স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় প্রণোদনা
কানাডায় বেতন বেড়েছে ঘণ্টায় ৪ ডলার!
শওগাত আলী সাগর
প্রকাশিত : ১২:৪৩ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১২:৫৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২০ রবিবার
শওগাত আলী সাগর
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই নানা পেশা, নানা শ্রেণির মানুষের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ঘোষণা দিচ্ছে কানাডা সরকার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা দিনে রাতে মানুষ বাঁচানোর লড়াই করে যাচ্ছে- তাদের জন্য সরকার কি কিছু দিয়েছে? কি দিয়েছে?
ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন! আমরা জানি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের সব ধরনের ছুটি ছাটা বাতিল করা হয়েছে। তাদের বর্ধিত সময় কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তারা সেটি করে যাচ্ছেন। তাদের জন্য কি কানাডা সরকারের বিশেষ কোনো ইনসেনটিভ আছে!
অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল সরকার বিশেষ কিছু ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। সবার নয়- বিশেষ কিছু কর্মী এই বাড়তি বেতনের জন্য বিবেচিত হবেন, বিশেষ করে যারা লং টার্মকেয়ার, সিনিয়র হোমসহ স্পর্শকাতর জায়গায় কাজ করেন। হাসপাতালে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে যারা স্পেশাল নিড বা সিনিয়রদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকেন তারা এই বর্ধিত ভাতা পাবেন।
স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বেতন কতো বেড়েছে জানেন? ঘণ্টায় ৪ ডলার। হ্যাঁ, ঘণ্টায় মাত্র ৪ ডলার করে বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে প্রভিন্সের প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড বলেছেন, এটি হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের ধন্যবাদ দেয়া। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে তোমরা যে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছো তার জন্য আমাদের স্বীকৃতি। আরো একটি সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আগামী ৪ মাস যারা মাসে ১০০ ঘণ্টার বেশি কাজ করবে তারা অতিরিক্ত ২৫০ ডলার করে পাবে। ব্যাস।
বিশ্বাস করতে পারেন- চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনাকালে এই হচ্ছে কানাডা সরকারের একমাত্র ইনসেনটিভ। ঘণ্টায় ৪ ডলার করে বেতন বৃদ্ধি। তাও আবার সারা কানাডায় নয়, কেবল অন্টারিওতে। অন্যান্য প্রভিন্স আলাদা করে ঘোষণা না দিলে ওই প্রভিন্সগুলোতে এটি কার্যকর হবে না।
ডাক্তাররা, স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজের দায়িত্বে হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাদের খাবার নিজেদেরই সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে। ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরে নিজেদের যত্ন নিজেদেরই নিতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য বাড়তি কোনো সুবিধা, বাড়তি কোনো ইনসেনটিভ রাষ্ট্র বা সরকার দেয়নি। ডাক্তার বা স্বাস্থ্যখাতের কোনো কর্মীদের পক্ষে থেকেও কিছু দাবি করা হয়নি। অথচ অন্য খাতের যারা কাজ হারিয়েছেন কিংবা কাজ করার সুযোগ থাকা সত্ত্বে কাজ ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে আছেন তারাও সরকারের কাছ থেকে মাসে ২ হাজার ডলার করে পাচ্ছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সেরকম কিছু্ও নেই। কেন নেই? নেই কারণ- এটাই তাদের দায়িত্ব, স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের উপর দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেদের দায়িত্ব পালনের জন্য বাড়তি ইনসেনটিভ দেয়ার দরকার হয় না, তারাও সেটা চান না।
এমনকি দায়িত্ব পালনকালে কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলে বা মারা গেলেও বাড়তি কোনো সুবিধা পাবেন না। স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধাই অপরিবর্তিত রয়েছে, শুধু বেড়েছে তাদের কাজের চাপ। নিজের, পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই তাদের এই বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তারা সেটি করে যাচ্ছেন মনের আনন্দে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা কি কিছুই পাননি? পেয়েছেন। দেশের মানুষ তাদের দেবতার মতো কিছু মনে করছে, তাদেরই দেশের প্রকৃত নায়ক হিসেবে সম্মান জানাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন তার বক্তব্য শুরু করেন স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে। কিন্তু বৈষয়িক কোনো বাড়তি সুবিধা তাদের জন্য ঘোষণা করা হয়নি।
তবু আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের কোনো অভিযোগ নেই, কোনো রোগীর প্রতি অবহেলা নেই, দায়িত্ব পালনে অনীহা নেই। দিন রাত ভুলে গিয়ে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অর্থ কড়ির হিসাব করার যেন কোনো সময়ই তাদের নেই। মানুষ বাঁচানো, মানুষকে সুস্থ করে তোলার বাইরে আর কোনো ভাবনাই যেন তাদের ছুঁতে পারছে না। করোনার এই কঠিন সময়ে এঁরা নিজেরা যেনো আর মানুষ থাকেননি- হয়ে গেছেন দেবতা কিংবা দেবদূত জাতীয় কিছু।