ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

আদা খাবেন না কখন, আদা সংরক্ষণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৪৬ এএম, ৮ মে ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:৩১ এএম, ৮ মে ২০২০ শুক্রবার

আদা উপকারী ভেষজ খাবার হিসেবেই আমরা জানি। মসলা হিসেবে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে আদা ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ঠাণ্ডা লাগা, ব্যথা কমানো, হজমের সমস্যাও দূর করে আদা। আদার প্রভূত গুণ নিয়ে চিকিত্সক, ডায়টিশিয়ান, আয়ুর্বেদরা তাই বার বার বলেছেন। তবে বহুগুণের এ আদা কখনও কখনও শরীরের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। তাই জেনে নেওয়া জরুরি কোন কোন ক্ষেত্রে আদা ভুলেও খাওয়া যাবে না।

গর্ভাবস্থায়
আদার মধ্যে এমন অনেক পদার্থ থাকে যা পেশীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও হজমে সাহায্য করে। গর্ভকালীন অবস্থায় বেশি আদা খেলে তা পেশীর সংকোচন ঘটিয়ে প্রিটার্ম লেবরের সম্ভাবনা থাকে। তাই অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে আদা খান।

রক্তজনিত রোগ
আদা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। ওবেসিটি বা ডায়াবেটিসের সমস্যায় তাই আদা খুবই উপকারি। আবার হিমোফিলিয়ার সমস্যা থাকলে আদার এই গুণ নেগেটিভ প্রভাব ফেলতে পারে। হিমোফিলিয়া বংশগত ডিজঅর্ডার। হিমোফিলিয়ার ওষুধের সঙ্গে আদা খেলে তা ওষুধের প্রভাবে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

কম ওজন
যদি আপনি ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন তা হলে আদাযুক্ত খাবার বা আদা চা খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। যা পাকস্থলীর পিএইচ মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে পৌষ্টিকতন্ত্রকে উত্তেজিত করে তোলে।

বিশেষ ওষুধ সেবনের সময়
হাইপারটেনসন বা ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে আদা খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভাল। আদা রক্তকে পাতলা করে রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। তাই সাধারণভাবে আদা খাওয়া উপকারী হলেও অ্যান্টি-কোয়াগুলান্ট, বিটা-ব্লকারস বা ইনসুলিনের মতো ওষুধের প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে আদা।

আদা সংরক্ষণ করবেন কিভাবে

কথা আছে-বইয়ের বাইরের আবরণ দেখে তার ভেতরটা যাচাই করতে নেই। রান্নার উপকরণের ক্ষেত্রে এ কথাটা প্রযোজ্য আদার ক্ষেত্রে। বাইরের আবরণ দেখে আদার গুণাগুণ বিচার করা সম্ভব নয়। কিন্তু এর স্বাস্থ্যকর উপকারিতার শেষ নেই। গোটা বিশ্বেই তাই রান্নার অন্যতম মসলা বা উপকরণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে আদা। বাংলাদেশে এটি মসলা হিসেবে খুবই প্রয়োজনীয়।

শুধু মসলা হিসেবে নয়, অসুস্থায়ও অনেক বেশি উপকারি মসলা জাতীয় খাদ্যটি। ঠাণ্ডা-সর্দিতে সবচেয়ে কাজে দেয় এই আদা। শীতে উষ্ণতা দেয়। মাছ, মাংস বা যেকোনো তরকারিতে প্রধান উপকরণের একটি হিসাবে বহুকাল ধরে জনপ্রিয় আদা।

কাজেই খাদ্যপণ্য হিসেবে আদা টাটকা হওয়াই ভালো। সর্বোচ্চ ফ্লেভার পাওয়া যাবে। এখানে আদা কেনা থেকে শুরু করে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পচনশীল মসলা জাতীয় ফসল আদায় প্রচুর পানি থাকার কারণে দীর্ঘদিন তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। সাধারণত আদা সংগ্রহের পর কৃষকরা মাটির গর্তে তা সংরক্ষণ করে থাকেন।

কিন্তু এই পদ্ধতিতে অল্পদিনের মধ্যেই তাতে গাছ ও শিকড় গজায়। তখন গাছ ও শিকড় ভেঙে আদা বাজারজাত করতে হয়। কোনো কোনো সময় মাটির গর্তের আর্দ্রতার আধিক্যের কারণে আদা পচে যায়। তা ছাড়া গর্ত থেকে আদা বের করার পর অল্পদিনের মধ্যেই তা শুকিয়ে কুঁচকে যায়।

ফলে কৃষকরা বাজারে এর কাঙ্ক্ষিত দাম পান না। তবে এবার দীর্ঘদিন আদা সংরক্ষণের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

দীর্ঘ গবেষণার পর আদা সংরক্ষণে `পাউডার` পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন এই গবেষক দল।

গবেষকরা বলছেন, কোনো রকম প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যাল ছাড়াই আদার পাউডার তৈরির মাধ্যমে পচন শতভাগ রোধ করা সম্ভব। এতে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত দাম পাবেন। ফলে কৃষক পরবর্তীতে উৎপাদন ও ফলন বাড়াতে আগ্রহী হবেন।

গবেষক দলের প্রধান ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাসুদ আলম জানান, আদা সংরক্ষণে পাউডার তৈরির জন্য উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন আদা ও লবণ।

প্রথমে ত্রুটি ও রোগমুক্ত আদা সংগ্রহ করে ছাল ছড়াতে হবে। তারপর পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এবার ৩-৫ মি. মি. পুরুত্বে আদা আড়াআড়িভাবে কেটে পানির বাষ্পে ৫-১০ মিনিট সেদ্ধ করতে হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় লবণ দ্রবণে (১ লিটার পানিতে ১০-১৫ গ্রাম লবণ) কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখার পর অভিস্রবণকৃত আদা দ্রবণ থেকে তুলে নিতে হবে।

পরে আদার টুকরোগুলোকে মেকানিক্যাল ড্রায়ারের ট্রের ওপর রেখে ৫০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অথবা সোলার ড্রায়ারে ভালোভাবে শুকাতে হবে। ড্রায়ারের সুবিধা না থাকলে সূর্যের তাপে শুকানো যেতে পারে। শুকানোর পর গ্রাইন্ডিং মেশিনে গুঁড়া করে নিতে হবে।

তিনি বলেন, আদার পাউডার বিভিন্ন ধরনের বায়ু নিরোধকপাত্রে রেখে ২-৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রান্নায় ব্যবহার করা যাবে।

বিজ্ঞানীরা জানান, ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে আদা সংরক্ষণের নতুন এই পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অল্প সময়ে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।