রমজানে সুস্থতা ও স্রষ্টার সন্তুষ্টি
প্রকাশিত : ২২:১০, ২৫ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ২২:১২, ২৫ এপ্রিল ২০২০
রমজানুল মুবারক
শুরু হয়েছে মাহে রমজান। রহমতের, বরকতের এ সময়ে গোটা পৃথিবী করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত। এসময়ে একদিকে মানুষ রোগে শোকে আক্রান্ত, অন্যদিকে খাদ্য সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠিক এসময়ে আমাদের কাছে রমজান যেন সহমর্মীতার পরীক্ষা হয়ে এসেছে। রোগ-শোক থেকে মুক্তি পেতে আমরা অন্যের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। আবার অবরুদ্ধ এ সময়ে পবিত্র কোরআন মজিদ পাঠ, অর্থ অনুধাবন এবং সে অনুযায়ী নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি।
রোজা রাখা, রোজাকে আনন্দময় ও সুন্দর করার জন্যে নবীজী (স) যেভাবে ইফতার করতেন, যেভাবে সেহরি করতেন - সেই আলোকে আমরা যদি আমাদের খাবারের ব্যবস্থাপনাটাকে সাজিয়ে নেই, তাহলেই রোজার যে শারীরিক উপকার, মনোদৈহিক উপকার- এই উপকারগুলো খুব সুন্দরভাবে পাব। আবার নিজেরা বেশি না খেয়ে সে অর্থ যদি অসহায় মানুষদের মধ্যে দান করি তাহলে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন হবে।
যেমন- ইফতার করব খেজুর-পানি দিয়ে। ইফতারে সব ধরনের ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত জিনিস, বাজারের জিনিস এটা বর্জন করব। তারপরে মাগরিবের নামাজ পড়ে নিব। তারপরে রাতের খাবার খেয়ে নিব। রাতের খাবারে মাছ-ডিম-ডাল-সবজি ভাত পরিমাণমতো খাবো। তারপরে তারাবিহ এবং তারপর আরও যদি ইবাদত করতে চান করতে পারেন। সেহরীতে হালকা খাওয়ার চেষ্টা করবেন। চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। মনে রাখবেন যত কম খাবেন, ক্ষুধা তত কম লাগবে। সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে মনে করে সেহরিতে কখনো বেশি খেতে যাবেন না। সেহরিতে যত আপনি বেশি খাবেন, ক্ষুধা, তৃষ্ণা আপনার তত বেশি লাগবে। এজন্যে খুব অল্প ভাত, এক বাটি সবজি এবং ইচ্ছে করলে একটু ফল খেতে পারেন। আর প্রয়োজনীয় পানি। সারাদিন চমৎকার কাটবে! রমজান আপনার জন্যে সবদিক থেকে সুস্থতার মাস হতে পারে।
মনে রাখবেন, রোজা পালনরত বা কোয়ারেন্টাইনের এ সময়ে আপনি পবিত্র কোরআন চর্চা করে উপকৃত হতে পারেন। আপনি জানেন, কোরআন চর্চা অন্তরের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমরা রমজান মাসে যত বেশি বেশি কোরআন চর্চা করব, কোরআন অনুশীলন করব, তত ভেতর থেকে অন্তরের যে জটিলতা রয়েছে, অন্তরে যে নেতিবাচকতা রয়েছে, অন্তরের যে ভয় রয়েছে, অন্তরে যে বিভ্রান্তি রয়েছে, সেগুলো থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। এই বেরিয়ে আসাটা অনেকটা হয়ে যাবে অবলীলায়, যদি আপনি কোরআনের গভীরে ডুব দিতে পারেন। কারণ কোরআন এমন একটি গ্রন্থ যা সমগ্র মানবজাতির জন্যে– জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে-কোনো ধর্মের যে-কোনো বর্ণের যে-কোনো ভাষার যে-কোনো অঞ্চলের মানুষ এ কোরআন থেকে কল্যাণ লাভ করতে পারেন। মনে রাখবেন, মহামারীর এ সময় আপনি কোরআন থেকে শেফা লাভ করতে পারেন, নিরাময় লাভ করতে পারেন, রহমত লাভ করতে পারেন।
কোরআন এমন এক গ্রন্থ যা খুব সহজ-সরল, যা বোঝার জন্যে শুধু আন্তরিক চেষ্টাটাই যথেষ্ট। যা বোঝার জন্যে কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নাই। শুধু প্রয়োজন হচ্ছে আন্তরিক ইচ্ছা আন্তরিক অভিপ্রায়। কোরআনে দুটো জিনিসের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে- বাণী এবং ধ্বনি– এ দুটোর সমন্বয়। কথা এবং শব্দ, বাণী এবং ধ্বনির এ অপূর্ব সমন্বয় যে-কোনো মানুষকে তার অন্তরের উৎকণ্ঠা, তার উদ্বেগ, তার মানসিক চাপ - এ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
মহামারীর এ সময় শুদ্ধভাবে রোজা পালন, কোরআন চর্চা, অসহায়কে দান এবং প্রার্থনা আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারে। রাসুলুল্লাহ (স) রমজান মাসে কারও উপকার করা, কারও কল্যাণ করা, কারও সমস্যা দূর করা, কারও অভাব মোচন করার জন্যে কাজ করাকে এতেকাফের চেয়েও অনেক অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে বর্ণনা করেছেন। হাদিসে আছে, রমজান মাসে অভাবীর প্রয়োজন পূরণে, বিপদগ্রস্তের প্রয়োজন পূরণে দান করা, সাহায্যে এগিয়ে আসা মসজিদে বসে ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়েও বেশি পুণ্যের, বেশি সওয়াবের।
আপনি নিজের খাবার এই রমজান মাসে সীমিত করে ফেলুন। সেখান থেকে যা বাঁচে সে অর্থ অসহায়দের জন্য দান করুন। একইভাবে ঈদের খরচ যাই করতেন, সমস্ত খরচ বাঁচান। যারা হজের নিয়ত করেছিলেন সে অর্থও দান করে দিতে পারেন। আগামী বছর যাবেন বলে, এই টাকাটা যদি ধরে রাখেন... আপনি জানেন না আগামী বছর আপনি বেঁচে থাকবেন কি না। কিন্তু যারা ওমরায় যেতে পারেন নি, এই টাকা যদি অসহায় দুস্থ মানুষের কল্যাণে আপনি দান করেন, কারও অভাবকে মোচন করেন, কোনো এতিমের মুখের খাবার আপনি যোগান, তাহলে হয়তো এই অসিলায় আপনার হজও কবুল হয়ে যেতে পারে।
করোনায় যত লোক মারা গেছে, তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করতে পারি। কিন্তু কাজ না থাকার কারণে যত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, তাদের কষ্ট দূর করার জন্যে আমাদের যাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে এই সামর্থ্য নিয়ে যদি আমরা এগিয়ে আসি, তাহলে পরম করুণাময় অবশ্যই আমাদেরকে এই বালা এবং এই মুসিবত থেকে মুক্তি দেবেন।
এনএস/