বেনাপোল বন্দর দিয়ে ফের আমদানি বন্ধ
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ০৮:০৭ পিএম, ৪ মে ২০২০ সোমবার
বেনাপোল কাস্টমস হাউজ ও বন্দরে সীমিত আকারে কার্যক্রম চললেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে ২দিন পণ্য রফতানি করলেও সেটা আবার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতের কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে লকডাউনের মধ্যেই পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে রফতানির কাজ শুরু করলেও ২দিন চলার পর আবারো বন্ধ হয়ে গেছে।
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বন্ধ করার জন্য রবিবার (৩ মে) সকালে ভারতের বনগাঁর ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়তের পেট্রাপোল সীমান্ত লাগোয়া জয়ন্তীপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাসহ এই স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের শতাধিক শ্রমিক এদিন যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তাঁদের দাবি সীমান্তের ওপারে বেনাপোলেও বহু মানুষ করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে সংবাদ মাধ্যমে। এই অবস্থায় ওপার বাংলার শ্রমিকরা এপার বাংলার কাজে যুক্ত থাকলে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াবে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতেও। তাই রফতানি হোক বা আমদানি কাজ শুরু হলে করোনা সংক্রমণ কোন ভাবেই ঠেকানো যাবে না। ফলে এলাকাবাসীদের স্বার্থে বন্ধ রাখতে হবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য। এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ তুলে নেন গ্রামবাসীরা। আর এ কারণে আবারো বন্ধ হয়ে যায় এ পথে আমদানি কার্যক্রম।
করোনা ভাইরাসের কারণে ভারত সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় ২২ মার্চ বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। একটানা ৩৯ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৩০ এপ্রিল দুপুর ৩টার দিকে বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হয়। ৩০ এপ্রিল ২ ট্রাক ও ২ মে ১৩ ট্রাক মোট ১৫ ট্রাক ভূট্রা, পাট, মেছতার বীজ ও পান আমদানি করা হয়। পেট্রাপোল বন্দরের সেন্ট্রাল পার্কিং থেকে পণ্য বোঝাই ভারতীয় ট্রাক নোম্যান্সল্যান্ডে আসলে সেখান থেকে বাংলাদেশী ট্রাকে পণ্য আনলোড করে বাংলাদেশে আনা হয়। পণ্য বোঝাই ট্রাক নোম্যান্সল্যান্ডে আসলে সেখানে উভয় দেশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে, জীবাণুনাশক স্প্রে ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে পণ্য লোড-আনলোড করা হয়।
আমদানি-রফতানির সাথে জড়িত কয়েকজন জানান, বনগাঁ উত্তরের সাবেক এমএলএ গোপাল শেঠ ও বনগাঁ পৌর সভার মেয়র শংকর আঢ্য ডাকু বাংলাদেশে পণ্য রফতানিতে বিরোধিতা করে বনগাঁর পৌরসভার কালিতলা পার্কিং থেকে কোন পণ্য বোঝাই ট্রাক ছাড়েনি। এসব ট্রাক সেন্ট্রাল পার্কিংএ থাকার কথা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে কালিতলা পার্কিংএ রাখা হচ্ছে। তারা সাধারণ জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আন্দোলন শুরু করে দেয়। কালিতলা পার্কিং এ বর্তমানে ১৯৮৩টি বিভিন্ন ধরণের ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে।
এসব ট্রাক থেকে বনগাঁ পৌরসভা প্রতিদিন ছোট গাড়ি ৫০ টাকা, ৬ চাকা ৮০ টাকা, ১০ চাকা ১২০ টাকা ও ট্রেলার ১৬০ টাকা হারে পার্কিং চার্জ আদায় করে থাকে। ওখান থেকে পণ্যবাহী ট্রাক গুলো পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পাকিংএ এসে পড়লে তাদের আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন বনগাঁর একটি সিন্ডিকেট জোরপূর্বক পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পাকিংএ না পাঠিয়ে নিজেদের তৈরি কালিতলা পার্কিংএ ট্রাকগুলো ঢুকাতে বাধ্য করে। এ কারণে ভারতীয় এক একটি ট্রাক পেট্রাপোল পার্কিংএ আসতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় নেয়। বলা হয় ট্রাকজটে কারণে অথবা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ মাল নিচ্ছে না বা বেনাপোল বন্দরে জায়গা নেই এসব অজুহাতে তারা এ কাজটি করে আসছে। মাঝে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের হস্তক্ষেপে সরাসরি পণ্যবাহী ট্রাক কোন বেসবরকারি পার্কিংএ না থেকে সরাসরি পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিংএ চলে আসতো এবং দ্রুত পণ্য বাংলাদেশে রফতানি হতো।
ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়তের প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, বনগাঁ শহরসহ ছয়ঘরিয়ার সমস্ত গ্রাম এখনও পর্যন্ত করোনা মুক্ত রয়েছে। স্থানীয় মানুষের দাবি তাঁরা কোন ভাবেই কোন অবস্থাতেই চাইছেন না সীমান্ত পেরিয়ে করোনা সংক্রমণের আঘাতে তছনছ হোক মানুষের জীবন। তাঁরা রুজি-রুটি হারিয়েছেন ঠিকই তবে মানুষের জীবন বাঁচাতে বদ্ধপরিকর। তাঁদের কথায় সরকারের নির্দেশ যেমন আছে থাক আপাতত এভাবেই কোন অবস্থাতেই সীমান্তে বর্হি বাণিজ্যের কাজ চালু রেখে মানুষের জীবন বিপন্ন করা যাবে না। এলাকার মানুষের কথা মহকুমাশাসককে জানানো হয়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশন সাধারন সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, সরকারি ও কাস্টমসের পক্ষ থেকে আমদানি-রফতানি বন্ধ করা হয়নি। তবে, রফতানি বানিজ্য চালু থাকলে ট্রাক ড্রাইভারদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে, এমন অজুহাতে তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন নেতা জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আন্দোলন করে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ম্যানেজার শুভজিত মন্ডল বলেন, সরকারী ভাবে পেট্রাপোল বন্দর চালু আছে। কিন্তু কিছু সাধারণ জনগণ করোনা সংক্রমণের আশংকায় বনগাঁয় আন্দোলন করায় পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খবর রাখছি পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার কাজ হবে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ভারত থেকে ২দিনে ১৫ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। নোম্যান্সল্যান্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিবিধান মেনেই লোড-আনলোড করা হয়েছে। ভারতে জনগণের আন্দোলনের জন্য রোববার থেকে কোন পণ্য আমদানি হয়নি। পেট্রাপোল বন্দর পণ্য দিলে বেনাপোল বন্দরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দর ঘুরে দেখা গেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে দুরত্ব বজায় রেখে কাজ করে চলেছেন। কাজের চাপ বেশি না থাকলেও তারা অফিসে উপস্থিত রয়েছেন। বাইরে থেকে যারা কাস্টমস ও বন্দরে কাজ করতে যাচ্ছেন তারাও স্বাস্থ বিধি মেনে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লোভস পড়ে কাজ করছেন।
বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন চৌধুরী জানান, বেনাপোল কাষ্টমস হাউসের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে অফিসাররা কাজ করছেন। সিএন্ডএফ প্রতিনিধিদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, পিপিই, মাস্ক, গ্লোভস পরে ফাইল নিয়ে হাউসে প্রবেশ করছেন। আর যারা পিপিই পরে আসছেনা তাদের ফাইল গেট থেকে নিয়ে শুল্কায়ন করে দেয়া হচ্ছে। এসেসমেন্ট হওয়ার পর চালান চাইলে সেটা গেটে পৌছে দেয়া হচ্ছে।
আরকে//