ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ঘুমের মধ্যেও তামিম-তামিম চিৎকার করে ওঠেন মাশরাফি!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০১ পিএম, ৬ মে ২০২০ বুধবার

বিদায়ী ম্যাচে মাশরাফিকে কাঁধে তুলে নেন তামিম।

বিদায়ী ম্যাচে মাশরাফিকে কাঁধে তুলে নেন তামিম।

সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে বেশ হাসি-ঠাট্টাময় আর আবেগঘন কিছু অজানা গল্প তুলে ধরেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। গত ৪ মার্চ দিবাগত রাতের এ লাইভ আড্ডার শুরুতেই মাশরাফিকে প্রযুক্তির দিক থেকে বেশি এক্সপার্ট বলে একটু খোঁচা মারেন বর্তমান অধিনায়ক। 

যে কারণে সাড়ে ১০টায় লাইভে আসার কথা থাকলেও তাদের আধা ঘণ্টার মতো দেরি হয়েছে বলে মাফ চেয়ে নেন তামিম ইকবাল খান। তার অভিযোগ স্বীকারও করে নেন মাশরাফি। জানিয়ে দেন, হ্যা এতটাই এক্সপার্ট যে, দু'দুটো মোবাইলে চেষ্টা করেও তিনি ক্যামেরা চালু করতে পারেননি। তাই আরেকটা মোবাইল ধার করে এনে লাইভে আসতে পেরেছেন।

সাবেক ও বর্তমান দুই অধিনায়কের ওই লাইভ আড্ডায় উঠে আসে ক্রিকেটের নানান দিক। দু'জন বেশ মজাও করেন। আবার আবেগেও ডুবে যান। মাশরাফি ব্রিটিশ আমলের ফোন ব্যবহার করেন বলেও ঠাট্টা করেন তামিম। তবে মাশরাফি তার আইফোনটা দেখিয়ে দেন যে না এটা কোন ব্রিটিশ আমলের ফোন নয়। 

এরপর মাঞ্জারুল ইসলাম রানাকে স্মরণ করে আবেগ ও নস্টালজিয়ায় ডুবে যান বর্তমান ও সাবেক এই দুই অধিনায়ক। রানার মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে সেদিন বিশ্বকাপের ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। যে ম্যাচে তামিম ফিফটি করেছিলেন। 

এসময় তামিম সাবেক অধিনায়ককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভাই জানি না, আপনার সঙ্গে বেয়াদবি করছি কি-না। কিন্তু আপনি যা বলেন, তাই খেটে যায়। আপনি একবার বাথরুমের দরজায় লিখে দিয়েছিলেন, আমি ছয় মাস পরে সেঞ্চুরি পাবো। তামিমের কথা শেষ না হতেই মাশরাফি বলেন, হ্যা সেঞ্চুরি তো পাইছিস ছয় মাস তিন দিন পরে। 

পরক্ষণেই তামিম প্রশ্ন করেন, ভাই আমার সঙ্গে এমন কেন করেন। মাশরাফি এবার হেসে দেন, 'তোর সঙ্গে মতের অমিল আমার হইছে ঠিকই কিন্তু তারপরও আমরা ভালো বন্ধু। যাই বলি, মন থেকে বলি। দলের জন্য হলেও আমি সবসময় চেয়েছি তুই অনেক রান কর। আর ওগুলো ফাজলামি। তোর সঙ্গে হয়ে যায়। তবে এরপরে তুই দেখিস, অনেক রান করবি।' কারণটাও জানিয়ে দেন মাশরাফি, নেতৃত্ব তামিমকে আরও ভালো ব্যাটসম্যান করে তুলবে।

তামিম এবার অভিযোগ করেন, ভাই আপনি যে আমার কাছ থেকে ব্লাকমেইল করে ব্যাটগুলো নেন, বলেন যে ব্যাট দিলেই সেঞ্চুরি করবি, রান করবি। এর কারণ কী? শেষ সিরিজেও আমি আপনাকে ব্যাট দেওয়ার পর সেঞ্চুরি পেয়েছি। কারণটা কী ভাই? মাশরাফি উত্তরে বলেন, 'তুই যে ব্যাট দিয়ে খেলিস, একটা ব্যাটের দাম ৫০ হাজার টাকা। সৌম্য-লিটনদের ব্যাটের দামও ওইরকম। আমি ভাবি, এতো টাকা দিয়ে ব্যাট কেনার দরকারটা কী। আর তামিম আমি তোর ব্যাট দিয়ে ছাড়া খেলতে পারি না। আমি তোর ব্যাটের প্রতি সিক (অসুস্থ) হয়ে গেছি।' এরপরেই দুজনে হেসে ওঠেন একচোট।

এরপর মাশরাফির শেষ নেতৃত্বের ম্যাচটির কথা স্মরণ করে তামিম বলেন, 'ভাই আপনাকে আমিই কাঁধে নিতে চেয়েছিলাম এবং আমি গর্বিত যে আমি তা পেরেছি। কিন্তু সেদিন কাঁধে নিয়েই আমি আর দাঁড়াতে পারছিলাম না। চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম, এতগুলো মানুষ, ক্যামেরার সামনে লজ্জায় পড়ে যায় কি-না। অবশ্য দাঁড়ানোর পরে সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তবে আমি আপনার ভার নিতে পেরে গর্বিত।' জবাবে মাশরাফি তামিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তোকে নামিয়ে দেয়ার জন্য বলেছিলাম। কাঁধে নিয়ে পড়ে গিয়ে আবার তোর ইনজুরি না হয়, এইজন্য। কিন্তু তুই তো পরক্ষণেই উঠিয়ে নিলি। থ্যাংক ইউ সো মাচ তামিম।

এরপরই একটা মজার ঘটনা উল্লেখ করে ম্যাশকে খোঁচা দিয়ে তামিম বলেন, এটা মজার কথা না ভাই, একশ' ভাগ সত্যি। ভাবিও আমাকে বলেছে, আপনি না-কী ঘুমের মধ্যে তামিম-তামিম করে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি আপনার বলে এতো পিটাইছি যে, শেষে ভাবলাম, দু'একবার আপনার বলে আউট হয়ে যায়, সেজন্য দু' একবার মনে হয় আউট করতে পারছেন।

মাশরাফিও তামিমের এ খোঁচার জবাবটা দেন মজা করেই, 'দেখ, তোর ক্যারিয়ার দাঁড় করানোর পেছনে আমার অবদান সবচেয়ে বড়। যখন দেখলাম তুই এমনি রান করিস না, তোকে তো রান করার সুযোগ দিতে হবে। তোর সে সামর্থ আছে। তুই সৈয়দ রাসেলের বলেও রান করিস না, আউট হয়ে যাস। যে কি-না ১২০ গতিতে বল করে। সেজন্য তোকে সুযোগ দিলাম। কিন্তু তুই মারতে মারতে এমন পর্যায়ে গেলি, সেজন্য তোকে শেষে বলে-কয়ে তিনবার আউট করলাম। বুঝিয়ে দিলাম, বাচ্চা তুমি বাচ্চাই থাকো।' 

তামিম এসময় বলেন, সামনের বিপিএলে যদি দু'জন আলাদা দলে খেলেন তবে মাশরাফিকে দেখিয়ে দেবেন। মাশরাফিও তামিমের এ চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করেন। এমনকি আইপিলের মতো করে মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদের মতো বিপিএলের আইকন খেলোয়াড়রা যেন নিজেদের পছন্দের দলে অন্তত তিনটি বছর একটানা খেলতে পারেন সে বিষয়েও একমত প্রকাশ করেন এই দুই অধিনায়ক। 

উল্লেখ্য, এর আগে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গেও লাইভে আড্ডা দেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আগামী ৮ মে রাত ১০টায় রুবেল হোসাইন ও তাসকিন আহমেদকে নিয়ে লাইভে হাজির হবেন বলেও জানান তামিম।

এনএস/