ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কোরআন নাজিলের মাস আসছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:১৫, ১৯ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১২:০৮, ২৩ এপ্রিল ২০২০

‘রমজান’ আরবি শব্দ। যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু মূলত এর অর্থ হচ্ছে ভস্ম করে দেয়া, ঝলসে দেয়া। এ মাসটির নামকরণের কারণ হচ্ছে, সর্বপ্রথম রোজার বিধান যে মাসে এসেছিল সে মাসটি ছিল প্রচণ্ড গরমের। ঝলসে দেয়ার মতো গরম, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘রমজান’।

আরবি বারো মাসের মধ্যে ‘রমজান’ হচ্ছে নবম মাস। বছরের বাকি এগারো মাসের তুলনায় এ মাসটির ফজিলত ও বরকত অনেক বেশি। মানব জাতিরা যখন সারাটি বছর খোদার নাফরমানি আর উল্টোমি করে কাটিয়ে দেয়, ঠিক তখনই সেসব ভুলের মাশুল দিতে ক্ষমার স্লোগান নিয়ে মানুষকে নিষ্পাপ আর পাপরাশিকে ভস্ম করার জন্য আগমন ঘটে মাহে রমজানের।

এই রমজান মাসে প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত, তথা হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল (আ.)–এর মাধ্যমে বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল–কোরআন অবতীর্ণ হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারিরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় রাত্রি কী? মহিমান্বিত নিশি সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেয়। সে রাত্রিতে ফেরেশতাগণ রুহুল কুদুস হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা উদয় পর্যন্ত’(সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)। আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’–এর ফারসি হলো শবে কদর। অর্থ সম্মানিত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারণী রজনী।

একশ আসমানি সহিফা, চারখানা কিতাবসহ মোট এক শ চারটি কিতাবের মধ্যে কোরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। এই কিতাব নাজিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, নবীগণের ইমাম, রাসুলদের সরদার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি। এই কোরআনের স্পর্শ বড়ই সৌভাগ্যের।

হজরত জিবরাইল (আ.) কোরআন বহন করেই ফেরেশতাদের সরদার হওয়ার গৌরব লাভ করেছেন। 

সেই কোরআন নাজিলের মাস আসছে। মানব জাতির ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কোরআন যে এ মাসেই নাজিল হয়েছে এটা কারো অজানা নয়। আর অজানাদের জন্য আল্লাহপাকের ঘোষণা রয়েছে ‘রমজান সেই মাস যে মাসে নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়ত এবং পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী’। (সুরা : ১,আয়াত : ১৮৫)

কোরআন নাজিলের ব্যাপারে আল্লাহপাক সুরা বাকারার ১৮৪ নং আয়াতে বলেন,- ‘আইয়্যামাম মাদূদাত’ এ বাক্যটি ছিল সংক্ষিপ্ত। তারই ব্যাখ্যা করা হয়েছে উল্লিখিত আয়াতে। এ মাসটির অন্যতম ফজিলত হলো- ‘একে আল্লাহপাক স্বীয় ওহি এবং আসমানি কিতাব নাজিল করার জন্য নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং রমজান মাসই হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস।

মুসলমান হিসেবে যেমন ইসলামী শিক্ষা অর্জন করা সবার ওপর ফরজ, ঠিক তেমনিভাবে মুসলমানিত্ব বজায় রেখে যুগ চাহিদার খোরাক জোগাতে কলেজ-ভার্সিটিতেও পড়া সওয়াবের কাজ। রমজান ছাড়া প্রায় এগারোটি মাস আমরা সবাই স্কুল-কলেজ, ভার্সিটির লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাই। কোরআন তেলাওয়াত বা কেরাত চর্চার তেমন একটা সুযোগ মেলে না। রমজান মাসে খোদার তরফ থেকে যে বরকত প্রদান করা হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোরআন তেলাওয়াত : কোরআন তেলাওয়াত শিখা ফরজে কিফায়া আর তাজবিদ সহকারে তেলাওয়াত করা ফরজে আইন। আর এ ফরজে আইনের শিক্ষাকে অর্জন করলে বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা যাবে, আর অন্যকে শেখানোও সম্ভব হবে।

সারা বিশ্বে করোনার সংক্রমন রোধে মানুষ ঘরের মধ্যে অবস্থান করছে। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সব স্থানের মানুষ এখন ঘরবন্দি। এরই মধ্যে রহমতের মাস এসে হাজির হয়েছে। ঘরবন্দি জীবনে এখনই উত্তম সময় পবিত্র কোরআন পাঠ করা। 

কোরআন পাঠ আর রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা নিষ্পাপ হতে পারব। সেই সঙ্গে পাপরাশিকে ভস্ম করার সুযোগ পাব।

কুরআন মজিদে শব্দের সংখ্যা সাতাত্তর হাজার চারশ’ সাঁইত্রিশ এবং হরফ সংখ্যা তিন লাখ তেইশ হাজার ছয়শ একাত্তর। আধিকাংশের মতে এর আয়াতে কারিমার সংখ্যা ৬৬৬৬। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম কুরআন তিলাওয়াতকে সর্বোত্তম নফল ইবাদত বলেছেন।

তিনি আরো বলেছেন: কেউ যদি আল্লাহ্র কিতাবের একটি হরফ পাঠ করে তা হলে সে নেকি লাভ করে আর সেই নেকির পরিমাণ হচ্ছে দশ গুণ। (তিরমিযী শরিফে)। রমাদান মাসে কুরআন তিলাওয়াতে রয়েছে ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি সওয়াব। তারাবির সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। বিদায় হজের ভাষণে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি আল্লাহ্র কিতাব ও তাঁর রসুলের সুন্নাহ, তোমরা যদি তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বর করো তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। (বুখারী শরিফ, মুসলিম শরিফ)

এসএ/

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি