ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কোয়ারেন্টাইনে কোরআন হোক নিত্যসঙ্গী

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১৭:৪২, ২৫ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ২২:১৩, ২৫ এপ্রিল ২০২০

কুরআন হোক নিত্যসঙ্গী

কুরআন হোক নিত্যসঙ্গী

পবিত্র রমজান মাস হলো কোরআন নাযিলের মাস, কোরআন চর্চার মাস। পবিত্র কোরআনুল কারীম মুমিনের জন্য রক্ষাকবচ! ভ্রান্তি ও বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করে। পবিত্র কোরআনের বরকত লাভ করতে হলে, হিদায়াত লাভ করতে হলে, বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে। বোঝার চেষ্টা করতে হবে। পাথরে পাথর ঘর্ষণে যেমন আগুন জ্বলে ওঠে, তেমনি কলবের সাথে পবিত্র কোরআনের আয়াতের ঘর্ষণেও কলবে হেদায়াতের আলো জ্বলে ওঠে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই এই কোরআন সর্বাধিক সরল পথের সন্ধান দেয়। (সূরা ইসরা: ৯)

যে ব্যক্তি নিজেকে একজন প্রকৃত মুমিন হিসাবে দাবি করবে তাকে অবশ্যই পবিত্র কোরআন শিক্ষতে, বুঝতে ও জানতে করতে হবে। মহান আল্লাহ তাআলা কোরআন শিক্ষা করা ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’। (সূরা আলাক: ১)। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন,‘হে নবী, আমি কালামুল্লাহকে পৃথক পৃথক পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং ওহি যথার্থভাবে অবতীর্ণ করেছি’। (সূরা বনী ইসরাইল: ১০৬)। 

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘রমজান হলো এমন একটি মাস, যে মাসে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে লোকদের হিদায়াতের জন্য এবং সত্যপথযাত্রীদের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নিরূপণকারী হিসেবে’। (সূরা বাকারা: ১৮৫)।  আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এ কুরআন বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে’। (আশ-শুআরা: ১৯২)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি তো কোরআন শেখার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সূরা আল ক্বামার: ১৭)। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’। (সূরা আল মুযযাম্মিল: ২০)। 

উল্লেখিত আয়াতে কারিমা থেকে বুঝা যায়, রমজান মাস; পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। অতএব পবিত্র কোরআনের সঙ্গে এ মাসের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং বেশি বেশি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা এবং এর অধ্যয়ন করা এ মাসের অন্যতম ইবাদত। 

নবীজী (স.) বলেন, রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ৬৬২)। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যিনি নিজে কোরআন শিক্ষা করেন এবং অপরকে শিক্ষা দেন। (বুখারি: ৫০২৭। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো। কারণ, কোরআন কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। (মুসলিম: ১৯১০)।

হাদিসে বর্ণিত, রোজা ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে (মুসনাদ আহমাদ: ৬৬২৬)। 

নবিজী বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ। (তিরমিজি : ২৯১০)। হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, কোরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কোরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে। (সহীহ বুখারি: ৪৬)।

কোরআনের মধ্য দিয়ে, কোরআন নাজিলের মধ্য দিয়ে আল্লাহ মানুষকে তার জীবনকে সুন্দর করার, জীবনকে কল্যাণময় করার, জীবনকে সফল করার, জীবনকে সুখী করার যে ম্যানুয়াল, সেই ম্যানুয়ালের পরিপূর্ণতা দান করেছেন। এইজন্যেই এই মাসে যে কোনো ভালো কাজের নেকি বা সওয়াব এত বেশি।

কোরআন চর্চা অন্তরের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমরা রমজান মাসে যত বেশি বেশি কোরআন চর্চা করব, কোরআন অনুশীলন করব, ততো ভেতর থেকে অন্তরের যে জটিলতা রয়েছে, অন্তরে যে নেতিবাচকতা  রয়েছে, অন্তরের যে ভয় রয়েছে, অন্তরে যে বিভ্রান্তি রয়েছে, এই বিভ্রান্তিগুলো থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। এই বেরিয়ে আসাটা অনেকটা হয়ে যাবে অবলীলায়, যদি আপনি কোরআনের গভীরে ডুব দিতে পারেন।

কারণ কোরআন এমন একটি গ্রন্থ যা সমগ্র মানবজাতির জন্যে –জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে যে-কোনো ধর্মের যে-কোনো বর্ণের যে-কোনো ভাষার যে-কোনো অঞ্চলের মানুষ এ কোরআন থেকে কল্যাণ লাভ করতে পারেন। কোরআন থেকে শেফা লাভ করতে পারেন, নিরাময় লাভ করতে পারেন, রহমত লাভ করতে পারেন। কারণ কোরআন এমন এক গ্রন্থ যা খুব সহজসরল, যা বোঝার জন্যে শুধু আন্তরিক চেষ্টাটাই যথেষ্ট। যা বোঝার জন্যে কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নাই আর কি। শুধু প্রয়োজন হচ্ছে আন্তরিক ইচ্ছা আন্তরিক অভিপ্রায়।

কারণ কোরআনে দুটো জিনিসের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে- যে বাণী এবং ধ্বনি –দুটোর সমন্বয়। কথা এবং শব্দ, বাণী এবং ধ্বনির এ অপূর্ব সমন্বয় যে-কোনো মানুষকে তার অন্তরের উৎকণ্ঠা, তার উদ্বেগ, তার মানসিক চাপ- এ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

আর কোরআনের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ এবং জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ যদি কিছু থাকে, সবচেয়ে বড় গুনাহর কাজ যদি কিছু থাকে, সেটি হচ্ছে কোরআনের জ্ঞান অর্জন করার জন্যে প্রচেষ্টা না চালানো। কোরআনের জ্ঞান থেকে নিজেকে দূরে রাখা। আপনি কতটা মানবেন সেটা পরবর্তী ধাপ। আগে আপনাকে জানতে হবে যে কোরআন আপনাকে কী বলছে। যখন আপনি জানলেন, সবচেয়ে বড় ফরজ আপনার আদায় হয়ে গেল এবং যখন আপনি মানবেন তখন আরেকটি ফরজ আদায় হবে। যদি না জানেন, আপনার পাপ হবে দ্বিগুণ। আর জানার পরে যদি না মানেন, তো না মানার পাপ হবে, না জানার পাপ থেকে আপনি রেহাই পাবেন। কোরআনকে আত্মস্থ করতে হলে কোরআন যেভাবে বলে দিয়েছে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

তাই কোরআন শিক্ষা এবং পাঠের প্রতি অবহেলা না করে আসুন, এবারের রমজানকে আমরা কোরআনময় করি। কুরআন নাযিলের এই মহিমান্বিত মাসে ঘরে থেকেই কুরআন পাঠ ও চর্চার মাধ্যমে সময় কাটানোর চেষ্টা করি। অযথা ঘরের বাইরে বের না হই এবং বেশি বেশি কুরআন বুঝে বুঝে পড়ি এবং সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করি।  

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি