ময়মনসিংহের মাছ জাদুঘর
এস ইউ আহমদ
প্রকাশিত : ১২:০৪ এএম, ২ মে ২০২০ শনিবার
ছোটবেলায় এলাকায় বয়স্ক মানুষের মুখে বলতে শুনেছি, তারা অনেক রকমের মাছ দেখেছেন। তখন মাছের পরিমাণটাও অনেক ছিল। আজ ২০ বা ৩০ বছর পর একই কথা আমরাও বলছি যে, অনেক রকমের মাছ দেখতাম। অনেক পরিমাণে মাছ দেখতাম, মাছেরা কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। নদী-নালা, খাল-বিল থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু মাছ। মাছ রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।
সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ২০০৯ সালে স্থাপিত হয় ‘ফিশ মিউজিয়াম অ্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি সেন্টার’। ফিশ মিউজিয়াম এন্ড বায়োডাইভার্সিটি সেন্টার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের আওতাধীন একটি জাদুঘর। যুক্তরাজ্যের স্টারলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) মাধ্যমে এ জাদুঘর করা হয়েছে।
সহনশীল প্রজাতির মাছ চাষের লক্ষ্যে কাজ করে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে মোট ৫টি কক্ষ নিয়ে। প্রথম কক্ষটির নাম- ফ্রেশ ওয়াটার ডলফিন এন্ড ফিশ, আর দ্বিতীয় কক্ষটির নাম- এনসিয়েন্ট এন্ড মিডিয়া, তৃতীয়টির নাম- সিলোরিফরমিস বা বিড়াল জাতীয় মাছ, চতুর্থটি- সিপ্রিনিফরমিস বা কার্প জাতীয় মাছ এবং পঞ্চমটি- পার্সিফরমিস বা কই জাতের মাছ।
এই জাদুঘরে মাছের নমুনাগুলি বিভিন্ন আকারের কাচের জারে ফরমালিনে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে।প্রতিটি মাছের জার বরাবর ওপরের দিকে দেয়ালে সাঁটা পোস্টারে প্রদর্শন করা হয়েছে ঐ মাছেরই পরিপক্ক বয়সের আলোকচিত্রসহ প্রচলিত ও বৈজ্ঞানিক নাম এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জাদুঘরের গ্যালারিতে প্রবেশ করার আগেই চোখে পড়ছে আবহমান কাল ধরে গ্রাম বাংলার জেলেদের ব্যবহারের বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র।
এখানে গেলে আপনি বাংলাদেশের স্বাদুপানির ২৬৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে ২৩০ প্রজাতির মাছ দেখে আসতে পারবেন। মৎস্য জাদুঘরের গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে স্বাদু পানির বিভিন্ন প্রজাতিসহ হাজার বছরের বিলুপ্ত প্রজাতির জীবাশ্ম । সংরক্ষণ করা হয়েছে বিভিন্ন বড় বড় কাচের সিলিন্ডারে। একটি গ্যালারিতে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিলুপ্ত মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবাশ্মের প্রতিলিপি। সংগ্রহে আছে ৪০টি জীবাশ্ম ও কঙ্কাল।
পূর্ব পাশের গ্যালারিতে সংরক্ষিত রয়েছে ৮৭ প্রজাতির মাছ, তার মধ্যে মধ্যে ৮১ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ আছে। রয়েছে পুটি, রুই, কার্প, কাতলা, মৃগেল, চেলা, কালিবাউস, মলা, রানি মহাশোলসহ বিভিন্ন রকমের মাছ। পাশের একটি গ্যালারিতে আছে মাগুর, শিং, বোয়াল, টেংরা, বাতাসি, বাঘাইর, পাবদা প্রভৃতি। এখানে সংরক্ষিত আছে ৬১ প্রজাতির মাছ, তার মধ্যে ৫৩টি প্রজাতি স্থান পেয়েছে। পাশের অপর একটি গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে কই, বেলে, খলসে, চান্দা, ভেটকি, টাকি,পারশ, শোল মাছসহ অনেক ধরনের মাছ।
এছাড়া এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ইলিশ, চিতল, কানপোনা, ফলি, চাপিলা, কাকিলা, ফ্যাসা, পটকা, বাইম, কাচকিসহ অনেক ধরনে মাছ। আছে ২৮ বছর বয়সের ১৯৯ সেন্টিমিটারের লম্বা শুশুকের কঙ্কাল। বেশ কিছু সামুদ্রিক কাঁকড়াও এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
দেশের মানুষের সামনে মাছের ঐতিহ্য, মাছের ইতহাস তুলে ধরতে এবং বিভিন্ন রকমের মাছের ব্যাপারে জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি করাটাই মৎস্য জাদুঘরের মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন রকমের মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে, বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় সব স্বাদু পানির ও সামুদ্রিক মাছ এবং জলজ প্রাণী সংরক্ষণের মাধ্যমে যাকে ভবিষ্যত গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার যায় সেই উদ্দেশ্যে এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই জাদুঘর। জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে।
এমএস/এসি