কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রেও হতে হবে সচেতন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৫৭ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার
করোনায় আক্রান্ত সারাবিশ্ব, যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের সংক্রমণে অসুস্থ হয়েছেন বহু, মৃত্যু ঘটেছে আশি হাজারেরও বেশি। বিশ্বজুড়ে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন যতো দ্রুতসম্ভব প্রতিষেধক আবিষ্কারের। কোভিড-১৯ এর মহামারীর ফলে সবাই আগের থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছেন। ছোঁয়াচে এই ব্যাধি থেকে নিস্তারের জন্য কিছু সময় পরপর নিয়ম মেনে হাত পরিস্কার করছেন। কিন্তু কাপড় ধোয়া নিয়ে রয়ে গেছে সংশয়। সাপ্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃষ্ঠতলে কোভিড-১৯ ভাইরাস কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ফলে, যেকোনো ধরনের কাপড় কীভাবে পরিস্কার করতে হবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন অনেকেই।
কাপড়ে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গের জনস হপকিন্স অল চিলড্রেন’স হসপিটালের পেডিয়াট্রিক ইনফেকশাস-ডিজিস ফিজিশিয়ান হুয়ান ডামুয়া বলেন, কাপড়ে এ ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে এখনও খুব বেশি জানা যায় নি। তবে, সাধারণত, কাপড়ের তুলনায় কঠিন পৃষ্ঠে করোনাভাইরাস বেশিক্ষণ টিকে থাকে। তিনি আরও বলেন, এ ভাইরাস কটনের চেয়ে ‘কৃত্রিম ফাইবার’ যেমন পলেস্টারের চেয়ে বেশিক্ষণ বাঁচে।’
করোনাভাইরাস সাধারনত হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। তাই, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু, কাপড় বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকার পাশাপাশি নিয়ম মেনে হাত ধুয়ে নেয়াও খুব জরুরি। কিন্তু, এ ভাইরাস বিভিন্ন রকমের পৃষ্ঠে লম্বা সময় বেঁচে থাকতে পারে। বিভিন্ন পৃষ্ঠতল খুব সহজেই অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব হলেও যেকোনো কাপড়ে বেশ কয়েকটি স্তর থাকায় নিজের এবং পরিবারের সুস্বাস্থের জন্য খুব ভালোভাবে কাপড় ধুয়ে নেয়া প্রয়োজন।
যদিও, দেশের অধিকাংশ মানুষ সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে নিজ বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছেন, তবে, যারা হাসপাতাল, নিরাপত্তা সংস্থা, ব্যাংক, সহ জরুরি সেবাদান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত তাদের কাজের প্রয়োজনে বাইরে যাতায়াত করতেই হয়। সেক্ষেত্রে, বিষেশজ্ঞরা তাদের পরনের কাপড় একবার পরিধানের পরই ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যবহারের পরপর ধোয়ার সমস্ত কাপড় একটি বদ্ধ ঝুড়িতে বা বিনে রাখা উচিত। যদি, ওই ব্যক্তি কোন করোনভাইরাস রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে থাকেন, তবে, তাদের ব্যবহৃত কাপড় ধোয়ার জন্য অথবা ফেলে দেয়ার অন্য আলাদাভাবে ডিসপোজেবল লাইনারের ভেতরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
হাতের তেমন কোনো স্পর্শ ছাড়া কাপড় ধোয়ার জন্যে সবচেয়ে সহজ উপায় ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করা। ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার সময় গরম পানির অপশনটি বেছে নিতে হবে, কেননা, গরমে জীবাণুর সংক্রমণ সাধারণত কম হয়। ব্লিচের ব্যবহারেও জীবাণু মারা যায়। তাই, যেসকল ডিটারজেন্টে ব্লিচ আছে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। মেশিনে একই সাথে অনেক কাপড় না দিয়ে, অল্প কাপড় দিলে ডিটারজেন্ট বা ব্লিচ কাপড়ের সব অংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
ওয়াশিং মেশিনের ড্রায়ারে, বা ড্রায়ারের সুযোগ না থাকলে সরাসরি সূর্যের তাপে কাপড় শুকিয়ে নিতে হবে। তাপ জীবাণু নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করবে। তাছাড়াও, শুকনো কাপড়ের থেকে ভেজা কাপড়ের মাধ্যমে জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এ সকল সতর্কতামূলক নির্দেশনা যে কেউ মেনে চলতে পারবে, তবে, যারা সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করছেন, তাদের মেনে চলা খুবই প্রয়োজন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) কর্মরত ডাক্তার ও নার্সদের পরনের কাপড় ও পিপিই পরিস্কারভাবে ধুয়ে নেয়ার জন্য সম্প্রতি ঢামেকে ওয়াশিং মেশিন হস্তান্তর করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেক্ট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনায় আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত, তখন দেশের একজন মডেল নাগরিক হিসেবে বাড়িতে থাকুন এবং সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। নিয়মমাফিক নিজ হাত ধুয়ে নিন, আশপাশ পরিস্কার রাখুন এবং পরিবারের সবাইকে সচেতন করে তুলুন। চোখ, নাক ও মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
আরকে//