ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস আজ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:২৪ পিএম, ১৬ মে ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৪:৪২ পিএম, ১৬ মে ২০২০ শনিবার
আজ ১৬ মে- ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস। ৪৪ বছর আগে ১৯৭৬ সালের এই দিনে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে মারণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লাখো জনতার লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ওই দিন বাংলার সর্বস্তরের মানুষের বজ্রকণ্ঠ দিল্লির মসনদ পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়।
১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে লংমার্চ শুরু হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে শেষ হয়। দিনটি ছিল রোববার। সকাল ১০টায় রাজশাহী থেকে শুরু হয় জনতার পদযাত্রা। হাতে ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষের ঢল নামে রাজশাহীর রাজপথে। ভারত বিরোধী নানা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। দুপুর দুইটায় হাজার হাজার মানুষের স্রোত জেলার গোদাগাড়ীর প্রেমতলী গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে মধ্যাহ্ন বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় লংমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে রাতযাপনের জন্য সে দিনের মতো শেষ হয়। মাঠেই রাত যাপন করার পরদিন সোমবার সকাল আটটায় আবার যাত্রা শুরু হয় শিবগঞ্জের কানসাট অভিমুখে।
ভারতীয় সীমান্তের অদূরে কানসাটে পৌঁছানোর আগে মহানন্দা নদী পার হতে হয়। হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয় এই লংমার্চে। তারা নিজেরাই নৌকা দিয়ে সেতু তৈরি করে মহানন্দা নদী পার হয়। কানসাট হাইস্কুল মাঠে পৌঁছানোর পর সমবেত জনতার উদ্দেশে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী তার জ্বালাময়ী ভাষণ দেন।
মওলানা ভাসানী ভারতের উদ্দেশে বলেন, ‘তাদের জানা উচিত বাংলার মানুষ এক আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পায় না। কারো হুমকিকে পরোয়া করে না।
তিনি বলেন, আজ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কানসাটে যে ইতিহাস শুরু হয়েছে তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করবে।’
মওলানা ভাসানী এখানেই লংমার্চের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ সীমানার মধ্যে লংমার্চ সমাপ্ত হলেও সেদিন জনতার ভয়ে ভীত ভারতীয়রা সীমান্তে প্রচুর সৈন্য মোতায়েন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।
প্রতিবেশী দেশ হয়েও ভারতের একতরফা ও আগ্রাসী মনোভাবের কারণে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চল ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মা আজ পানির অভাবে শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৩০টি নদী আজ বিলুপ্তির পথে। অন্য দিকে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন পানির স্তর স্থান ভেদে ১০০ থেকে ১৩০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। আর নগরীতে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে।
যদিও এই সময়ে যেখানে পদ্মানদীর পানি প্রবাহ ৩৫ হাজার কিউসেক থাকার কথা, সেখানে সর্বশেষ পরিমাপ অনুযায়ী ১৪ মে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৭৬ হাজার কিউসেক; যা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই পানি বৃদ্ধি ঈশ্বরদীসহ উত্তর জনপদে আগাম বন্যার পূর্বাভাসেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পানি চুক্তির এই দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পদ্মা নদীতে চুক্তির পানি দিয়ে চাহিদার অর্ধেকই পূরণ হতো না বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পদ্মাসহ সব শাখা নদী যখন মৃতপ্রায় তখন এবার পানির এই প্রবাহ আশাব্যঞ্জক।
এসএ/