ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

রমজানের তৃতীয় দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৭ এএম, ১৪ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:৫৮ এএম, ১৪ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার

রমজানের প্রথম দশকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে রহমত বা দয়া বর্ষণ করেন, দ্বিতীয় দশকে মাগফিরাত বা ক্ষমা করেন এবং তৃতীয় দশকে নাজাতের ফায়সালা দেন।

রমজানের প্রথম দুই দশকের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত আরও অনেকে বেশি। কেননা এ দশকে শবে কদর রয়েছে। হাজার মাসের থেকেও উত্তম। এ রাতের কারণেই রমজানের তাৎপর্য ও ফজিলত পরিপূর্ণ হয়েছে।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি)

উপরোক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, শেষ দশকের তাৎপর্য ও ফজিলত কত কত বেশি। তাই শেষ দশককে শবে কদরের এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলা হয়েছে। এই দশকে ইতিকাফের সঙ্গে লাইলাতুল কদরকে তালাশ করবো এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ধর্ণা দিব।

রমজানের শেষ দিকে অনেকের মধ্যে ইবাদতে ঢিলেমি দেখা যায়। মনে হয় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। মসজিদে মুসল্লির পরিমাণ কমে আসে। যেখানে রাসূল (সা.) প্রথম দুই দশকের চেয়েও শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করতেন সেখানে আমাদের এই অবস্থা বাঞ্ছনীয় নয়।

মনকে শক্ত করে নিন, সফলকামের জন্য প্রতিজ্ঞা করুন। আরামকে দূরে সরিয়ে রাখুন। এই ফজিলত কিন্তু আপনার জীবনে আবার নাও আসতে পারে। শেষ সুযোগ মনে করে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করুন। নফল নামাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন, কুরআন তেলাওয়াত করুন এবং তাহাজ্জুদের সময়কে বাড়িয়ে নিন। চেষ্টা করুন জাহান্নাম থেকে মুক্তির।

জীবনের পদে পদে পাপ জড়িয়ে আছে। আল্লাহর করুণা ছাড়া এ থেকে মুক্তির কোন পথ নেই। যে সুযোগ পেয়েছেন তাকে কাজে লাগাতে না পারলে জীবন বৃথা। তাই এই শেষ সময়টুকুকে আঁকড়ে ধরি, জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভ করি।

রমজানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে ফসল রোপণ করলেন, সারাবছর এ থেকে ফলন তুলতে থাকবেন। আমলের যে ভিত রচনা করলেন বছরের পর বছর তা আরো সুদৃঢ় হবে। আপনি রূপান্তরিত হবেন এক অনন্য মানুষে। এ মাসে আপনার ভেতর যে গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তা থেকে শুধু আলো বেড় হতেই থাকবে। রমজানের এই সাধনা ও শিক্ষা ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটায়।

রমজানে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা যে ভাবে কাজ করেছে, এটি অব্যাহত থাকলে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র উপকৃত হবে। আমরা চলে যাব এক অনন্য উচ্চতায়। একদিন সেরা জাতিতে পরিণত হবো। এটাই ইসলামের মূল শিক্ষা।

আমাদের ভেতর এখনও ইসলাম বিরোধী চিত্র দেখা যায়, সেটি হলো ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। অন্য এগার মাসে যে লাভ করেন এক রমজান মাসেই তারচেয়ে বেশি করেন। এই মোহ হলো শয়তানের ধোঁকা। ন্যুনতম সহনশীল ও সহানুভূতি থাকলে কেউ এ ধরনের আচরণ করতে পারে না। অন্যান্য মুসলিম দেশ এ চিত্রের বিপরীত। এক্ষেত্রে আমাদের বিবেক জাগ্রত করতে হবে। না হলে রোজার অর্জন বিফলে যাবে।

এসব কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জিত এবং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। দোষ-ত্রুটি পরিত্যাগ করে সৎ গুণাবলি অর্জনের চেষ্টা করতে থাকি। নাজাত লাভের জন্য আল্লাহর কাছে সমর্পিত হই।

দান, ফিতরা এবং যাকাতের মাধ্যমে রোজাদার পায় আল্লাহ থেকে পুরস্কার। এ মাসে দান-সদগাহ যা কিছুই করেন তাতে রয়েছে অধিক পূণ্য। এ থেকে আপনি পাপমুক্ত হতে পারেন। এমনকি জাহান্নাম থেকে নাজাতও পেতে পারেন।
এসএ/