হায়েনার আনাগোনা আজ দেখো চারিধার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫০ পিএম, ৮ মে ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৫৫ পিএম, ৮ মে ২০২০ শুক্রবার
দেশের বিভিন্নস্থানে চাল চুরি ও আটকের ছবি।
রাতে ফেসবুক চালাতে গিয়ে ৯৪ ব্যাচের এক বন্ধুর স্টাটাস দেখে কষ্টের মধ্যেও হাসি পেলো। জাকিয়া ইয়াসমিন নামের ওই বন্ধু তার ফেসবুক পেইজে লিখেছে- চাল চুরি হইছে, তেল চুরি হইছে এবার মসলা হলেই মজাদার খিচুড়ি। আরেকটি স্ট্যাটাস ছিলো এরকম - শুনলাম সরকার নাকি মালদ্বীপে ত্রাণ সহায়তা পাঠাইছে। তো সাথে দুই চারজন মেম্বর চেয়ারম্যান পাঠাইয়া দিলে দেশের মাল তো আবার দেশে ফেরত আইতো।
অন্যদিকে, আজকের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী- করোনা দুর্যোগে সারাদেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৪ কোটি মানুষকে ত্রাণ দিয়েছে সরকার। ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৭ মে পর্যন্ত চাল বরাদ্দ করা হয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন এবং বিতরণ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ আট হাজার মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবার ৯৪ লাখ ১ হাজার ৭৫৪টি এবং লোকসংখ্যা চার কোটি ২০ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৮ জন।
সরকারি ত্রাণ চুরি-লোপাট নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ ও প্রচারিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও। করোনায় যেমন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তেমনি ত্রাণ চোরদের সংখ্যাও বাড়ছে অস্বাভাবিকহারে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এই আশংকা করে টাঙ্গাইলে স্বামী ও সন্তানরা মিলে এক মাকে বনের মধ্যে ফেলে রেখে এসেছে। এ সংবাদটি মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাওকে নাড়া দিয়েছে। বিষয়টির অবতারনা করে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন- মানুষ কিভাবে এতো অমানবিক হতে পারে?
আসলেই মানুষ কিভাবে অমানুষ বা জানোয়ার হয় তার উত্তর মেলা কঠিন। দেশে করোনা ধীরে ধীরে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যেই দেশের ৬৪টি জেলা আক্রান্ত হয়েছে। যাতে এখন পর্যন্ত সর্বমোট আক্রান্ত ১৩ হাজার ১৩৪ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২০৬ জনে। বরিশাল জেলায়ও সর্বশেষ নতুন একজন আক্রন্ত হওয়ার পর মোট ৪৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৮ জন।
নিজ ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা তেল ও আটক ব্যক্তি।
সবাই যখন আমরা করোনা থেকে মুক্তি পেতে ঘরে বসে দয়ালু সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি, ঠিক সেই সময়ে একদল লুটেরা তথাকথিত জনপ্রতিনিধি ও অসাধু ব্যবসায়ী সরকারি ত্রাণ লুটপাটের মহোৎসবে মেতেছে। মিডিয়ার বদৌলতে যা প্রকাশ হচ্ছে তাতো রীতিমতো ভয়ংকর। না জানি গোপনে থেকে যাওয়া চিত্র আরো কতোটা ভয়ংকর। শুনেছি ৭১ সালে আমাদের দেশীয় একদল হায়েনা দেশদ্রোহীর ভূমিকায় নেমে স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেছিলো। ওরা পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মিশে এ দেশটাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। পাকিদের কাছে ওরা ছিলো রাজাকার অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবী। স্বেচ্ছায় পাকিদের গোলামি করে কিছু সুবিধা পাওয়ার লোভে ওরা আমাদের দেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছিলো।
আজ করোনার কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ অনেক জেলা লকডাউন ঘোষণা করেছেন। এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের সাহাযার্থে ত্রাণ সামগ্রী বিতরন কার্যক্রম চলছে দেশজুড়ে। এ কার্যক্রম শুরুর পর পরই এক শ্রেণির লুটেরা গরীবের ত্রাণ লোপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নামধারী ওইসব জনপ্রতিনিধিরা যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কার থেকে কে বেশী চুরি করতে পারে চলছে সেই প্রতিযোগিতা। আর তাদের সেই প্রতিযোগিতার ফলে বুভুক্ষ মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে সময়টাতে রাজাকারদের দেশের জন্য যুদ্ধ করার কথা ছিলো তখন তারা ধর্ষণ, লুটপাট আর হত্যাকান্ডে জড়িয়ে পড়েছিলো। ঠিক আজো তাদের প্রেতাত্মারা কোথায় জনগনের পাশে দাঁড়াবে তা না করে তারা আজ লুটপাটে লিপ্ত। তারা কতোটা লোভী, কতোটা বর্বর তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে।
সরকার যুদ্ধাপরাধী অনেকের বিচার করেছেন। রায়ে দন্ডিত অনেককেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছেন। আমরা আশা করবো যারা ত্রাণের চাল চুরি করে যারা ধরা পড়ছে, তাদের যেন যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হয়। এবং তারা যেন আর কখনো দলে ফিরতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়। করোনা ভাইরাস থেকে দয়ালু সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে রক্ষা করুন।
লেখক- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।
এনএস/