দুটি ব্যাংককে আড়াই হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:১৫ এএম, ১৫ মে ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০১:১৭ এএম, ১৫ মে ২০২০ শুক্রবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজন এবং বিদেশ ফেরত জনগণ যাতে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন, সে জন্য, কর্মসংস্থান ব্যাংকে ২ হাজার কোটি এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ৫শ’ কোটি টাকা আমানত হিসেবে দেবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের প্রত্যেককে আড়াই হাজার করে টাকা নগদ অর্থ প্রদান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে এই ঘোষণা দেন।
একই অনুষ্ঠান থেকে তিনি অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের ও উদ্বোধন করেন।
এছাড়া, ঈদ ও রমজান উপলক্ষে দেশের সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনকে আর্থিক সহায়তার এবং একইসঙ্গে ঈদের আগে আরও ৭ হাজার কওমি মাদরাসাকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথাও তিনি ঘোষণা করেন।
নগদ অর্থ সহায়তার জন্য সরকার ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরা হলে এই নগদ সহায়তায় উপকারভোগী হবে অন্তত দুই কোটি মানুষ। একইসঙ্গে অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ২ লাখ ৯ হাজার ৬৭৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে উপবৃত্তি বাবদ ১০২ কোটি ৭৪ লাখ ২ হাজার ৬০০ টাকা এবং টিউশন ফি বাবদ ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা (প্রায়) বিতরন করা হয়।
উপকারভোগীদের তালিকায় রয়েছেন-রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেওয়া লকডাউন বা শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ প্রদান বৃদ্ধি করার জন্য আরও ২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ আমানত দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘যুবক শ্রেণীকে যাতে বেকার হয়ে ঘুরে না বেড়াতে হয় সেজন্য সেখান থেকে তারা ঋণ নিতে পারবে। নিজেরা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে।’
প্রবাসীদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যারা প্রবাসী, তারা রেমিট্যান্স পাঠায়। তাদের যেন ঘরবাড়ি বিক্রি করে, ঋণ নিয়ে বিদেশে যেতে না হয়, তার জন্য প্রবাসী কল্যাণ নামে আরেকটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেই ব্যাংকেও আমরা আরও টাকা দেব। সেখানে আমরা অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা দেব। এর আগে ওখানে আমরা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, এখন প্রবাসে কাজের পরিধি সীমিত হয়ে গেছে। সেখানেও বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছে এবং অনেকে দেশে ফিরে আসছে। তারা আমার দেশের নাগরিক। তারা ওখানে কষ্ট করুক সেটা আমি চাই না। তারা ফিরে আসলে ফিরে আসবে। কিন্তু এখানে এসে তারা যেন কাজ করে খেতে পারেন, তাদের সেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যখন প্রথমবার সরকারে আসেন তখন দেশের যুব সমাজের বেকারত্বের অভিশাপ দূর করার জন্যই এই কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টি করেন। এ ব্যাংক থেকে শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত হোক, যেকোনো যুবক বা তরুণ-তরুণী কোনো জামানত ছাড়াই স্বল্প সুদে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।’ ‘এই ঋণ নিয়ে তারা একা ব্যবসা করতে পারেন অথবা বন্ধু-বান্ধব মিলে ব্যবসা করতে পারেন,’ যোগ করেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সংযুক্ত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, গণভবন প্রান্তে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পিএমও এবং গণভবনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বরগুণা, শরিয়তপুর, সুনামগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের উপকারভোগী জনগণের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
এবারের করোনা পরিস্থিতিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কষ্টের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের একটা দায়িত্ব আছে- আমি ইতোমধ্যে একটা তালিকা করতে বলে দিয়েছি- সকল মসজিদে ঈদ-রমজান উপলক্ষে আমি কিছু আর্থিক সহায়তা দেবো, সেই তালিকাটাও আমরা করে দিচ্ছি।’
দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৭ হাজার কওমি মাদরাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৭ হাজার কওমি মাদরাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। সেই পদক্ষেপও আমি নিয়েছি।
প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন কওমি মাদরাসায় সহায়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক মাদরাসা রয়েছে যেখানে এতিমখানা আছে তাঁরা খুব একটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তাঁদের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৮৬৫টি কওমি মাদরাসায়, যেখানে এতিমখানা আছে সেখানে আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।
এখাতে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন মাদরাসায় কতজন এতিম আছে আমরা হিসাব নিয়েছি, সে হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক মাদরাসায় আমরা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যারা এতিম-অসহায় যারাই আছে কোনো শ্রেণিই যেন অবহেলিত না থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা জায়গায় মানুষের কষ্টটা দূর করা-এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেটাই চাই। এত বেশি মানুষ, হয়তো অনেক বেশি দিতে পারবো না। কিন্তু, কিঞ্চিত পরিমাণ দিলেও যেন দিতে পারি, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।
ধান কাটায় কৃষকদের সাহায্য করায় ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ নেতারা ধান কাটায় সাহায্য করায় আজ সারা বাংলাদেশের কৃষকের গোলাভরা ধান।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। আল্লাহর রহমতে, অন্তত খাদ্যের কষ্ট হবে না। সেটা আমরা ব্যবস্থা করতে পারব। কিছু নগদ সাহায্য দেয়া একান্ত অপরিহার্য। আমরা সেটুকু ব্যবস্থা করছি।
তিনি বলেন, ‘সেইসঙ্গে যারা এখন বেকার আছেন, তারা কিছু কিছু কাজ করতে পারেন। যেখানে জমিজমা আছে একটা কিছু চাষাবাদ করা, একটু কাজ করা। নিজেও উদ্যোক্তা হয়ে একটু কাজ করেন। নিজে আর্থিকভাবে যেমন আপনারা দাঁড়াতে পারেন বিভিন্ন কাজ করে (এসব কাজ) দেশেরও সহায়তা হতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফসল তোলার সময় আমাদের যে সমস্যাটা ছিল, যোগাযোগ ব্যবস্থাটা বন্ধ। তারপর আমরা যখন উদ্যোগ নিলাম, আমাদের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নিল। কিন্তু সেখানেও লোকবলের অভাব ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে আমাদের ছাত্রলীগকে আহ্বান জানালাম। যে যেখানে আছে, তাদের নিজের এলাকা-সব জায়গায় তাদের নামতে হবে এবং ধানকাটায় কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
‘মনে রাখতে হবে ধান থেকে চাল হয়। আর এ চাল থেকে কিন্তু ভাত হয়। আমাদের মূল খাদ্য। কাজেই সেই কাজ করতে লজ্জার কিছু নেই, তা গর্বের বিষয়। আমরা যেটা খেয়ে জীবন বাঁচাই, সেই জায়গায় শ্রম দেব না-এই দৈন্যতা যেন কারও মনে না থাকে’- যোগ করেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘এন-৯৫ ’ সম্পর্কেও কথা বলেন এবং এটি সাধারণের জন্য নয় বরং করোনা রোগীকে যারা সেবা প্রদান করবে তাঁদের পরিধানের জন্যই দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়া ঘরে সংক্রমণ মুক্ত পরিবেশে থাকলে তিনি মুখের পরিধেয় মাস্ক খুলে রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
সূত্র: বাসস
এমবি//