করোনায় রক্ত সংকট
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:২৮ পিএম, ১৫ মে ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৩৩ পিএম, ১৫ মে ২০২০ শুক্রবার
করোনা দুর্যোগে দেশের সাধারণ রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। করোনা পরিস্থিতিতে রক্তদাতার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় রক্ত পাচ্ছেন না রোগীরা। থ্যালাসেমিয়া বা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের স্বজনেরা এই রমজানেও ঘন্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন ল্যাবে বসে আছেন রক্তের আশায়। কেউ কেউ আর্তনাদ করছেন এক ব্যাগ রক্তের জন্য। আকবর আলী নামে এক বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত তার মেয়ের জন্য পাগলের মতো ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়। বিভিন্ন জনের কাছে যাচ্ছেন রক্তের আশায়। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার মাইয়াড়ারে একটু বাঁচান’। আকবর আলীর মতো এমন অসংখ্যা মানুষ এক ব্যাগ রক্তের জন্য পাগলপারা হয়ে আছেন।
দেশে চলছে এখন সাধারণ ছুটি। এর মধ্যেও মানুষের সেবায় কোয়ান্টাম ল্যাবসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ল্যাবের সমস্ত কাজ চালু রেখেছেন। প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে তারা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত এক মাসে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীদের ৪ হাজার ৫৭৪ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করেছে কোয়ান্টাম ল্যাব। কিন্তু বর্তমান করোনাকালে দেখা দিয়েছে রক্তের সংকট। থ্যালাসেমিয়া রোগীসহ আরও নানা রোগে আক্রান্ত মানুষেরা এক ব্যাগ রক্তের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় আছেন। অনেক মা বাবা এক ব্যাগ রক্তের জন্য ঘুরছেন পথে rথে। কারো সামান্য এ রক্তের সহযোগিতায় বেঁচে যাবে আদরের সন্তানটি। তাই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আবেদন জানিয়েছে মানুষের জীবন রক্ষায় রক্ত দানে এগিয়ে আসতে।
কোয়ান্টাম ল্যাবের কো-অর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান জানান, গত বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে ১৩ মে ২০১৯ পর্যন্ত ৮ হাজার ৫৮৫ ইউনিট রক্ত সরবারহ করা হয়েছিল। সে অর্থে করোনার কারণে মাসিক সরবরাহ কমে গেছে ৪ হাজার ১১ ইউনিট। ফলে প্রায় ৪৭ শতাংশ রোগীর জন্য রক্ত বা রক্ত উপাদান সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি আরও বলেন, দেশের এ পরিস্থিতিতে রক্তদাতারা যদি স্বেচ্ছায় রক্ত দান না করেন তাহলে অনেক থ্যালাসেমিয়া রোগী, সন্তানসম্ভবা নারী কিংবা অপারেশনের রোগীকে আমরা প্রয়োজনের মূহুর্তে রক্ত সরবরাহ করতে পারবো না। তাই জীবন বাঁচাতে এ মুহুর্তে রক্তের খুব প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে শুরু করে দুই দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় কোয়ান্টাম ল্যাব গড়ে তুলেছে তিন লক্ষাধিক রক্তদাতার একটি ডোনার পুল। এ পর্যন্ত কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম প্রায় ১২ লাখ রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করেছে। প্রতি মাসে বেশ কিছু থ্যালাসেমিয়া রোগী ও কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীকে প্রসেসিং খরচ ছাড়াই কোয়ান্টাম ল্যাব থেকে রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করা হয়। জাতীয় দুর্যোগে সব সময়ই বাংলাদেশের মানুষের সমমর্মিতা বিশ্বের জন্যে অনুসরণীয়। এর প্রমাণ মেলে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রানা প্লাজা ধ্বস, বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড বা ডেঙ্গুর ভয়াবহতার সময়। করোনার এই সময়েও অনেক রক্তদাতা এগিয়ে এসেছেন মুমূর্ষের পাশে দাঁড়াতে। তবে এই মুহূর্তে প্রয়োজন আরও অনেক মানুষের সম্মিলিত সহযোগিতা।
এসি