ইইউ এর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে বিপাকে ভিয়েতনাম
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৪৬ এএম, ৩ মে ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৭:০৫ এএম, ৩ মে ২০২০ রবিবার
ভিয়েতনামের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত পোশাক শ্রমিকরা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (ইভিএফটিএ) করে অনেকটা বিপাকে পড়েছে ভিয়েতনাম। এই চুক্তির পুরোপুরি সুবিধা পেতে ইইউ এর শর্ত পূরণ করা অনেকটা গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির জন্য। অভ্যন্তরীণ কাঁচামাল সরবরাহের ঘাটতির কারণে চুক্তির সুবিধার বেশিরভাগই পাচ্ছে না তারা।
গত ১২ ফেব্রুয়ারী ভিয়েতনামের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির অনুমোদন দেয় ইইউ পার্লামেন্ট। তবে বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা পেতে ভিয়েতনামকে শর্ত জুড়ে দেয় যে, ভিয়েতনামী টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস উত্পাদনকারীদের কঠোরভাবে "উত্সের নিয়ম" মেনে চলতে হবে। যার অর্থ পণ্যের কাঁচামাল অবশ্যই ভিয়েতনাম বা ইইউ থেকে নিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিয়েতনামী পোশাক কারখানার ৯০ শতাংশের বেশি র ম্যাটেরিয়ালস আসে চীন থেকে। ফলে ভিয়েতনামী পোশাক কারখানার জন্য ওই শর্ত মেনে চলা প্রায় অসম্ভব। আমদানি করা র’ ম্যাটেরিয়ালস দিয়ে তৈরি পোশাক শুল্ক মুক্ত সুবিধা পাবে না।
ইইউ-ভিয়েতনাম ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-ইভিএফটিএ চুক্তির ফলে আগামী ১০ বছর ইইউভুক্ত দেশগুলোতে প্রায় বিনা শুল্কে পণ্য রপ্তানির সুবিধা পাবে ভিয়েতনাম। গত ফেব্রুয়ারিতে এই মুক্তবাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তির অনুমোদন দেয় ইইউ পার্লামেন্ট।
চুক্তির ফলাফল নিয়ে ধারণা করা হয়, এই চুক্তির বাস্তবায়নের পর ইইউ ও ভিয়েতনামের মধ্যেকার ৯৯ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক থাকবে না। তাতে দুই দেশের কোম্পানির জন্য বাজার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে। চুক্তি বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে ভিয়েতনামে ইইউর ৬৫ শতাংশ পণ্যের রপ্তানি শুল্কমুক্ত হয়ে যাবে। বাকি পণ্যের শুল্ক ১০ বছর ধরে ক্রমান্বয়ে কমবে। একইভাবে ইইউতে রপ্তানি হওয়া ভিয়েতনামের ৭১ শতাংশ পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার হয়ে যাবে শুরুতেই। বাকিটা হবে সাত বছরে ধাপে ধাপে।
ইইউর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই চুক্তির ফলে ২০৩৫ সাল নাগাদ ইইউতে ভিয়েতনামের বার্ষিক রপ্তানি বেড়ে হবে ১ হাজার ৫০০ কোটি ইউরো। অন্যদিকে সমানতালে এগিয়ে যাবে ইইউ। ভিয়েতনামে তাদের রপ্তানি প্রায় ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ২০০ কোটি ইউরোতে পৌঁছাতে পারে।
ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা:
একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভিয়েতনামের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতা করতে হয় বাংলাদেশকে। ইইউতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে পোশাক রফতানি করে মোট পোশাক রফতানির ৬২ শতাংশ।
বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, ইইউতে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের ১২ শতাংশ পোশাক ও ভিয়েতনামের রফতানি করা ১১ শতাংশ তৈরি পোশাকের অনুরুপ। এখানে ভিয়েতনামও যদি শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, তবে এসব পণ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। যা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এরআগে ভিয়েতনামকে ইইউভুক্ত দেশে তৈরি পোশাক রফতানি করতে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো।
বাংলাদেশি পোশাক রফতানিকারকদের আশার কথা হচ্ছে, ভিয়েতনাম যদি ইইউ এর সঙ্গে করা বাণিজ্য চুক্তির শর্ত পূরণ করতে না পারে, তবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। যা বড় স্বস্তির খবর তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের জন্য।
ইন্দো চীন উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত রাষ্ট্র ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশ। ভিয়েতনাম ইইউভুক্ত দেশে টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি, খাদ্য ও পোশাক রপ্তানি করে। অন্যদিকে ইইউর দেশগুলোর রপ্তানি পণ্যের তালিকায় আছে যন্ত্রপাতি, পরিবহন সরঞ্জাম, রাসায়নিক এবং কৃষিপণ্য।