যে কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য পোলেন্ড যাবেন
একুশে টেলিভিশন লিমিটেড
প্রকাশিত : ০৬:৪৯ এএম, ১২ মে ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৫৪ এএম, ১২ মে ২০২০ মঙ্গলবার
ইউরোপ মহাদেশের মধ্যস্থলের একটি রাষ্ট্র ও ঐতিহাসিক অঞ্চল পোল্যান্ড পোলেন্ডের রাজধানীর নাম ওয়ারস।এর পূর্বে ইউক্রেন ও বেলারুস, পশ্চিমে জার্মানি, দক্ষিণে চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া, এবং উত্তরে বাল্টিক সাগর, লিথুয়ানিয়া ও রাশিয়া অবস্থিত।
এছাড়াও বাল্টিক সাগরে পোল্যান্ডের সাথে জলসীমান্ত রয়েছে ডেনমার্কের । পোল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছে ২০০৪ সালের ১লা মে থেকে ।
২০১৪ সালের এক জরিপ অনুযায়ী পোল্যান্ডের ৮৭ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী। এছাড়া অন্য ধর্ম পালন করে পোলিশ অর্থোডক্সসহ অন্যান্য কিছু গোষ্ঠীর মানুষ । পোল্যান্ডের কোনো কোনো অঞ্চল জনবিরল ও গহীন অরণ্যে ঢাকা। ওই সব অঞ্চলগুলিতে কৃষি ও শিল্প সম্পদের পরিমাণ কম।
ভলিবল এবং ফুটবল হচ্ছে পোল্যান্ডের জনপ্রিয় খেলা । এছাড়াও পোল্যান্ডের বাসিন্দারা স্কাই জাম্পিং, আইস হকিং, টেনিস, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, বক্সিং, সুইমিং এবং বাইক রাইডিং করতেও পছন্দ করে।
এখানের মানুষের জন্য ফ্যাশন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দেশটির জাতীয় পরিচয় বহন করে পোলিশদের খাদ্যাভ্যাস, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, জার্মানি , রাশিয়া, , ইউক্রেন, ফ্রান্স ইত্যাদি অনেক দেশের সাথে মিলে যায়।
এখানকার জীবনযাত্রার মান উন্নতমানের হলেও, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জীবন যাপন খরচ ও টিউশন ফি অনেক কম, ভিসা প্রক্রিয়ায়ও সহজ আর এ কারণে অনেকেই পোল্যান্ডকে উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিচ্ছেন।
পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় ভাষা পোলিশ হওয়াতে এখানের বেশিরভাগ কোর্স পোলিশ ভাষায় পড়ানো হয় ,দেশটির প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পোলিশ ভাষা শেখার জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে।অনেক ইংরেজি কোর্সও রয়েছে। পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাইলে আইএলটিএসে ভালো স্কোর থাকতে হবে।
পোল্যান্ডের কিছু উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হলো, ওয়ারশ ইউনিভার্সিটি . মারিয়া কুরি-স্কোডোস্কা ইউনিভার্সিটি , নিকোলাস কোপারনিকাস ইউনিভার্সিটি, ক্লাকাউ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি , লডজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, কলেজ অব সায়েন্স, জাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটি , এখানে বছরে তিনটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। প্রতিটি সেমিস্টার চার মাস করে।
পোল্যান্ডে ব্যা বিভিন্ন শর্ট কোর্সের উপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে আরচেলর ডিগ্রি, মাস্টার ডিগ্রি, ডক্টরেট ডিগ্রি ও আছে।
পোলেন্ডের ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ সাধারণত তিন থেকে চার বছর, মাস্টার ডিগ্রির মেয়াদ এক থেকে দুই বছর এবং ডক্টরাল/ পিএইচডি ডিগ্রির মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর হয়ে থাকে।
পোল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব বিভাগে পড়ানো হয়, ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল একাডেমি, এগ্রিকালচার একাডেমি, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইকোনমিকস একাডেমি, একাডেমি অব মিউজিক, ফাইন আর্টস, থিয়েটার এন্ড সিনেমাগ্রাফি, একাডেমিস অব ফিজিক্যাল এডুকেশন, হায়ার টিচার এডুকেশনাল স্কুল, থিওলজিক্যাল একাডেমি, নন পাবলিক স্কুল ইত্যাদি।
যেসব বিষয় হয়ে থাকে
পোল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টেরিয়র ডিজাইন, আর্ট এডুকেশন, জার্নালিজম ও সোশ্যাল কমিউনিকেশন, ইকোনমিক্স, এডমিনিস্ট্রেশন, বায়োটেকনোলজি, ফার্মেসি, ফিলোসফি, মেডিকেল এনালাইসিস, জিওগ্রাফি, ফরেস্ট্রি, আইন, নার্সিং, থিওলজি, মিউজিকোলজি, ফুড টেকনোলজি,ফটো, ফিল্ম এন্ড টিভি ক্যামেরাসহ রয়েছে আরো অনেক বিষয়।
বর্তমানে নার্সিং প্রোগ্রামের জন্য পৃথিবীতে পোল্যান্ড বিখ্যাত। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা নার্সিংয়ে উপর গ্রাজুয়েশনের জন্য এই পোল্যান্ডকে বেছে নিতে পারে। নার্সিংয়ের উপর পোলিশ সরকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। যারা নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে তাদেরকে সাথে সাথে পোল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিটে এবং স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
১. শিক্ষাব্যবস্থা
আধুনিক যুগে ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার জন্য যেসকল সুযোগ সুবিধা চায়, তার সবই রয়েছে পোল্যান্ডে। এখানে পড়াশোনার খরচ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। বিশ্বের প্রথম সারির বেশ কিছু ইউনিভার্সিটি ও দেশটিতে রয়েছে। পোল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু ক্লাসরুমেই পড়াশোনা করানো হয় না, ক্লাসরুম ছাড়াও ল্যাবরেটরি ক্লাস, বিভিন্ন সেমিনার, গ্রুপ ডিসকাশনে নিয়মিত অংশ নিতে হয়।
২. শিক্ষাবৃত্তি
পোল্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ইউনিভার্সিটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। “পোলিনস্কি স্কলারশিপ ফান্ড” অধিকাংশ বৃত্তি দিয়ে থাকে । প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সব পরীক্ষায় ৫০% উপর মার্ক থাকতে হবে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার জন্য।
৩. কাজের সুযোগ
পেলেন্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে খন্ডকালীন কাজ করার সুযোগ, শিক্ষার্থীর সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা এবং ছুটির সময় ৩৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। কাজের সুযোগ তুলনামূলক বেশি এখানকার ব্যস্ত ও জনবহুল শহরগুলোতে। আপনি যদি ইংরেজি ও পোলিশ ভাষায় পারদর্শী হলে সহজেই সহজেই কাজ পেয়ে যাবেন। সাধারনত বিদেশি শিক্ষার্থীরা রেস্তোরা, দোকান, শপিংমলে কাজ করে থাকেন।
৪. স্থায়ী বসবাস
একজন শিক্ষার্থী পড়াশুনা শেষ করতে করতে ৫ থেকে ৬ বছর লেগে যায় তখন সে পোল্যান্ডে বৈধভাবে বসবাসের পর পিআর (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির) জন্য আবেদন করতে পারবেন।আর যদি কেও সে দেশের কোনো নাগরিককে বিয়ে করলে তিন বছরের মধ্যে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবেন।
৫. আকর্ষণীয় স্থান
পোল্যান্ডের অনেক দর্শনীয় স্থান পুরো পৃথিবীতে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। ক্র্যাকও, ওয়ারসজাওয়া, গেডেন্সক, চেজেস্টচওয়া, অসচয়িটজ, টাট্রা পর্বত পোল্যান্ডের খ্যাতিসম্পন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
৬. বিনোদন
পোলেন্ডে বিনোদনের জন্য আছে আশ্চর্যময় সব দর্শনীয় স্থান আর পর্যটক মনোরঞ্জনকারী বিভিন্ন দল , বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বহির্মুখী সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম, এই সব কিছু মিলে পোল্যান্ডকে পর্যটন সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির চোখে পোল্যান্ড বিশ্বের ২৩ টি সুন্দরতম শহরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। মধ্যযুগের বেশ কয়েকটি পুরনো স্থাপনা পোল্যান্ডে এখনও রয়েছে। ঐ সময়ের অনেক পুরাতন গির্জা, ক্যাথেড্রাল পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এছাড়াও এদেশের সমৃদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি আপনাকে সব সময় আকর্ষণ করবে।
এস ইউ এ