ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

নামাজই কৃতজ্ঞতা জানানোর শ্রেষ্ঠ মাধ্যম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫২ পিএম, ৮ মে ২০২০ শুক্রবার

শুধু অন্তর বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমেই নয় বরং আনুষ্ঠানিক ইবাদত যেমন নামাজ-রোজা ও যাকাতের মাধ্যমে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এমন অনেক খোদাপ্রেমিক আছেন যারা মনে করেন স্রষ্টার স্মরণ যেহেতু সার্বক্ষণিকভাবে অন্তরে আছে তাই আনুষ্ঠানিক নামাজ পড়ার প্রয়োজন নেই। এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। নামাজই কৃতজ্ঞতা জানানোর শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

হযরত মোহাম্মদ (সা.)কে বাদ দিয়ে স্রষ্টাকে পাওয়া যাবে না। মহানবীর চেয়ে বেশি স্রষ্টার স্মরণে মগ্ন ও স্রষ্টাপ্রেমিক কেউ পৃথিবীতে আসবেন না। মহানবী (সা.) যেহেতু নামাজ বাদ দিয়ে স্রষ্টার প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেননি তাই মানবজাতির জন্য নামাজকে বাদ দিয়ে স্রষ্টার প্রিয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই। মুসলমানরা নামাজের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। নামাজ হলো বিশ্বাসীর মেরাজ। নামাজের জন্য আযানের মাধ্যমে আহবান জানিয়ে স্রষ্টা অপেক্ষায় থাকেন কখন তার বান্দা তার কাছে যাবে ও সেজদায় নত হবে। কেননা নামাজে মানুষ যখন সেজদায় যায়, তখন সে স্রষ্টার সবচেয়ে কাছাকাছি চলে আসে। নামাজের মধ্যে সেজদার মাধ্যমে মহান স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতার সর্বোত্তম প্রকাশ ঘটে।

‘সুতরাং তোমরা সন্ধ্যায় ও প্রভাতে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে। আসমান জমিনের সমস্ত প্রশংসা তারই।’ (সূরা আর রুম ৩০/১৮)

‘আর তারা যা বলে তাতেই আপনি ধৈর্যধারণ করুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে। তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন রাত্রির একাংশে এবং নামাজের পরে।’ (সূরা ক্বাফ ৫০/৩৯-৪১)

আল্লাহ তার রাসূলকে (সা.) নামাজের মাধ্যমে তার মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (সা.) সেই নির্দেশ অনুযায়ী নামাজ কায়েম করেছেন ও নামাজ কীভাবে আদায় করতে হয় দেখিয়ে দিয়েছেন। রাসূলের (সা.) পদাঙ্ক অনুসরণ করে নামাজের মাধ্যমে একাগ্রচিত্তে স্রষ্টার প্রশংসা করুন ও তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ গ্রহণ করুন। নামাজে হৃদয়কে বিগলিত করে লুটিয়ে পড়ুন স্রষ্টার সমীপে। নামাজে যত বিনয়ী হওয়া যাবে তত নিজের অসহায়ত্বকে ফুটিয়ে তোলা যাবে তত স্রষ্টার করুণা বর্ষিত হবে তার বান্দার উপর।

এছাড়া একজন মানুষ তার জীবনে যাদের কাছ থেকে উপকার অনুগ্রহ বা আশ্রয় পায় তাদের প্রতিদান না দিয়ে বা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা পূর্ণ হয় না। তবে কোন মানুষ যাতে স্রষ্টার চেয়ে পূজনীয় না হয়ে যায়, তা খেয়াল করতে হবে।

এমন অনেক মানুষ আছেন যারা পিতামাতাকে শ্রদ্ধা করতে করতে পূজনীয় পর্যায়ে নিয়ে যান ও তাদের স্রষ্টার বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেন। তা অবশ্যই গর্হিত কাজ। কেননা মূল নীতি হলো স্রষ্টার অসন্তুষ্টি করে সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।

‘আমি মানুষকে তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দু’বছরে তার দুধ ছাড়ানো হয়। সুতরাং কৃতজ্ঞ হও আমার ও পিতামাতার প্রতি। অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (সূরা লোকমান ৩১/২৪)

একজন মানুষ জন্ম থেকে বড় ও শিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ পরিক্রমায় মা-বাবা, আত্মীয় স্বজনসহ যাদের কাছ থেকে সেবা-যত্ন-উপকার গ্রহণ করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও তাদের দায়বদ্ধতা শোধ করার ভিত্তির ওপরই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতার সৌধ তৈরি হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, ‘রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।’ (আবু দাউদ)

সুহান ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যখন কাউকে কিছু দেওয়া হয় আর সে তার বিনিময় করতে সক্ষম হয় তার উচিত তার বিনিময় দেওয়া। আর যদি সে বিনিময় দেওয়ার ক্ষমতা না রাখে তখন তার উচিত দাতার প্রশংসা করা। তবে যে তার দাতার প্রশংসা করলো সে যেন তার কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে ব্যক্তি কারো অনুদানকে গোপন রাখে সে যেন না শোকরী করল।’ (আবু দাউদ)

তাই প্রতিটি মানুষের উচিত পুরো জীবনকে সামনে নিয়ে আসা এবং জীবনের চলার পথে কোন কোন সূত্র থেকে সে উপকার পেয়েছে তা অনুধাবন করা। যাদের বিনিময় দেওয়া সম্ভব তাদের উপকারের বিনিময় দিতে সচেষ্ট থাকা। যাদের উপকারের বিনিময় দেওয়া সম্ভব নয়, তাদের প্রশংসা করা ও তাদের জন্য দোয়া করা।
(শোকরিয়া, প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ)
এসএ/