সিদ্ধিরগঞ্জে সেই যুবকের লাশ দাফন করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫৯ পিএম, ১২ মে ২০২০ মঙ্গলবার
রিমন হোসেন ও তার বাবা ইয়ার হোসেন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রিমন হোসেন সাউদের লাশ মিজমিজি পাইনাদী ঈদগাহ করবস্থান কর্তৃপক্ষ দাফন করতে দেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রিমন হোসেন সাউদ করোনার উপসর্গ নিয়ে একাধিক হাসপাতালে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর নিষেধ করেছে জানিয়ে কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক মজু হোসেন রিমনের লাশ দাফন করতে বাধা দিলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা রিমনের বাবার লাশ একই কবরস্থানে দাফন করতে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই করবস্থানে রিমনের লাশ দাফন করতে না পেরে পরবর্তীতে সোমবার বিকেলে রিমন ও তার বাবা ইয়ার হোসেনের লাশ সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলোরোড এলাকাস্থ কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তারা জানান, করোনা সন্দেহে রিমনের লাশ দাফন করতে দেয়া হয়নি। অথচ রিমন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। সোমবারই (১১ মে) রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. সাঈদ আল-মামুন স্বাক্ষরিত দেয়া রিপোর্ট রিমনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
নিহত রিমনের বোনের স্বামী রানা ভূঁইয়া বলেন, গত সোমবার ভোর রাত ৩টার দিকে তার শ্যালক রিমন সাউদ (২৭) অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডস্থ প্রো-এ্যকটিভ হাসাপাতাল ও পরবর্তীতে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু করোনার উপসর্গ জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি থাকার কারণে কোন হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেনি। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর ৬টার দিকে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন আমার শ্বশুর ইয়ার হোসেন। তাকেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল ৭টায় তিনিও মারা যান।
তিনি আরো বলেন, আমার শ্যালকের করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার নিউমোনিয়া হয়েছে। সে করোনায় আক্রান্ত ছিল না। তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
এদিকে, ইয়ার হোসেনের ছোট ভাই সানিক হোসেন জানায়, আমার ভাই ইয়ার হোসেন ও ভাতিজার লাশ দাফনের জন্য আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি পাইনাদী ঈদগাহ কবরস্থানে গেলে সেখানে আমার ভাতিজা রিমন সাউদের লাশ দাফন করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেন কবরস্থান কর্তৃপক্ষ। কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক মজু হোসেন স্থানীয় কাউন্সিরের নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে আমাদেরকে লাশ দাফন করতে দেননি। তবে আমার ভাই হাজী ইয়ার হোসেনের লাশ দাফন করতে দিতে সম্মত হয় তারা। এতে আমরা হতবাক হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলোরোডস্থ মহিউদ্দিন ইমদাদুল উলুম কওমী মাদ্রাসায় নামাজে জানাজা শেষে পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে তাদের উভয়ের লাশ দাফন করি।
রিমনের লাশ সিদ্ধিরগঞ্জের ওই কবরস্থানে দাফন করতে না দেয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্নস্থানে এ নিয়ে সমালোচনায় মেতে ওঠে এলাকাবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিদ্ধিরগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ী জানায়, করোনা আক্রান্ত হলেও লাশগুলোতো দাফন করতে হবে। এছাড়া আমরা জানি মৃত্যুর ৩ ঘন্টা পর লাশের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু থাকে না। সেখানে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ কিভাবে লাশ দাফন করতে বাধা দেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। লাশ দাফন না করতে দেয়াটাও অমানবিক।
এনএস/