ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

উহানে নিখোঁজ সাংবাদিক ফিরে এসে যা বললেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৯ এএম, ২৫ এপ্রিল ২০২০ শনিবার

খোঁজ মিলেছে চীনের উহান থেকে আটকের পর গায়েব হওয়া সাংবাদিকের। মাস দু’য়েক আগে করোনার প্রাদুর্ভাবকালে তাকে আটক করেছিল চীনা প্রশাসন। 

ওই সাংবাদিকের নাম লি যেহুয়া। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাকে আটক করে। ধরার সেই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন ওই সাংবাদিক। এরপর প্রায় দু’মাস ধরে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। 

গত বুধবার তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যাতে তাকে বলতে শোনা যায় তিনি উহানে দু’সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। এরপর তার দেশের বাড়িতে তিনি আরও দীর্ঘ সময় কোয়ারেন্টাইনে কাটান।

তাকে বলা হয় যেহেতু তিনি ‘স্পর্শকাতর মহামারি এলাকা’ ঘুরেছেন, তাই তার কোয়ারেন্টাইনে থাকা দরকার।

লি যেহুয়া নাগরিকদের বিষয়ে সাংবাদিকতা করতেন। চেন চ্যউশি নামে আরেকজন সাংবাদিক উহান থেকে নিখোঁজ হয়ে যাবার পর তিনি উহানে হাজির হন। সেখান থেকে তার প্রথম ভিডিওতে সেখানে যাওয়ার কারণ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন,‘আমি উহানে ঢোকার আগে, চীনের মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে কাজ করে আমার একজন বন্ধু, আমাকে বলেছিল এই মহামারি নিয়ে সব খারাপ খবর কেন্দ্রীয় সরকার সংগ্রহ করছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলা হয়েছিল শুধু রোগীদের সেরে ওঠা নিয়ে ভাল খবর দিতে পারবে। কিন্তু রোগীদের আরোগ্যের বিষয়টা কতটা সত্যি তা নিয়ে সন্দেহ ছিল, কারণ আমার বন্ধুদের কাছে আমি সেরকম খবরই পেয়েছিলাম।’

লি যেহুয়া বলেন, ‘সেসময় তার রিপোর্ট করা খবরে সংক্রমণের কথা ধামাচাপা দেবার অভিযোগ ছিল, ছিল শেষকৃত্যের জায়গায় উপছে পড়া ভিড়ের অভিযোগ। চীনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে, ইউটিউবে এবং টুইটারে লক্ষ লক্ষ বার তার এই ভিডিও মানুষ দেখেছে, শেয়ার করেছে।’

নতুন ভিডিওতে ২৫ বছর বয়সি লি যেহুয়া বলেন, ‘তিনি উহানে যখন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আরেকটি গাড়ি থেকে তাকে থামতে বলা হয়। না থেমে জোরে গাড়ি চালিয়ে চলে যান।  কারণ সেসময় অনেক বিভ্রান্ত এবং ভয়ে ছিলাম। তিনি জানান, ৩০ কিলোমিটার পথ তাকে অন্য গাড়ি থেকে ধাওয়া করা হয়। তার এই যাত্রাপথের বেশ কিছুটা অংশ তিনি ইউটিউবে তুলে দেন ‘এসওএস’নাম দিয়ে।’

তিনি তার বাসায় পৌঁছে গোটা ঘটনা লাইভ স্ট্রিম করতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিফর্ম পরা বেশ কয়েকজন লোক কাছের এক বাসার দরজায় কড়া নাড়ে।

যেহুয়া ঘরের আলো নিভিয়ে দেন এবং নি:শব্দে ঘরে বসে থাকেন। শুনতে পান পুলিশ অফিসাররা অন্য বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছে। শেষ পর্যন্ত তার দরজায় এসে তারা কড়া নাড়ে। তিনি সাড়া না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন তিন ঘণ্টা। 

দীর্ঘ এ সময় পর আবারও তারা কড়া নাড়ে। লি যেহুয়া তখন দরজা খুলে দিলে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার আঙুলের ছাপ আর রক্তের নমুনা নেয়া হয়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। 

তাকে বলা হয়, সে নাগরিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে কোন শাস্তি হবে না। কিন্তু, যেহেতু সে মহামারি আক্রান্ত স্পর্শকাতর এলাকায় গিয়েছিল, তাই তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

পরে লি যেহুয়াকে পুলিশ প্রধান নিয়ে যান উহানের সরকারি কোয়ারেন্টাইন আবাসনে। সেখানে তার ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম সব নিয়ে নেয়া হয়। সেখানে দুই সপ্তাহ থাকতে হয়। তবে নিরাপদে ছিলেন তিনি। তাকে চীনা টেলিভিশনের খবর দেখতে দেয়া হচ্ছিল।

এরপর তাকে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয় সে যে শহরের ছেলে, সেই শহরের একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। সেখানে আরও দু সপ্তাহ থাকার পর তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে যেতে দেয়া হয়।

ওই সাংবাদিক বলেন, ‘এই গোটা সময়টাতে পুলিশ কোনরকম নির্যাতন না করে আইন মেনে আমার সঙ্গে আচরণ করে। বিশ্রাম ও খাওয়াদাওয়ার ওপর নজর রাখে। দেখাশোনা করে বেশ ভালভাবে। কোয়ারেন্টাইন শেষ করে আমি পরিবারের লোকেদের কাছে ফিরে যাই।’

তিনি বলেন, ‘যারা আমার দেখাশোনা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি যারা মহামারিতে আক্রান্ত তারা সেরে উঠবেন। চীনের মঙ্গল হোক। এর বাহিরে আর কিছুই বলছেন না লি যেহুয়া।’ 

অন্যদিকে, সাংবাদিক চেন চ্যউশি ৭৫ দিন পরে এখনও নিখোঁজ। তার বন্ধুরা যে টুইটার অ্যাকাউন্ট চালান সেখানে বলা হয়েছে, নিখোঁজ হবার পর তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

ফ্যাং বিন নামে আরেকজন সাংবাদিক যিনি উহানের ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট করছিলেন, ফেব্রুয়ারির পর থেকে তারও আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা 

এআই/