আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৪ এএম, ৯ মে ২০২০ শনিবার
আজ ১৫তম রমজান। মাগফিরাতের মাঝ পর্যায়। আজকের আমল হোক উত্তম আচরণ, সময়কে কাজে লাগানো এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা।
উত্তম আচরণ
আবু আবদিল্লাহ জাদালি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘পরিবারের লোকদের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আচরণ কেমন ছিল?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আচরণের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। তিনি কখনো কাউকে অশিষ্ট কথা বলতেন না, গালমন্দ করতেন না, বাজারে গিয়ে হৈ চৈ করতেন না, মন্দ আচরণের বিপরীতে মন্দ আচরণ করতেন না, বরং ক্ষমার নীতি অবলম্বন করতেন।’
আগামীকালের অপেক্ষায় না থেকে সময়কে কাজে লাগানো উচিত
মুজাহিদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, ‘মুজাহিদ! সকালে অবস্থান করে সন্ধ্যাবেলার উপর ভরসা রেখো না, সন্ধ্যায় অবস্থান করে সকালবেলার উপর আস্থাশীল হয়ো না; আর মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনকে এবং অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও। কারণ, আবদুল্লাহ! আগামীকাল তোমার নাম কী হতে যাচ্ছে- তা তুমি জানো না।’
আল্লাহর প্রিয় বান্দার পার্থিব অবস্থা
সালিম ইবনু আবিল জা’দ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, যদি সে তোমাদের কারো দ্বারে এসে স্বর্ণমুদ্রা চায় সে (অর্থাৎ, গৃহকর্তা) তাঁকে তা দিবে না, রৌপ্যমুদ্রা চাইলেও দিবে না, এমনকি পয়সা চাইলেও দিবে না; অথচ সে যদি আল্লাহর নিকট জান্নাত চায় আল্লাহ তাঁকে অবশ্যই দিবেন, কিন্তু সে যদি আল্লাহর নিকট দুনিয়া চায় তাহলে আল্লাহ তাঁকে দিবেন না। তাঁকে দুনিয়া থেকে বঞ্চিত করার কারণ এ নয় যে তাঁর পদমর্যাদা আল্লাহর নিকট তুচ্ছ। (ওই ব্যক্তি) দু’খণ্ড জীর্ণ বস্ত্রের অধিকারী; পোশাকের প্রতি তার কোন বিশেষ আকর্ষণ নেই। সে যদি আল্লাহর নামে কোন কিছুর শপথ করে, আল্লাহ অবশ্যই তাঁর শপথ বাস্তবায়ন করবেন।’
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে বান্দাকে অবশ্যই রবের হুকুম-আহকাম পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) আনুগত্য ছাড়া আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া সম্ভব নয়।
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে বেশ কিছু আমল অতি জরুরি। ইসলামি স্কলারদের মতে, এসব আমলের প্রেক্ষিতে অন্তরে ঈমানের নূর তৈরি হয়। অন্তরে প্রশান্তি অনুভূত হয়। এমন কয়েকটি আমল হলো-
চোখের হেফাজত করা
এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করনে, ‘মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। -সূরা নুর: ৩০
এখানে চোখের হেফাজত বলতে বুঝানো হয়েছে, কোনো অবৈধ জিনিস দেখা, যা আল্লাহ ও তার নবী (সা.) নিষেধ করেছেন- তা না দেখা। এসব থেকে বিরত থাকা।
জবানের হেফাজত
মুখ দিয়ে কোনো প্রকার খারাপ কথাবার্তা না বলা। ঝগড়া-বিবাদ, গালাগালি, পরনিন্দা কিংবা গিবত করা থেকে বিরত থাকা। বর্তমান সময়ে তো পরচর্চা করা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এটা ভয়াবহ কবিরা গোনাহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা একে নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো জঘন্য কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং কঠোরভাবে এ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকতে আদেশ দিয়েছেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘মিরাজের সময় আমাকে এমন সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো- যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরাইলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা তাদের ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানী করতো। -মাজহারি
আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘গীবত ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক গোনাহ। গীবত ইসলামি শরিয়ত মতে হারাম।
অন্তরের হেফাজত
অন্তরের হেফাজত তথা নীরবে-নিভৃতেও কোনো প্রকারের মন্দ কল্পনা করা বৈধ নয়। তেমনি কারো সম্পর্কে মন্দধারণ করাও কবিরা গোনাহ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ এবং গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না।’ -সূরা হুজুরাত : ১২
এ জন্য অন্তরে যে কোনো ধরনের কুচিন্তা ও মন্দ ধারণা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এসএ/