ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

রাজশাহীতে নষ্ট হচ্ছে কিট

রাজশাহী অফিস

প্রকাশিত : ০৭:৩৪ পিএম, ৬ মে ২০২০ বুধবার

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) করোনা ল্যাবে মঙ্গলবার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৮৮ জনের। দুই দফায় ৯৪টি করে এই নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৮৮ নমুনার মধ্যে ফলাফল এসেছে ১৭০টির। বাকি ১৮টি নমুনা বাতিল হয়েছে। সেগুলোর নেগেটিভি বা পজেটিভ কোনই ফলাফল আসেনি। 

এর আগের দিন সোমবার এক শিফটে পরীক্ষা করা হয় ৯৪টি। বাতিল হয়েছে ১৪টি। এর আগের দিন গত রোববার ১৮৮ নমুনার মধ্যে বাতিল হয়েছে ৪২টি। সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ না করার কারণে প্রতিদিন এ ভাবে নমুনা বাতিল হচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে কিট বলে জানিয়েছেন ল্যাব কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, রাজশাহীতে মাঠপর্যায়ে অপেশাদার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফলে অনেক নমুনা বাতিল হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে নমুনা সংগ্রহে ক্রুটির ফলাফল আসছে না। আর যাদের নমুনা নেয়া হচ্ছে তাদের নাম-ঠিকানা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে না এমন নমুনা আসছে ল্যাবে। ফলে ল্যাব চালুর পর এ পর্যন্ত নষ্ট হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক কিট। 

করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে বা হটলাইনে যেসব রোগী যোগাযোগ করছেন তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের পাঁচ জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গড়ে দিনে প্রায় দুইশ নমুনা সংগ্রহের পর সেগুলো পরীক্ষার জন্য আনা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে। এই জেলাগুলো হলো- রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করা না হলে পজেটিভ রোগীর নেগেটিভ ফলাফল আসার আশঙ্কা রয়েছে। আবার পজেটিভ বা নেগেটিভ কোন ফলাফল আসবে না। মাঠপযার্য়ে যেসব মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কাজ করছেন তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেকে সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে প্রতিদিন গড়ে ১৫টিরও বেশি কিট নষ্ট হচ্ছে।

রামেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. বুলবুল হাসান বলেন, জরুরি ভিত্তিতে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ ক্রাইসিস অবস্থা মোকাবিলার জন্য তাদের মাঠে নামানো হয়েছে। আমি মনে করি সঠিক যে নমুনাটা আসার কথা সেটা আসছে না। 

তিনি বলেন, এ অবস্থায় শঙ্কার বিষয় হলো নমুনা সঠিকভাবে সংগ্রহ করা না হলে করোনা পজেটিভ রোগীর ফলাফল আসতে পারে নেগেটিভ। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা পুরো কমিউনিটিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই চিকিৎসক।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগীয় প্রধান ডা. সাবেরা গুল নাহার বলেন, ঠিকমত নমুনা সংগ্রহ করে পাঠায় না। আবার টিউবের গায়ে নাম ঠিকানা লেখা থাকে না। কাগজে কোনো ফোন নম্বর নেই এমন অনেক নমুনা বাতিল করা হচ্ছে; সেই বাতিলে মধ্যে যদি কেউ পজিটিভ থাকে, তাকে তো শনাক্ত করা হলো না, সেইক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি এটা ছড়াতেই থাকবে। যাদের নমুনা বাতিল হচ্ছে তাদের তালিকা করে পুনরায় নমুনা সংগ্রহের জন্য বলা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

নমুনা সংগ্রহে ক্রতির করা স্বীকার করে জনবল সংকটের দোহাই দেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। তারা জানান, একদিনে সর্বচ্চো সাড়ে ছয়শ এর উপরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেইটা তো দুই থেকে তিন জনে নেয়া সম্ভব না। তারা ১২ ঘণ্টার শিফটে কাজ করছেন। তাছাড়া প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। তাদের ঠিকমত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। 

বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ এনামুল হক। তিনি বলেন, একটা নমুনা সংগ্রহ করতে গেলে যেহেতু সরকারের অনেক টাকা খরচ হয় সেহেতু তারা যেন একটু যতœবান এ ক্ষেত্রে।

সংগৃহীত নমুনাগুলো পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে পরীক্ষা না করলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরেকটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আজ-কালের মধ্যে সেটি চালু হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

আরকে/