করোনায় জবি ৫ম ব্যাচের বিশেষ উদ্যোগ
জবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার
মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে গোটা দেশ আজ বিপর্যস্ত। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে দেশ কার্যত লকডাউন। এর প্রভাব পড়েছে নানান শ্রেনি পেশার মানুষের উপর। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় সিংহভাগই গ্রামের মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল না থাকায় তাদের অধিকাংশকেই টিউশনি করে কিংবা বিভিন্ন জায়গায় খন্ডকালীণ কাজ করে নিজেদের খরচ চালাতে হয়। কিন্তু, দেশের এই পরিস্থিতিতে সব স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ায় এই শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক বর্তমান অনেক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটু ভিন্নভাবে কাজ করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে নিজেদের একটি গ্রুপের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে “এ টিম অব ট্রু সোউল” স্লোগান নিয়ে এই পরিস্থিতিতে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হয়। এ ব্যাপারে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও অবহিত করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জনাব মোস্তফা কামাল বলেন, পঞ্চম ব্যাচের এই সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে আমাকে যখন অবহিত করেছে, আমি সাথে সাথেই তাদেরকে এটার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়েছি এবং পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি। এভাবে সবাই চিন্তা করলে অনেক কিছুই সুন্দর হতে পারে। এদিকে এই উদ্যোগ সম্পর্কে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমাকে তাদের এই উদ্যোগের ব্যাপারে জানানো হয়। এমন উদ্যোগে অবশ্যই আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চাই। তারা যে মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে, এর থেকে বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরাও অনেক কিছু শিখতে পারবে।
কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এই উদ্যোগের একজন অন্যতম উদ্যোক্তা ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা মূলত মানবিক কারনেই বিপদগ্রস্থ অনুজদের পাশে দাঁড়াতে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে এই কার্যক্রম শুরু করেছি এবং সকলের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছি। ফান্ড কালেকশনের দায়িত্বে থাকা আরেকজন উদ্যোক্তা ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের ব্যাচের যেসকল বন্ধুদের সাথে আমরা যোগাযোগ করতে পেরেছি, সকল বন্ধুই এই উদ্যোগে বিভিন্ন ভাবে আমাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। কার্যক্রমের বর্তমান ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে এই উদ্যোগের আরেকজন অন্যতম উদ্যোক্তা নৃবিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী রিয়াজ আহমেদ সজল বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব ফান্ড থেকে দেড়শ জনেরও বেশি মানুষের বাজার নিশ্চিত করতে পেরেছি। এছাড়া আমাদের অন্যান্য উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় জবি’র ৫০ এরও অধিক বিপদগ্রস্থ শিক্ষার্থীর বাসায় কিংবা মেসে সরকারি ত্রান পৌছে দেবার ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এক্ষেত্রে এই বিপদগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের পরিচয় গোপন রাখছি যাতে করে তারা কোনরূপ লজ্জাবোধ না করে। কোন ধরনের প্রচারনা ছাড়া কিভাবে এই বিপদগ্রস্থদের খুঁজে পাচ্ছেন সেই বিষয়ে উদ্যোক্তারা বলেন, আমরা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের বন্ধুরা মিলেই কাজ করছি তাই এখানে প্রত্যেকেই এর উদ্যোক্তা। সবাই নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষক ও বিভিন্ন ব্যাচের ব্যাচ প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে বিপদগ্রস্থদের তালিকা করে তাদের কাছে উপহার পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষকরাও ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের এই ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। এই ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রোক্টর ও ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মোঃ মহিউদ্দিন মাহী বলেন, আমি পঞ্চম ব্যাচের এই উদ্যোগের কথা জেনে তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি এবং আমি বিপদগ্রস্থদেরকে পঞ্চম ব্যাচের এসকল উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা এই ধরনের মানবিক যে কোন কর্মকান্ডে শিক্ষকদের পাশে পাবে।
উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে পঞ্চম ব্যাচের এই উদ্যোগের উদ্যোক্তারা বলেন, আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ও এই করোনা পরিস্থিতিতে বিপদগ্রস্থদের পাশে দাড়াচ্ছি সম্পুর্ন মানবিকতার জায়গা থেকে। তবে তাদের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া ছিল, তারা যেন বড় হলে তারাও যে কোন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। মানবিকতার চর্চাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আর আমরা যেহেতু ব্যাচের বন্ধুরা মিলে একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে পেরেছি, সেহেতু আমরা শুধু এই করোনা পরিস্থিতি না, ভবিষ্যতে দেশের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে আমরা এক হয়ে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।
আরকে//