পদ্মাসেতু রেল-সংযোগ প্রকল্পে বিক্ষোভ-গুলি, সিআরইসি’র বিজ্ঞপ্তি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:১৭ পিএম, ৭ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার
পদ্মাসেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের চলমান দৃশ্য।
পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের শ্রমিকদের বিক্ষোভে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীরা হামলা ও গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওভারটাইমের মজুরি ও বোনাসের দাবিতে বুধবার (৬ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সিতারামপুরের রেলওয়ের প্রকল্প এলাকার এ ঘটনায় ছয় জন পায়ে গুলিবিদ্ধসহ ৯ শ্রমিক আহত হন।
পরে ওই রাতেই তিন সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে বৃহস্পতিবার (৭ মে) দুপুরে জানান পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) প্রকৌশল গোলাম ফখরুদ্দিন এ চৌধুরী।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৭ মে) সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। গণমাধ্যমে পাঠানো সে বিজ্ঞপ্তি পাঠকদের অবগতির জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘করোনা ভাইরাসের কারণে বিদ্যমান প্রতিকূল সময়েও পদ্মা সেতু রেল-সংযোগ প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখতে প্রকল্পের ৪ হাজার ৭শ’ ৪২ জন স্থানীয় শ্রমিকের সুরক্ষা ও সুস্থতায় নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)।
এর উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় শ্রমিকদের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে তাদের সুস্থতা ও সুরক্ষায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ। গত ৬ মে থেকে প্রকল্পের ১শ’ ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে এমন ৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আইসোলেশনে আছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। উল্লেখ্য, এ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যয়ভার বহন করছে সিআরইসি। এর আগে শ্রমিকদের নিজেদেরই থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করতে হতো। এছাড়াও, যেসব শ্রমিক নিজ থেকেই এ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে চান তাদের জন্য অতিরিক্ত মজুরিও বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির গৃহীত এসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই শ্রমিকদের কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি থেকে দূরে রেখে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। শুরুর দিকে শ্রমিকরা এ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে, পাশের গ্রামে থাকার চেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাকে নিরাপদ চিন্তা করে তারা দ্রুতই আশ্রয়কেন্দ্রে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রমিকদের বেশিরভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসে।
আরও উল্লেখ্য, মহামারির সঙ্কটে গৃহীত এসব পদক্ষেপের কারণে অতিরিক্ত অনেক ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে সিআরইসিকে। যদিও, সিআরইসিকে গত ২৩ মাসে এ প্রকল্পের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকল্প অন্তর্বর্তীকালীন কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি।
দুর্ভাগ্যক্রমে, গত ৬ মে আনুমানিক রাত ৯টার দিকে মাওয়াতে সিআরইসি’র এক আশ্রয়কেন্দ্রে শ্রমিকদের একটি দল জড়ো হয়ে অভিযোগ করে, বরাদ্দকৃত অস্থায়ী মজুরি তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। এ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫শ’ শ্রমিক অবস্থান করছিলেন। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন অসন্তুষ্ট কিছু শ্রমিক, যাদের আইসোলেশনের নিয়ম ভঙ্গ করে পাশের গ্রামে নিজদের বাড়িতে যাওয়ার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে, বিষয়টি সুরাহায়, বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাংলাদেশি নিরাপত্তাকর্মীরা শ্রমিকদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিক অসন্তোষের মুখে, তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে একজন নিরাপত্তাকর্মী শটগান দিয়ে ফাঁকা গুলি চালায়। এর ফলে এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৮ শ্রমিক আহত হয় এবং তাদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ দুর্ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত এবং আহত শ্রমিক দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
বর্তমানে, মাওয়াতে ওই আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং একইসাথে বাকি ৮৫টি ক্যাম্পেও স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয় আইন ও বিধি মেনে চলার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর সিআরইসি। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সমাজের প্রতিও অঙ্গীকারবদ্ধ। একইসাথে, আমাদের কর্মীদের বৈধ অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়িয়ে চলার স্বার্থে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারকে আমরা অনুরোধ জানাই।’
এনএস/