ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

রমজানেই বিশেষ পুণ্য অর্জনের সুযোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৯ পিএম, ১০ মে ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৯:৪১ পিএম, ১০ মে ২০২০ রবিবার

রমজানে প্রার্থনা

রমজানে প্রার্থনা

রমজান মাসকে বলা হয় আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার মাস। বেশি বেশি ক্ষমা পাওয়া, রোগ-অসুখ থেকে নিরাময় পাওয়ার জন্য এ মাস বড় উপলক্ষ। রমজান মাসে প্রত্যেকটা কাজের জন্য ফরজ কাজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আবার একটি ফরয কাজের জন্য সত্তরটি ফরজের সওয়াব পাওয়া যায়। এখন আপনি সারা বছর ব্যস্ততা বা সময় সুযোগ না পাওয়ায় অনেক নফল বা ফরয কাজ হয়তো করতে পারেননি। রমজান মাস আমাদের কাছে সে সুযোগ এনে দিয়েছে যেখানে আমরা কম সময়ে বেশি সওয়াব বা পুণ্য অর্জন করতে পারি। ধরে নিই করোনাকালের এই রমজান আমাদের জীবনে শেষবারের মতো সুযোগ করে দিয়েছে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।

আমরা এখন করোনা মহামারীর কারণে ঘরে থাকছি। আমরা বেঁচে থাকলে টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক দেখে সময় কাটানোর সময় অনেক পাবো। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এ সময় শেষ হয়ে গেলে ভালো কাজ করা বা মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। আবার এখন যদি আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করতে পারি, ভষিষ্যতে আমরা বা আমাদের পরিবার অনেক সুখ শান্তি এবং আনন্দে দিন কাটাতে পারবো। 

কোরআন নাজিলের আগে রমজান ছিল অন্য এগারটি মাসের মতোই একটি সাধারণ মাস। কিন্তু যখন কোরআন নাজিল হলো, রমজান অতীব গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে বিবেচিত হতে লাগল, এমনকি স্বয়ং আল্লাহর কাছেও। আর সেজন্যেই রমজান মাসটিকে তিনি শুধু অন্য এগার মাস নয়, হাজার মাসের চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলে বলেছেন।

আসুন দেখে নিই, রমজানে ক্ষমা পাওয়ার কি কি সুযোগ এখনো আমাদের জন্য উন্মুক্ত আছে। রমজান একদিক থেকে শারীরিক সুস্থতার মাস। ইবাদতের মধ্য দিয়ে কোরআন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শারীরিক মানসিক পারিবারিক আত্মিক সুস্থতার মাস। আবার এমাসে দানের সওয়াবও হচ্ছে অন্য যে-কোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ।

কোরআন ও নিরাময়: রমজান যেহেতু কোরআন নাজিলের কারণে বিশিষ্ট, এ মাসে তাই যতবেশি কোরআন অনুধাবনে ব্যয় করা যাবে তত উত্তম। আর একজন বিশ্বাসীর জন্যে কোরআন কল্যাণ ও নিরাময় বয়ে আনে- “বিশ্বাসীর জন্যে কোরআন হচ্ছে শেফা ও রহমতস্বরূপ” (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮২)। এ নিরাময় শারীরিক, মানসিক, আত্মিক এবং সামাজিক। 

এই রমজানে এ কোরআনের গভীরেই আপনি ডুবে যান। খতমে কোরআনে আপনি পাবেন রোগব্যধি, নেতিবাচকতা, ভয়, বিকৃতি, আতঙ্ক ও মনোবিকার থেকে মুক্তি। করোনাসহ সকল বালা-মুসিবত থেকে পরিবার থাকবে আল্লাহর রহমতের ছায়ায়। কারণ আপনি জানেন, কোরআনের জ্ঞান যেখানে অনুশীলন হয় ফেরেশতারা সেখানে আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে।

রমজানে খাওয়া-খরচ বেশি হবে- এটা আমরা ধরেই নিই। অথচ ধর্ম বলে- এহেন আচরণ রমজানের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ খেলাফ। রমজান মাসে অতিরিক্ত কোনো বাজার বা বাজেট রাখার প্রয়োজন নেই। রমজানে বেশি খাওয়া বা বেশি খরচ করা এটা জাহেলিয়াত বা অপরাধ। ভোজনবাহুল্য বর্জন করুন, বেঁচে যাওয়া অর্থ নিয়ে করোনার শিকার নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান। 

নবীজি (স) বলেছেন, রোজাদারের জন্যে দুটি আনন্দ। একটি হচ্ছে, ইফতারের সময়। আরেকটি আনন্দ হচ্ছে, সে যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে সাক্ষাত করবে সেই সময়। তিনি আরো বলেন, নিশ্চয়ই রোজাদারের জন্যে ইফতারের সময় একটি দোয়া এমন, যা আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। অর্থাৎ ইফতারের সময় দোয়া কবুলের সময়। অন্তত একটি দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।

ইফতারের সময়ের গুরুত্ব নিয়ে আরো বলা হয়- আল্লাহ এসময় আরশে আজিম থেকে তাকিয়ে থাকেন আর ফেরেশতাদেরকে ডাকেন। বলেন, আচ্ছা! জমিনে কী হচ্ছে? ফেরেশতারা বলে, আল্লাহ, সবাই খাবার-দাবার নিয়ে বসে আছে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, ওরা খায় না কেন? ফেরেশতারা জবাব দেয়, আপনি যে নিষেধ করেছেন সূর্য ডোবার আগে খাবে না। ওইসময় যারা দোয়া করে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, এরা কী চায়? তখন ফেরেশতারা বলে, আল্লাহ এরা মাফ চায়। তখন আল্লাহ বলেন, তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে আমি বলছি, আমার ভয়ে যারা সব খাবার সামনে রাখার পরও এখনও খাচ্ছে না, আমি সবাইকে মাফ করে দিলাম।
এরকম বরকতের সময়ও যদি কেউ ইফতারি বানাতে ব্যস্ত থাকে বা অন্য কাজে মশগুল থাকে তাহলে তাকে দুর্ভাগাই বলতে হয়।

এই রমজানে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে মৃতদের জন্যে নাজাত প্রার্থনা করুন। মৌলভি এনে দোয়া করার চেয়ে নিজেদের মতো করে, নিজের ভাষায় মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে নিজেরা প্রার্থনা করা অনেক বেশি পুণ্যের। আমাদের বাবা-মা বা আপনজন যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন আমরা খুব কান্নাকাটি করি। কিন্তু এরপর সাধারণভাবে আমরা তা পুরোপুরি ভুলে যাই। মনে করতেই চাই না। করলেও বছরে একবার, মৃত্যুদিবসে! নবীজির (স) বর্ণনা অনুসারে, একজন মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন সে করব থেকে সার্বক্ষণিকভাবে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্তুতি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনের কাছে সাহায্য চাইতে থাকে। আর তাদের জন্য সে সাহায্যই হলো তাদের জন্য দোয়া করা। 

এই দোয়ার উসিলায় তখন দয়ালু আল্লাহ তাদের অনেক পাপ ক্ষমা করে দেন। এই যেমন- আমরা অনেক সময় নিজেদের অগোচরে মৃত লোককে হঠাৎ মনে করি। এই মনে পড়ে যাওয়াটা কিন্তু আপনারও ইচ্ছায় না; ঐ মৃতব্যক্তিরও ইচ্ছায় না। আল্লাহই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। কারণ আল্লাহ চান, তাঁর বিপদগ্রস্ত বান্দাকে (মৃতব্যক্তি) মুক্ত করতে এবং সে মুক্তির উসিলা হিসেবে জীবিত কোনো বান্দাকে দিয়ে সুপারিশ করাতে। আর আল্লাহ সুপারিশ বা দোয়া অত্যন্ত পছন্দ করেন। কাজেই আমরা যারা বেঁচে আছি, তাদের দায়িত্ব হলো- যাদের পরিশ্রমের ফসল ভোগ করে আজ আমরা এ পর্যায়ে আছি, তাদের মুক্তির জন্যে বেশি বেশি দোয়া করা। মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানীসহ আপনজন, পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধবদের জন্য দোয়া করার এখনই গুরুত্বপূর্ণ সময়। 

এছাড়া, যে মাসে রসুলুল্লাহ (স) বেশি বেশি দান করতেন, সেই মাসে প্রত্যেক বিশ্বাসীর উচিৎ বেশি বেশি দান করা। আর এবার করোনা পরিস্থিতির শিকার মানুষের কথা মনে করে ঈদের কেনাকাটাসহ সব ধরনের ব্যয়বহুলতাকে বর্জন করুন। যথাসাধ্য এই দান নিয়ে নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান। রাসুলুল্লাহ (স) রমজান মাসে কারও উপকার করা, কারও কল্যাণ করা, কারও সমস্যা দূর করা, কারও অভাব মোচন করার জন্যে কাজ করাকে এতেকাফের চেয়েও অনেক অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে বর্ণনা করেছেন। তাই করোনা সংকট থেকে মুক্তি, বালা-মুসিবত থেকে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্যে জানই-সদকা হিসেবে বিশেষ দান করুন।

এনএস/