চলে যাচ্ছে রমজান...
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:১৪ পিএম, ৩ মে ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০২:২১ পিএম, ৪ মে ২০২০ সোমবার
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারীর সময়েই অতিক্রম করছে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস। এ দুর্যোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে এ সময় মহান স্রষ্টার কাছে বিশেষ প্রার্থনার সুযোগ এসেছে। পাশাপাশি রমজানের বিশেষ নির্দেশনা সংযম পালন ও দানের মাধ্যমে অশেষ পূণ্য লাভেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই রমজানেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই ঘরে থাকার এ সময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তৈরি হয়েছে কোরআন চর্চার অবারিত সুযোগ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই এই কোরআন সর্বাধিক সরল পথের সন্ধান দেয়। তাই এই ভয়াবহ সময় দ্রুত অতিক্রম করার জন্য রমজানে আমরা মুখ, চোখ, কান, নাক, অন্তরের সর্বোচ্চ সংযম পালনের পাশাপাশি কোরআন চর্চা, অসহায়ের দান ও মুক্তির জন্য দোয়া করবো বেশি করে।
রহমতের রমজান, মাহে রমজান দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজ ৯ম দিন। এ সময়ে এসে আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই, কতটুকু মর্যাদায় রোজা পালন করতে পেরেছি! বলা হয়ে থাকে, রোজার কোন সওয়াব নাই, কারণ রোজাদারের পুরস্কার মহান আল্লাহ নিজেই দিবেন। রোজাদারের জন্য আল্লাহ নিজে হয়ে যান মেজবান, আর মেজবান হন তার মেহমান। এ জন্যই এ মাসটি আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত বরকতের মাস।
মনে রাখতে হবে, রোজা মানে শুধু উপবাস নয়, ইসলাম ধর্মের প্রতিটি কাজের মতোই রোজার উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ এবং তার রসূলের সন্তুষ্টি। সে সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে দেহ-মনকে একান্তভাবে প্রস্তুত করতে হবে একাগ্রতা দিয়ে, নিবিষ্টতা দিয়ে। প্রথমেই এ মাসে দেহের সবগুলো জানালা বন্ধ করে দিতে হবে। যেমন মুখ, জিহ্বা মিলে হচ্ছে একটি জানালা- এ পথ দিয়ে সুস্বাদু সব বস্তু ভেতরে প্রবেশ করে। আমরা নিয়ত করলাম- হে আল্লাহ, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য এক অন্ধকার শেষ হবার আগ থেকে আরেক অন্ধকার শুরু হবার সময় পর্যন্ত তোমার দেয়া খাদ্য এবং পানীয়এর সমস্ত নেয়ামত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবো। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা একটা জানালা বন্ধ করে দিলাম।
আমাদের বেশির ভাগ মানুষের কাছে রোজা এর বেশি তেমন কিছুই নয়। মনে রাখতে হবে, আমাদের শরীরের আরও অনেকগুলো জানালা খোলা রয়ে গেছে। যেমন- চোখ, কান, নাক, মন, শরীর; এরকম সব সব জানালা খোলা রেখে প্রকৃত রোজা পালন অসম্ভব প্রায়। আবার মনে রাখতে হবে, মুখ একটি দ্বিমুখী জানালা। খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থেকে একটা পথ সহজে বন্ধ করা যায়। কিন্তু বাকশক্তিকে সংযম করে অপর শক্তিশালী জানালাকেও বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ রোজা রেখে অপ্রয়োজনীয় ও অশালীন কটু কথা বন্ধ করে এ জানালা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আরও অনেক জানালা থাকলেও অন্যতম শক্তিশালী একটা জানালা হলো- কলব বা অন্তর। যা দিয়ে অন্তর্জগতের বিচিত্র ছবি দেখা যায়, কল্পনা করা যায়।
বলা হয়, চোখ বন্ধ না করলে একাগ্রতা আসবেনা। রোজা রাখলাম আবার চোখ দিয়ে সারাদিন নানান ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রঙিন চিত্র দেখলাম, আবার মহান আল্লাহর একাগ্রতাও চাইলাম! এতে আল্লাহর প্রেম কতটুকু হয়েছে তা সহজেই প্রতীয়মান হয়। স্মরণ রাখতে হবে, প্রকৃত রোজা রাখতে হলে এ জানালা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। বাইরের জানালা বন্ধ করলেই মনের ভেতরের আলো ধীরে ধীরে জ্বলে উঠবে। এরপর রয়েছে কান। কানের বাইরের মিষ্টি মধুর সুর ভেতরের একগ্রতা নষ্ট করে দেয়। আল্লাহর প্রতি একগ্রতার জন্য এ জানালা ও বন্ধ করতে হবে। তারপর রয়েছে নাক, ত্বক। নাক দিয়ে মিষ্টি সুগন্ধ আর ত্বক দিয়ে মধুর স্পর্শ জগতকে স্পর্শ করে। এসব কিছু চিত্তকেও বিভ্রান্তি করতে পারে। তাই এগুলো থেকেও বিরত থাকতে হবে।
এখানে প্রাসঙ্গিক আরও একটি বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করা যায়। যেমন- ঈমান যার নেই তার নামাজ অর্থহীন। আবার রোজা রাখলে নামাজ পড়বেনা এটাও হতে পারে না। নামাজহীন রোজা অর্থহীন। আবার ঈমান, নামাজ, রোজা নেই অথচ হজ্ব করবে, সেটাও হবে না। আবার রুজি হালাল নয়- রোজা, নামাজ, হজ্ব, যাকাত সবকিছু করলেও তা ইসলাম সমর্থন করেনা। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ মিলে একটা দালান বা স্থাপত্য। তাই রমজানে গুনাহ মাফের সুযোগ নিতে হলে সবগুলো জানালা বন্ধ করে দিয়ে পাঁচ স্তম্ভ ঠিক করে ফেলতে হবে।
রমজানে যে ব্যক্তি দৃঢ়তার সঙ্গে পরিশ্রম করে, ধৈর্যের মাধ্যমে কুরআন তেলাওয়াত ও ইবাদত বন্দেগি করে থাকে, যে কোন কাজে সহনশীল থাকে সে তো মুমিন, সেই তো বিজয়ী। সফলতা তারই প্রাপ্য।
এনএস/