রমজানে কোরআন ও তাহাজ্জুদ পড়ার গুরুত্ব
প্রকাশিত : ১১:২১, ২৮ এপ্রিল ২০২০
রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। আখেরাতের সদাই করার শ্রেষ্ঠ সময় রমজান। তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোই মুমিনের কাজ। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা রোযা রাখি, তারাবি নামাজ আদায় করি, সেহরি ও ইফতার করে থাকি। এর পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ নামাজেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
কিয়ামতের কঠিন মসিবতের দিন কোরআন ও রোযা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সুপারিশ করবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন রোযা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে : হে হাবার রব! আমি তাকে খাদ্য ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রেখেছি। আমাকে তার ব্যাপারে সুপারিশ করার অনুমতি দিন। কোরআন বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। আমকে তার ব্যাপারে সুপারিশ করার অনুমতি দিন।’
(মুসনাদে আহমদ)
তাই এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা। সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআন পড়ার অভ্যাস করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত হচ্ছে- ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো কোরআন তিলাওয়াত করা। নামাজের মধ্যে যেমন কোরআন তিলাওয়াত করা আবশ্যক, নামাজের বাইরেও ভালোভাবে কোরআনকে বোঝার জন্য তিলাওয়াত করা জরুরি। কোরআন দেখে দেখে পড়া, অর্থসহ পড়ে বোঝার চেষ্টা করা জরুরি। রমজান মাসের এই মহান সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য একবার যদি কোরআন খতম দেওয়া যায় অথবা অন্তত একটি পারাও যদি অর্থসহ পড়া যায়, তা কতই না ভালো আমল।
এ ব্যাপারে হাদিস শরিফের বর্ণনায় আরও পাওয়া যায়, ‘যে মুমিন কোরআন তিলাওয়াত করে, তার দৃষ্টান্ত কমলালেবুর মতো, যা সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। আর যে মুমিন কোরআন তিলাওয়াত করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের মতো, যার ঘ্রাণ নেই, কিন্তু মিষ্টি।’
আল কোরআনের সুরা মুয্যাম্মিলে ইরশাদ হচ্ছে- তোমরা রাত্রি জাগরণ করো, কিছু অংশ ব্যতীত। অর্ধরাত্রি বা তার চেয়ে কম অথবা তার চেয়ে অধিক। এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, রাতে ইবাদত করার ব্যাপারে কোরআন বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছে। সেহরি করা, ইফতার করা, তারাবি নামাজ আদায় করা যেহেতু রাতেই হয়ে থাকে, সুতরাং রাতের বেলা তাহাজ্জুদ আদায় করাও অন্যতম ইবাদত।
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ রমজান মাসের রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের জন্য নিয়ম করেছি এ মাসের কিয়ামুল লাইল বা রাত্রিকালীন ইবাদতকে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ণ ইমান সহকারে এবং গুনাহ মাফের আশায় এ মাসে রোজা রাখে ও তাহাজ্জুত আদায় করে, তাহলে সে এমন নিষ্পাপ হয়ে যায়, যেমন মা তার নিষ্পাপ সন্তানকে প্রসব করেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ? (সা.) রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুত) পালন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশা নিয়ে রমজান মাসে কিয়াম করবে (রাতের বেলায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে) তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’
রমজানে এই আমল করা আমাদের জন্য সহজ। কেননা সেহরী খাওয়ার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠি। একটু বেশি সময় নিয়ে উঠলেই আমরা তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করতে পারি। একাকী কিংবা জামায়াতের সঙ্গে কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদ নামাজ) মসজিদ বা বাসাবাড়িতে আদায় করা যায়। প্রতিরাতে ১২ রাকাত নামাজ আদায় সম্ভব না হলেও অন্তত ৪ রাকাত বা ৮ রাকাত নামাজ আদায় করার অভ্যাস আমরা করতে পারি।
তথ্যসূত্র : সহিহ সিত্তাহ
এসএ/