ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

দোজাহানের অফুরন্ত কল্যাণের সুখবর দিয়েছে ‘সূরা কাউসার’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:২৮ পিএম, ৭ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:০৭ পিএম, ৭ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার

মাহে রমজানে আমরা বেশি বেশি কোরআন পাঠ করব। চেষ্টা করব অর্থ বুঝে তবেই পাঠ করার। সব সময় কোরআনের সঙ্গে থাকব। কারণ এ মাসেই আল্লাহ মহা পবিত্র আল কোরআন নাজিল করেছেন। এই কোরআন মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক। 

আজ আমরা পবিত্র কোরআন শরীফের ১০৮ নম্বর সূরা ‘সূরা কাওসার’ পাঠ করব। সেই সঙ্গে জেনেনিব এর ফজিলত সম্পর্কে।

১০৮. সূরা কাওসার
পারা ৩০, আয়াত ৩, রুকু ১ (মাক্কী)

বাংলা উচ্চারণ
ইন্নাআতাইনা-কাল কাওছার। ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার। ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।

মর্মবাণী
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
(হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে কাওসার (অনন্ত কল্যাণ) দান করেছি।  ২-৩. অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্যেই নামাজ পড়ো ও কোরবানি দাও। নিশ্চয়ই তোমার প্রতি যে-ই বিদ্বেষ পোষণ করবে, বিলুপ্ত হবে ওর বংশধারা।

ফজিলত ও গুরুত্ব
সূরা কাউসারের বিভিন্ন অর্থ বর্ণিত হয়েছে। তবে বিভিন্ন অর্থের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায় এমন এক অর্থ ‘প্রভূত কল্যাণ’ যা হজরত ইবনে কাসীর (র.) প্রাধান্য দিয়েছেন। এ সূরাকে সূরা নাহারও বলা হয়। 

এই সূরার রুকুর সংখ্যা ১, এর পূর্ববর্তী সূরা আল মাউন এবং পরবর্তী সূরা হচ্ছে সূরা কাফিরুন। সূরা কাউসার হচ্ছে দোজাহানের অফুরন্ত কল্যাণের সুখবর! এই সূরা হতে জানা যায় হাউজে কাউসার সম্পর্কে, যা কিয়ামতের মাঠে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে প্রদান করা হবে।

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন মসজিদে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন। হঠাৎ মহানবীর (সা.) মাঝে তন্দ্রা অথবা একধরনের অচেতনতার ভাব দৃশ্যমান হলো। এরপর নবীজি (সা.) হাসিমুখে মস্তক উত্তোলন করলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে’। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহসহ সূরা কাউসার পাঠ করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জান, কাউসার কী?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন’। তিনি বললেন, ‘এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ আছে এবং এই হাউজে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকাসম হবে। তখন কতক লোককে ফেরেশতাগণ হাউজ থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলবো, পরওয়ারদেগার, সে তো আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার পরে সে কী নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল?’ (হাদিসে সহিহ বোখারি, মুসলিম শরিফ, আবু দাউদ, নাসায়ী)

তৎকালীন আরবে যাদের পুত্র সন্তান মারা যেতো তাদের নির্বংশ বলেন অপবাদ দেয়া হতো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের পুত্র কাসেম অথবা ইব্রাহিম যখন মারা গেলেন, তখন আরবের কাফেররা নবিজী (সা.)-কে উপহাস করা শুরু করলো নির্বংশ। আর এই প্রেক্ষাপটে সূরা আল কাউসার অবতীর্ণ হয়। এই সূরায় আল্লাহর পেয়ারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের মর্যাদা ও শান উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব কাফের নবীজি (সা.)-কে নির্বংশ বলে দোষারোপ করত,  তাদেরকে নির্বংশ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনে এই সূরার মাধ্যমে। 

মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হোসাইন থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায়, আরবে তাকে ‘আব্‌তার্‌’ নির্বংশ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) এর পুত্র কাসেম অথবা ইব্রাহিম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন কাফেররা তাঁকে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগল। ওদের মধ্যে ‘আস ইবনে ওয়ায়েলের’ নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) এর কোনো আলোচনা হলে সে বলত: আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোনো চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চারণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়। (ইবনে কাসীর, মাযহারী)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কাউসার’ সেই অজস্র কল্যাণ যা আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.)-কে দান করেছেন। কাউসার জান্নাতের একটি প্রস্রবণের নাম। সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে যে, ‘এটা একটি নহর যা বেহেশতে নবী (সা.)-কে দান করা হবে।’

 

এসএ/