বলেন, ভুলুর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় নানান অপকর্মের সাথে জড়িত সে। আমার কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে ভুলুর বিরুদ্ধে। তবে ভুলুর পক্ষে এলাকার একটি চক্র সব সময় কাজ করে। 

স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য ডলি আক্তার বলেন, ডিলার ভুলু’র অনুরোধে আমি কয়েকটি কার্ড স্থানীয় কয়েকজনকে পৌঁছে দিয়েছি। আমি জানতাম না কার্ড দেওয়ার আগেই দুই মাসের চাল উত্তোলন করা হয়েছে। আমি কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত না। ভুলু কথায় কার্ডগুলো পৌঁছে দিয়ে আমি ভুল করেছি।

ডিলার গোলাম সারোয়ার হোসেন ভুলু বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা। আমি কারো কাছ থেকে কার্ড বাবদ টাকা নেইনি। তাছাড়া কাউকে চাল ওজনে কম দেওয়া হয়নি। একটি পক্ষ রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। যারা স্বাক্ষী দিয়েছে তারা একটি পক্ষের লোক।

নবাবগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছি। তবে যারা অভিযোগ করেছে তাদের ঠিকানা অসম্পূর্ণ থাকায় তাদের পাওয়া যায়নি। তদন্ত রির্পোট ইউএনও স্যারের কাছে জমা দিব। স্যার পরবর্তী তদন্ত করবে।

এনএস/