চীন থেকে লগ্নি সরিয়ে নিচ্ছে আমেরিকা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:২৭ পিএম, ১৬ মে ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৫:৩২ পিএম, ১৬ মে ২০২০ শনিবার
চীনের বিরুদ্ধে একের পর এক রণহুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। অন্যদিকে চীন লড়ছে ঠান্ডা ভাবে, নীরবে। যুদ্ধটা অর্থনীতির। আমেরিকায় করোনাভাইরাসের হানা নিয়ে চীনের উপরে ডোনাল্ড ট্রাম্প এতটাই খাপ্পা যে, শি চিনফিংয়ের সঙ্গে কথাই বলতে চান না বলে জানিয়েছেন। পারলে সম্পর্ক ছিন্নই করে দিতে চান চীনের সঙ্গে। তাতে আমেরিকার ৫০ হাজার কোটি ডলার বেঁচে যাবে বলে তাঁর দাবি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর্থিক ভাবে চীনকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য রোজই হুঙ্কার দিচ্ছেন। আজ স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা, উড়ান, সামরিক সরঞ্জামের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রের চীনা সংস্থায় মার্কিন পেনশন ফান্ডের টাকা খাটানো চলবে না। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে ট্রাম্প বলেছেন, “চীনা সংস্থাগুলি থেকে শত শত কোটি ডলার সরিয়ে এনেছি।” আরও কিছু পদক্ষেপের কথাও ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আলিবাবার মতো অনেক সংস্থা আমেরিকার শেয়ার বাজারে যুক্ত। ফলে তাদের শেয়ারে লগ্নি করছেন মার্কিনরাও। কিন্ত তারা বিদেশি সংস্থা, হিসেবে তাদের লাভ-ক্ষতির খতিয়ান দেয় না। এদের বিষয়ে কি কিছু করা হবে? ট্রাম্পের মন্তব্য, “এই বিষয়গুলি কড়া মনোভাব নিয়েই দেখা হচ্ছে। তবে কি না সকলেই কড়া (টাফ গাই) হতে চায়। আমি তো সবচেয়ে কঠোর। প্রশ্ন হল, চিনা সংস্থাগুলিকে বাধ্য করলে তারা নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ বা এনএএসডিএকিউ থেকে সরে গিয়ে লন্ডন, হংকং বা অন্য কোথাও গিয়ে তালিকাভুক্ত হতে পারে।” ফলে নিজেদের ক্ষতির অঙ্কটি কষেই ‘কড়া’ হতে চাইছেন ট্রাম্প।
মার্কিন সেনেটররাও তৎপর রয়েছেন চীনের বিরুদ্ধে। বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ অতিমারির জন্য বেজিংকে দায়ী করে, তাদের বিরুদ্ধে ১৮ দফা প্রস্তাব সামনে এনেছেন মার্কিন সেনেটর টম টিলিস। তাতে চীন থেকে কলকারখানা সরিয়ে আনা, ভারত, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানের সঙ্গে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
চীনের বিরুদ্ধে যাঁরাই সক্রিয় হচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ করছে বেজিং। কিন্তু পেনশন ফান্ড নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার পরেও চীনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র চা লিজিয়াং সাংবাদিক বৈঠকে বিবৃতি দিয়েছেন বাঁধা গতেই। তাঁর কথায়, “উভয় দেশের স্বার্থে চীন-আমেরিকা সম্পর্কের ধারাবাহিক উন্নয়ন ধরে রাখা প্রয়োজন। সেটা বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার অনুকূল।” এর পরেই লিজিয়াংয়ের বক্তব্য, “এই মুহূর্তে প্রয়োজন হল মহামারি রুখতে সহযোগিতা বাড়ানো, যত দ্রুত সম্ভব মহামারিকে পরাস্ত করা, রোগীদের চিকিৎসা করা, অর্থনীতি ও উৎপাদনকে আগের অবস্থায় ফেরানো। কিন্তু এই ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে হাত মেলাতে আমেরিকাকে অর্ধেক পথ এগিয়ে আসতে হবে।”
কোভিড-১৯ অতিমারি নিয়ে বিশ্বের সমালোচনার জবাব আর্থিক ভাবেও দিচ্ছে চীন। রাজনৈতিক বা কূটনীতির ক্ষেত্রে লাভ আদায়ে বহু ক্ষেত্রেই বাণিজ্য-নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র করে এসেছে বেজিং, গত এক দশকে নরওয়ে, কানাডার মতো দেশের বিরুদ্ধে এটি প্রয়োগ করেছে তারা। করোনা পর্বে সেটিই করছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। নোভেল করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বেজিং যেন এ ব্যাপারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা না-করে। এর পরেই সে দেশের চারটি সংস্থা থেকে গোমাংস আমদানি বন্ধ করে চড়া শুল্কহার চালু করার হুমকি দিয়েছে বেজিং।
জানিয়েছে, দরকারে আমেরিকা থেকে বার্লি ও রাশিয়া থেকে গোমাংস নেবে তারা। এতেই থামেননি মরিসন। বলেছেন, “আমরা আমাদের মূল্যবোধের জমিতে দাঁড়িয়ে আছি। এবং জানি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
এসি