মানিকগঞ্জে থেমে নেই অসহায়-দুস্থদের সেহরি বিতরণ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:২৬ পিএম, ৬ মে ২০২০ বুধবার
গভীররাতে দুঃস্থ-অসহায়দের মাঝে সেহরি বিতরণ করছেন সুভাষ সরকার। -ছবি একুশে টিভি।
রাত তখন তিনটা; ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধারঘেঁষে লম্বা লাইন। নেই কোনো হৈ-হুল্লোর। একজনের থেকে আরেকজনের দূরত্বও যথাযথ। চলছে সেহরি বিতরণ। সাধারণ দরিদ্র, কর্মহীন, বিধবা আর আশপাশের দুস্থরা এসেছেন সেহরি নিতে। কর্মযজ্ঞের আয়োজক মানিকগঞ্জের পৌর কাউন্সিলর সুভাষ সরকার। যিনি জেলা আওয়ামী লীগেরও নির্বাহী সদস্য।
সুভাষ সরকারের এই সেহরি বিতরণ কর্মসূচি বিগত বছরগুলোতেও চলেছে। কিন্তু তা ছিল স্বল্প পরিসরে। এবার করোনার কারণে ভূক্তভোগীদের তালিকা হয়েছে দীর্ঘতর। যে কারণে প্রতিরাতেই সুভাষ সরকার তার দলবল নিয়ে হাজির হচ্ছেন মানিকগঞ্জের ট্রাফিক আইল্যান্ড সংলগ্ন মহাসড়কে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে কল-কারখানা। রয়েছে অনেকগুলো পোষাকশিল্পও। লকডাউনের পর শ্রমিকদের কেউ কেউ গ্রামে ফিরলেও বেশিরভাগই থেকে গেছেন। কিন্তু কারখানা বন্ধের কারণে কর্মজীবীদের বড় একটি অংশই বেকার। শ্রমজীবীদের একটি অংশ দিনের আয়ে দিন খাওয়া মানুষ। করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি খাবার কষ্টে পড়েছেন এই শ্রেণির পেশাজীবীরা। তাঁদের বিষয়টি চিন্তা করেই কাউন্সিলর সুভাষ সরকার প্রতিরাতে ছুটে যাচ্ছেন দুস্থদের কাছে।
সুভাষ সরকার বলেন, যাদেরকে আমরা সেহরি খাওয়াচ্ছি তাদের বেশিরভাগ আমার ওয়ার্ডের নিয়মিত বাসিন্দা নন। ভোটারও নন। কিন্তু করোনা মহামারির এই দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরে নির্দেশে শিল্প এলাকায় কর্মহীনদের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমার সঙ্গে আছেন মানিকগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্টজনেরা। আছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সবাইকে নিয়ে আমি গড়ে তুলেছি সেহরি টিম। প্রতিরাতে আমরা রান্না খাবার নিয়ে ছুটে যাচ্ছি দুস্থদের কাছে।
গভীররাতে দুঃস্থ-অসহায়দের মাঝে সেহরি বিতরণ করছেন সুভাষ সরকার। -ছবি একুশে টিভি।
করোনার শুরু থেকেই সুভাষ সরকার নিজের ৬ নম্বর ওয়ার্ডবাসীকে দিয়েছেন মাস্ক, পিপিই, সাবানসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। লকডাউন ঘোষণার পর এলাকায় যাতে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি না পায় তার জন্য করেছেন বিশেষ টহল টিম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে তিনি ও তার লোকজন নিরাপত্তাবিধান ও জনগণকে সচেতনতার কাজও করে যাচ্ছেন। এলাকার গরিব ভোটারদের দিচ্ছেন সরকার থেকে প্রাপ্ত সব ধরণের সাহায্য। সরকারি সাহায্য প্রাপ্তির ব্যাপারে যাতে কোনো ধরণের অনিয়ম না হয় তার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তৈরী করেছেন হত-দরিদ্রদের তালিকা।
জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক রাজা বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুভাষ সরকারের এই মহতী উদ্যোগকে নতুন করে প্রশংসা করবার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ অনেক আগে থেকেই তিনি মানবিক নেতা হিসেবে স্বীকৃত। সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর আবেগ অন্যদের জন্যও শিক্ষণীয়।
নারী কাউন্সিলর সাবিহা হাবিব বলেন, একজন নির্লোভ মানুষ সুভাষ সরকার। অনেকে কাউন্সিলর হয়ে জনপ্রিয় হয়। আর তিনি জনপ্রিয়তার কারণে কাউন্সিলর হয়েছেন।
গভীররাতে দুঃস্থ-অসহায়দের মাঝে সেহরি বিতরণ করছেন সুভাষ সরকার ও তার সঙ্গীরা। -ছবি একুশে টিভি।
সেহরি কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পেরে গর্ববোধ করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব সাহা, কৃষকলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান নজরুল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কাজী ফারুক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদিকুল ইসলাম, যুবলীগের সৌমিত্র সরকার মনা, সুবল সাহা, আল রাফিসহ অন্যরা।
এই সেহরি কার্যক্রম চাঁদ রাতের আগ পর্যন্ত চলবে বলে জানান সুভাষ সরকার। একইসঙ্গে নিম্ন মধ্যবিত্ত যাঁরা সাহায্যের জন্য কোথাও যেতে পারেন না কিংবা লজ্জায় দাঁড়ানোও সম্ভব হয়ে ওঠে না কোনো লাইনে, তাদের কাছেও গোপনে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে সুভাষ সরকারের দল।
ইতোমধ্যে মানিকগঞ্জ পৌরসভার শহীদ রফিক সড়ক, বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা, নগর ভবন সড়ক, শান্তনু রায় স্মরণি, ভূমি অফিস লেন, কালীবাড়ি সড়ক, চাঁনমিয়া সড়ক, জামে মসজিদ লেন ও পশ্চিম দাশড়া এলাকার ভবঘুরে, ভিক্ষুক ও কর্মহীনদের তালিকা করে তাদের মাঝে সপ্তাহান্তে ত্রাণ বিতরণ করেছেন সুভাষ সরকার।
এনএস/