আফগানিস্তানে হাসপাতালে হামলায় প্রসূতিসহ ১৪ জন নিহত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:২৪ পিএম, ১৩ মে ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৪:২৬ পিএম, ১৩ মে ২০২০ বুধবার
হামলার পর সেনা সদস্যের হাতে উদ্ধারকৃত এক শিশু
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের এক হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে জঙ্গি হামলায় দুই শিশু ও ১২ জন নারী নিহত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বেশ কয়েকজন শিশুসহ আরো ১৫ জন কয়েকজন বন্দুকধারীর চালানো ঐ হামলায় আহত হয়েছে।
ওদিকে, দেশটির পূর্বাঞ্চলে এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ২৪ জন মারা গেছে।
এসব হামলার প্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি জানিয়েছেন যে তালেবান ও অন্যান্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে নানগারহার এলাকায় এক পুলিশ কমান্ডারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট। তবে কাবুলের হাসপাতালে হামলাটির পেছনে কারা ছিল তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তালেবানরা এই হামলার সাথে জড়িত নয় বলে জানিয়েছে।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় হাসপাতালে দু'টি বিস্ফোরণ এবং গুলির শব্দ শুনতে পায় বলে জানান স্থানীয়রা। হামলা চলার সময় পালিয়ে যেতে সক্ষম হওয়া এক চিকিৎসক জানান, বন্দুকধারীরা যখন হামলা চালায় তখন হাসপাতালে অন্তত ১৪০ জন ছিলেন।
হামলা শুরু হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রমজান আলী। তিনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান: "তারা হাসপাতালে আসা মানুষের দিকে কোনো কারণ ছাড়াই গুলি ছুঁড়ছিল। এটি একটি সরকারি হাসপাতাল এবং এখানে অনেক মানুষই পরিবারের নারী ও শিশুদের চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসে।"
আফগানিস্তানের স্পেশাল ফোর্স তিনজন বিদেশিসহ ১০০ জন নারী ও শিশুকে উদ্ধার করেছে বলে বিবিসিকে জানায় এক উদ্ধারকর্মী। হামলাকারীরা পুলিশের পোশাক পরে হাসপাতালে প্রবেশ করে। পরে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলা বন্দুকযুদ্ধ শেষে হামলাকারীদের সবাই মারা যায়।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি ছবিতে দেখা যায় সেনাবাহিনীর এক সদস্য রক্তাক্ত চাদরে মুড়িয়ে এক নবজাতককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।অতীতে কাবুলের শিয়া অধ্যূষিত এলাকাগুলোতে এই ধরণের হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছে আইএস।
মঙ্গলবার জঙ্গি গোষ্ঠীটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নেতাকে আরো দু'জন আইএস নেতাসহ কাবুল থেকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৭ সালে মেডিকেল কর্মীর ছদ্মবেশে কাবুলের প্রধান সেনা হাসপাতালে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় বিস্ময় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও। ঐ ঘটনায় ৫০ জন মারা গিয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছিল কর্তৃপক্ষ।
গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণাঞ্চলের যাবুল প্রদেশের একটি হাসপাতালের বাইরে বিস্ফোরক ভর্তি একটি ট্রাক বিস্ফোরণে অন্তত ২০ জন মারা যায়। ঐ হামলার দায় স্বীকার করেছিল তালেবান।
গতকালের ঘটনার পর টেলিভিশনে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি মন্তব্য করেছেন: "মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তালেবান বা অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীর এ ধরণের জঙ্গি হামলা ঠেকাতে আফগান নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিরক্ষামূলক নয়, আক্রমণাত্মক কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করার নির্দেশ দিচ্ছি।"
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় পুলিশ কমান্ডারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা জানায় শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের প্রায় অর্ধেক শেষ হওয়ার পর বোমা বিস্ফোরণ হয়। প্রাদেশিক কাউন্সিলের একজন সদস্য নিশ্চিত করেন যে হামলায় অন্তত ২৪ জন মারা গেছেন।
আতাউল্লা খোজিয়ানি নামের একজন সরকারি মুখপাত্র জানান, ঐ ঘটনায় আরো ৬৮ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার হওয়া এই দুই হামলার ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে 'অশুভ' এবং 'অযৌক্তিক' বলে নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
ওদিকে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বালখ প্রদেশে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন মারা গেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও তালেবানদের দাবি মারা যাওয়ারা সবাই বেসামরিক নাগরিক। তবে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, যারা মারা গেছে তারা সবাই তালেবান।
এসি