লকডাউনে নাটোরে ৮ কোটি টাকার ভেষজ উদ্ভিদ নষ্ট
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:৩৩ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২০ রবিবার
জমি থেকে তুলে এ অ্যালোভেরার ঠাঁই হয়েছে ডোবায়- একুশে টেলিভিশন
করোনার প্রভাবে দেশব্যাপী লকডাউনের কারনে ঔষধি গ্রাম খ্যাত নাটোরের লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নে উৎপাদিত অ্যালোভেরা (ঘৃতকাঞ্চন) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাড়ে চার হাজার কৃষক। ক্রেতা না থাকায় গত এক মাসে প্রায় ৮ কোটি টাকার এলোভেরাসহ বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ জমি থেকে উত্তেলনের পর ফেলে দিতে হয়েছে। উৎপাদনের ভরা এ মৌসুমে জমিতে চাষী ও শ্রমিকদের চিরাচরিত কর্মচাঞ্চল্য নেই। এতে প্রায় সাড়ে চার হাজার কৃষক, ব্যবসায়ী, হকার ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। লোকসান পুষিয়ে নিতে কৃষি প্রণোদনা চেয়েছে ভেষজ চাষীদের সংগঠন।
এলাকাবাসী জানায়, সদর উপজেলার লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়ার ইউনিয়নের ১৬ গ্রাম জুড়ে চাষ হয় অ্যালোভেরা, শিমুল মূল, অর্জুন, বাসকপাতা, কালোমেঘ, লজ্জাবতী, অশ্বগন্ধাসহ ২২ প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ। শুধু অ্যালোভেরা চাষ হয় এক হাজার ৫০ একর জমিতে। প্রতিদিন সকালে ভেষজ চাষীরা জমি থেকে এসব গাছগাছড়া সংগ্রহ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবারহ করতেন। বিক্রি হতো স্থানীয় হাট-বাজারে। করোনার প্রভাবে এখন সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ। কৃষিপণ্যবাহী যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও অ্যালোভেরার চাহিদা কমেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ফলে আসছে না পাইকার এবং ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। এতে বন্ধ রয়েছে অ্যালোভেরার বেচাকেনা। স্থানীয় হাটবাজারও বন্ধ। পাইকারি আড়তের সামনে স্তপ করে রাখা অ্যালোভেরায় পচন ধরেছে। উপযুক্ত সময়ে তুলতে না পারায় জমিতেই পচে যাচ্ছে অ্যালোভেরার পাতা।
শুধু জমি ঠিক রাখতেই অ্যালোভেরা তুলে ফেলে দিচ্ছেন এ দুই কৃষক- একুশে টেলিভিশন
লক্ষীপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিম পুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘লকডাউনের কারনে কোন বচা কেনা নাই। ক্রেতা নেই তাই জমি পরিচর্যা করছি না। এতে জমিতে আগাছা জন্মে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ চাষী তাদের জমিতে লাগানো অ্যালোভেরা গাছের পাতা কেটে ফেলে দিচ্ছেন।’অপর এক কৃষক কামাল হোসেন জানান, এই ঔষধী গ্রাম থেকে আগে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ টন অ্যালোভেরা দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা কিনে নিয়ে যেত। লকডাউনের পর থেকে এলাকায় কোন বেচা কেনা নেই। ফলে জমিতেই থেকে যাচ্ছে অ্যালোভেরার পাতা। জমি ঠিক রাখতে পাতাগুলো ভেঙ্গে ডোবা নালায় ফেলে দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া শিমুল মূল, অর্জুন, বাসকপাতা, কালোমেঘ, লজ্জাবতী, অশ্বগন্ধাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদও বিক্রি করতে পারছেন না এখানকার ভেষজ চাষীরা। এসব ভেষজ উদ্ভিজও পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ায় তা ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে করে গত এক মাসে ৫ থেকে ৮ কোটি টাকার অ্যালোভেরাসহ বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ জমি থেকে ফেলে দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, ‘চাষীরা চাইলে তাদের অ্যালোভেরা বাজারজাত করণে সহায়তা করা হবে।’
এমএস/