সামাজিক বন্ধন বাড়ছে করোনায়
এস ইউ আহমদ
প্রকাশিত : ০৮:১৭ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৮:৪৭ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২০ সোমবার
ছবি: সংগৃহিত
করোনায় অনেকের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, সাচ্ছন্দের সংসারটা আর আগের মত নেই। শুধু কি আয় বন্ধ হয়েছে? লকডাউনে ঘুষ দুর্নীতি কি বন্ধ হয়নি, অভাব আর করোনার মাহামারী দেখে মানুষের বিবেক কি জাগ্রত হয়নি? মহামারী আমাদের শারীরিক ও মানুষিক ব্যস্ততা কমিয়েছে, সবাইকে সবার কর্মস্থল থেকে মানব সেবার দ্বারে নিয়ে গেছে। দানে উৎসাহ যোগীযেছে, সফল মানুষ থেকে সেবক মানুষ হয়েছি, সঞ্চয়ি থেকে হয়েছি দানশীল। নিজের জন্য নির্ধারীত সময়টুকু ব্যয় হচেছ মানব সেবায়। এখন সবাই শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি এখন আমরাতে পরিণত হয়েছি।
যদিও এখনও ত্রাণ চুরি, চাল চুরি কমেনি; তবু অগ্রগতি কম নয়। মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে মানবিকতা। যে মানুষটি বছরের পর বছর ভিক্ষা করে সামান্য কয়টা টাকা আয় করেছে সেও এমন মুহুর্তে দান নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এটি আমাদের বিরাট প্রাপ্তী। যারা সমাজে নানা অপরাধকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারাও করোনার মহামারিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও করোনা আমাদেরকে ধীরে ধীরে সামাজিক বন্ধন তৈরিতে ভুমিকা রাখছে।
এক সময় বাংলাদেশের সর্বত্রই যৌথ ফ্যামিলি ছিল, কিন্তু এখন তেমন একটা আর দেখা যায় না, সবাই এখন নিজের উন্নতি, নিজের ভবিষ্যৎ, নিজের সুখ সাচ্ছন্দ নিয়ে ব্যস্ত, নিজেকে নিয়ে আরো কতো বাহারি চিন্তা। সবাই আলাদা হয়ে যাচেছ, প্রতিবেশি তো দূরের কথা আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকেও দূরে সরে যাচিছলাম।
করোনার আবির্ভাব হওয়ার পরে আমাদের চিন্তাধারা, কাজকর্ম সব কিছুতেই পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন আমরা আশপাশের বাসিন্দা, আত্মীয় স্বজন নয় পুরো বিশ্ব নিয়ে চিন্তিত।
কিভাবে অন্যের সেবা করতে পারি, অন্যের প্রয়োজনে নিজের ব্যবহারের চিন্তায় ব্যস্ত। নিজের জীবনের মায়া না করে জনসেবায় আত্ম নিয়োগ করছি, নিজের ঘড়ের খাবার পৌঁছে দিচ্ছি অনাহারির হাতে, এখন পুরো এলাকাটাই হয়ে যাচ্ছে এক পরিবার, পুরো দেশটাও যদি এক পরিবার হয়ে যায় কারো আর আপত্তি থাকবে না। খুশি মনেই সবই আপন করে নিবো, যে কোন মূল্যেই হোক মৃত্যুকে আর কেউ দেখতে চায় না, সবাই করোনার হাত থেকে মুক্তি চায়।
এক সময় যার অবসর বা ব্যস্ত সময় কাটতো টিভি সিরিয়ালকে ঘিরে, কত দুঃখ, কত সুখ ছিল, কতইনা উত্তেজনা ছিল টিভি সিরিয়ালকে ঘিরে, সিরিয়াল কখন শুরু, কি হয়েছিল, আগামীতে কি হবে, এই সব গল্পে মেতে থাকতো, সেই মানুষটির আর ওই সবে মন নেই, তার একটাই চিন্তা করোনা কবে যাবে, মানুষ কিভাবে বাঁচবে, কি খেয়ে বাঁচবে, চিকিৎসা কোথায় পাবে, তার দৈনন্দিন চিন্তা এখন মানুষকে নিয়েই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের অসামাজিক না করতে পারলেও কিছুটা হলেও সামাজিক দুরত্ব বাড়িয়েছে, স্ট্যাটাস লিখে, সেলফি আপলোড করে, লাইক, কমেন্টের উপর নির্ভর ছিল- মন ভালো হবে না খারাপ হবে। শুধু চিন্তা ভাবনা নয় জীবনটাই হয়ে যাচ্ছিল সামাজিক যোগযোগ নির্ভর। নিজের অজান্তেই অনেকেই দূরে চলে যাচ্ছিল। নিজের থেকেও অনেক দূরে চলে যাচ্ছিল। সমাজ সংসার, আত্মীয় থেকে কত দূরে সেটা না হয় আলোচনায় নাই বা ঠাঁই পেলো। করোনা আমাদের সেই দূরত্ব আবারো কমাতে শুরু করেছে, স্যাশাল মিডিয়ায় ব্যস্ত মানুষটি ফিরে এসেছে তার ভিতরে, মানুষের দুর্দশায় তার মন কাঁদে, মানুষের সেবায় সে নিজেকে নিয়োগ করতে চায়, যতটুকু মানব সেবা সে করেছে তাতে তার মন ভরে না, সে তৃপ্ত নয়।
দুর্নীতি গ্রস্থ, ঘুষ খোরের হৃদয়ে আজ কাপন ধরেছে, কাকে সে ঠকিয়েছে, কার কাছ থেকে সে ঘুষ নিয়েছে, আজ তো লোকটি অর্ধাহারে, অনাহারে আছে, নিজের সব ভুলের জন্য আজ সে স্রষ্টার কাছে ক্ষমা চায়, নিজেকে সে উৎর্সগ করতে চায় মানব সেবায়, পাড়ার নষ্ট ছেলে, নেশাখোর ছেলেটি লকডাউনের মাঝে আর ডাস্টবিনের পেছেনে বসে গাঁজা খায় না, ফেন্সিডিল খোর ছেলেটি আজ মাঝ রাতে ফ্লাইওভারে দাঁড়িতে নেশা করে না, নেশা করে পুলিশের হাতে ধরা পরে পাড়ার বড় ভাইকে তদবির করার জন্য ফোনও দেয়না। সে এখন খোঁজ নেয় এলাকায় কারো করোনা হয়েছে কি না, কেও লকডাউন মানছে কি না। কেউ অর্ধাহারে অনাহারে আছে কিনা, মানুষের জন্য কি করা যায় এটাই তার একমাত্র ভবানা।
সাবাই এখন সেবক হতে চায়, হতে চায় এক পরিবার, করতে চায় দান; যার যা আছে তাই দান করতে চায়। কেও নিজের ঘরের খাবার নিয়ে যাচেছ অনাহারির ঘরে। কেওতো ধার দেনা করে অন্যের সাহায্য করছে, যার কিছুই নেই সে তার অবসর সময়টুকুই অন্যের সেবায় দান করতে চায়। নিজের কিছু না থাকলে অন্যের সেবায় নিজেকেই দান করতে চায়। বারই এখন একটাই চাওয়া একটাই প্রার্থনা সুস্থ সবল দেহে আবারো কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরে যাওয়ার।
এসি