সারাদেশের ধান ঘরে তুলতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার: কৃষিমন্ত্রী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:২৯ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৯:৩১ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২০ বুধবার
সুনামগঞ্জে নতুন ২টি হারভেস্টার বিতরন ও প্রণোদনা কার্যক্রম উদবোধনকালে কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বৈশাখের এই সময়টা বোরো ধান কাটার মৌসুম। আমাদের সারা বছরের মোট চাল উৎপাদনের অর্ধেকের বেশী যোগান দেয় বোরো ধান। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শুধু হাওর নয়, এই মুহূর্তে সারাদেশের ফসল সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা জরুরী একটি কাজ। এটি করতে পারলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ধান কাটা ও কৃষকদের উৎসাহ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী নতুন ২টি হারভেস্টার কৃষকদের মাঝে বিতরন করেন এবং ২য় ধাপে ১৫ কোটি টাকার প্রণোদনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়াসেন গুপ্তা, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, মহিলা সংসদ সদস্য এড. শামীমা শাহারিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ পরিচালক মোঃ সফর উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবরি ইমন, সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা প্রমুখ।
এসময় ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনা ভাইরাসের বিরুপ পরিস্থিতির মাঝেও হাওরগুলোর বোরো ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসে ধান কাটছেন। হাওরের জন্য জরুরী ভিত্তিতে ধান কাটার যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে এবং প্রতিকূল পরিবেশে হাওরের কৃষক যাতে সহজে যন্ত্রপাতি কিনতে পারেন সেজন্য যন্ত্রের দামের ৭০ শতাংশ দিচ্ছে সরকার। একইসাথে দেশের অন্য এলাকা থেকে হাওরের আগাম বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার নিয়ে আসা হয়েছে। এরফলে ইতিমধ্যে হাওরের ৬৭ শতাংশ বোরো ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি বলেন, মহামারী করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষের আশংঙ্কা করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বার বার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন। কৃষি ও কৃষকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সে-লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে কেউ মারা গেলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এক লাখ টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষীদের জন্য একটি তালিকা করে দেয়া হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী লটারী হবে, এতে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। সেখানে ডিসি, এসপি, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কর্মকর্তাসহ কৃষি কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকার গত আমন মৌসুমে ৬ লক্ষ টন ধান কিনেছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী দেশের ২২টি জেলা থেকে আরও ৮ লক্ষ মোট্রক টন ধান সরাসরি কৃষকদের নিকট হতে কেনা হবে বলেও সবাইকে আশ্বস্থ করেন।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ধান কাটা সহজতর করতে ২০০ কোটি টাকার মাধ্যমে প্রায় ১৩০০ কম্বাইন হারভেস্টার ও ৯৩৪টি রিপার, ২২টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান বলেন, হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অকৃত্রিম ভালোবাসা সব সময় আছে বলেই তিনি এখানকার কৃষকদের উৎসাহ দিতে নতুন ২টি হারভেস্টার প্রদান করেছেন। এই সরকার কৃষকদের জরুরীভিত্তিতে ধান কেটে ঘরে তোলার যন্ত্রপাতিও দিয়েছেন। এসব যন্ত্রপাতির মানও খুব ভালো এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকরা ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এনএস/