ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

করোনা উপসর্গে মৃত্যু

নিজেই লাশ বহন করে সৎকার করলেন ইউএনও

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪২ পিএম, ১০ মে ২০২০ রবিবার

ইউএনও নাজমুল হুদার নেতৃত্বে মৃত সৎকারের চিত্র -ছবি একুশে টিভি।

ইউএনও নাজমুল হুদার নেতৃত্বে মৃত সৎকারের চিত্র -ছবি একুশে টিভি।

করোনা উপসর্গে নড়াইলে বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৯ মে) গভীর রাতে মারা যান তিনি। যদিও তার পাশে ছিলেন না পরিবারের কেউই। ঘরের মধ্যে তার মৃতদেহ রেখে আত্মগোপনে যান স্ত্রী ও ছেলে। 

কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের এ ঘটনায় আজ সকালে (১০ মে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুদা নিজেই ঘর থেকে মৃতের লাশ বের করেন, বহন করেন, চিতায় তোলেন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেন। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় গেল পারিবারিক বন্ধন!

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালিয়ার বড়দিয়া গ্রামের নির্মল রায় চৌধুরীর ছেলে বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরি করতেন। ঢাকা থেকে কাশিসহ করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দু’দিন আগে বাড়িতে আসেন। এরপর আলাদা রাখা হয় বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীকে। শনিবার রাতে তিনি মারা যান। রোববার (১০ মে) সকালে বাড়ির লোকজন তার মৃত্যুর বিষয়টি টের পেলে কেউ কাছে যায়নি। 

এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক কালিয়া প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ফসিয়ার রহমান জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছান তিনি। এ সময় কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তারা জানতে পারেন বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর মৃতদেহ ঘরের মধ্যেই পড়ে আছে। পরিবারের লোকজন কেউ কাছে যাচ্ছেন না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার (বিশ্বজিৎ) স্ত্রী ও সন্তানের দেখা পাননি তারা। একপর্যায়ে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুদা মৃত ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ করেন। সঙ্গে ছিলেন কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কাজল মল্লিকসহ সাংবাদিক ফসিয়ার রহমান। এ সময় মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর কাঁধে করে বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর মরদেহ ঘর থেকে বের করেন ইউএনও নাজমুল হুদাসহ ওই সাংবাদিক। এ কাজে সহযোগিতা করেন মৃত বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর দুঃসম্পর্কের এক নাতি ও সৎকারের জন্য ইউএনও’র উদ্যোগে আসা কালিয়ার মন্টু বৈরাগি। ভ্যানযোগে শ্মশানে আনার পর মৃতব্যক্তিকে চিতায়ও তোলেন ইউএনও।

সাংবাদিক ফসিয়ার রহমান বলেন, এসময় আত্মগোপনে থাকা মৃত বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর ছেলে এগিয়ে আসেন। তার বাবাকে দাহ করার সময় ছেলেটি উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না কোনো আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশি। তার স্ত্রী ও অন্য সন্তানেরও (মেয়ে) দেখা পাওয়া যায়নি। রোববার দুপুরে চোরখালি শ্মশানে বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীকে দাহ করা হয়।

এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, পরিবারের কেউ এগিয়ে না আসায় নিজে কাঁধে করে মৃত বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর সৎকারের ব্যবস্থা করেছি। এ কাজে সাংবাদিক ফসিয়ার রহমানসহ আরো তিনজন সহযোগিতা করেন। এছাড়া বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। 

এনএস/