রমজানে গুনা মাফের জন্য তওবা
প্রকাশিত : ১১:৩৪, ৩ মে ২০২০
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করছেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি যদি তোমরা সালাদ কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলগনে ইমান আনো এবং তাদের সম্মান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করবো এবং নিশ্চয়ই দাখিল করাবো এমন জান্নাতে যার পাদদেশে ঝর্ণা প্রবাহিত।’ কথাটা এসেছে সুরা মায়েদার ১২নং আয়াতে।
সুতরাং এখানে আল্লাহ তার নৈকট্যের আশ্বাস দিচ্ছেন কিন্তু সঙ্গে রয়েছে কতগুলো শর্ত। এ শর্তগুলো পালন করলেই আল্লাহ তাকে দিচ্ছেন পাপমোচনের আশ্বাস; দিচ্ছেন চিরশান্তির প্রতিশ্রুতি, যে শান্তিকে বলা হচ্ছে জান্নাত-এমন জান্নাত যার তলদেশে নির্ঝর প্রবাহিত।
পাপ এই পার্থিব জীবনের একটা অনিবার্য দিক। রক্তের সঙ্গে মানবদেহের যে সম্পর্ক পাপের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অনেকটা সে রকম। ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক মানুষ পাপ করবেই। তার দেহটাই এমনভাবে তৈরি যে পাপ না করে তার উপায় নেই। মানুষের দৈহিক অস্তিত্বটাকে যদি চার ভাগে ভাগ করা যায় তবে দেখা যাবে তার তিনভাগই হচ্ছে পশুত্ব। এই পশুত্বের মধ্যে রয়েছে তিনটি নফস-নফসে আম্মারা, নফসে মুলহিমা এবং নফসে লাওয়ামা। এদের মধ্যে নফসে আম্মারাই হচ্ছে সবচেয়ে খতরনাক-সবচেয়ে বিপদজ্জনক। এর হাত থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন-এই হচ্ছে মানুষের মধ্যে পশু প্রবৃত্তি যার তাড়নাকে মানুষ অস্বীকার করতে পারে না। নফসে মুলাহিমা এবং লাওয়ামা অতটা শক্তিশালী কিছু নয়। কিন্তু পরোক্ষভাবে হলেও এদেরও প্রবণতা হচ্ছে খারাপ দিকে।
আমাদের মধ্যে আরও দুটি নফস আছে যাদের বলা হয় নফসে রাদিয়া ও নফসে মার্দিয়া। এগুলো ভালো নফস কিন্তু দুর্বল। এদের সবল করার জন্যই প্রয়োজন আস্তাগফারের। মানুষ যতই অনুশোচনায় নত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করবে ততই মানুষের কুপ্রবৃত্তিগুলো নিস্তেজ হয়ে আসবে এবং সেই সঙ্গে সবল হয়ে উঠবে নফসে রাদিয়া এবং নফসে মার্দিয়া।
মানুষ পাপ করার ক্ষমতার চেয়ে আল্লাহর মাফ করার ক্ষমতা অবশ্যই বেশি। কাকে মাফ করবেন, কেন কারবেন সে একান্তেই তাঁর ব্যাপার। কিন্তু তিনিই বলেছেন কবিরা গুনাহ তিনি মাফ করবেন না। যারা ছোট গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে তাদের অনেক গুনাহ তিনি তাদের অজান্তেই মাফ করে দেবেন। কিন্তু কবিরা গুনাহ সম্পর্কে সে ধরনের কোন আশ্বাস আল-কোরআনের কোথাও দেয়া হয়নি। কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অনেকগুলো হাদিস আছে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ঐ সমস্ত লোক কবিরা গুনাহর অপরাধে অপরাধী যারা কোন কিছুর সঙ্গে আল্লাহকে শরীক করে, যারা পিতামাতাকে কষ্ট দেয়, যারা নর হত্যা করে, যারা মিথ্যা কসম করে এবং যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। [বোখারি, মুসলিম]।
হযরত আমর (রা:) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে বলা হচ্ছে (মিশকাত), ওই সমস্ত লোক যাদের অত্যাচারে পাড়া পড়শী অতিষ্ঠ থাকে তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এটাও কবিরা গুনাহ।
আর একটি হাদিসে হুজুরে পাক (সা:) বলেছেন, আমি মুহাম্মদ কসম করছি ওই আল্লাহর-যাঁর হাতে আমার জান আছে-ওই ব্যক্তির দোয়া, এবাদাত আল্লাহ কবুল করবেন না যে কেবল নিজেই আযাব থেকে বাঁচতে চায়-তার আত্মীয়-পরিজন এবং প্রতিবেশীদের বাঁচাতে চেষ্টা করে না।
উপরে বর্ণিত সবগুলো গুনাহই কবিরা গুনাহর পর্যায়ে পড়ে। রমজান মাসে আমরা আল্লাহর মার্জনা ভিক্ষা করে নিশ্চয়ই তওবা করবো সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্যে। আল্লাহ কাকে মাফ করবেন, কাকে করবেন না, সে তো তিনিই জানেন।
তিরমিজি শরিফের একটি হাদিসে বলা হচ্ছে, আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের উপর রাতের এবাদাত আমি জরুরী করে দিয়েছি, তোমাদের পূ্র্ববর্তীদের যেমন করেছিলাম।’
যারা রাতে এবাদাত করে আল্লাহ তাঁদের নৈকট্য দেন, তাঁদের আগের ও পরের গুনাহ মাফ করে দেন এবং নিজে তাঁদেরকে আলোর পথে টেনে আনেন। এটাই কর্জে হাসান বা উত্তম ঋণ। এই ঋণজালে আল্লাহকে যে বাঁধাতে পারে তারই মানব জন্ম সার্থক।
সূত্র : হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি’র (রহ.) সংলাপ সমগ্র বই থেকে সংগৃহীত।
এসএ/