শিরক থেকে বাঁচার ও মুক্ত হওয়ার সূরা ‘আল কাফিরুন’
প্রকাশিত : ১৬:১৩, ৬ মে ২০২০ | আপডেট: ১৭:০৩, ৬ মে ২০২০
মাহে রমজানে আমরা বেশি বেশি কোরআন পাঠ করব। চেষ্টা করব অর্থ বুঝে তবেই পাঠ করার। সব সময় কোরআনের সঙ্গে থাকব। কারণ এ মাসেই আল্লাহ মহা পবিত্র আল কোরআন নাজিল করেছেন। এই কোরআন মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক।
আজ আমরা পবিত্র কোরআন শরীফের ১০৯ নম্বর সূরা ‘সূরা কাফিরুন’ পাঠ করব। সেই সঙ্গে জেনেনিব এর ফজিলত সম্পর্কে।
১০৯. সূরা কাফিরুন
পারা ৩০, আয়াত ৬, রুকু ১ (মাক্কী)
বাংলা উচ্চারণ
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।
কুল ইয়া আইউহাল কাফিরূন। লা আ’বুদু মাতাবুদুন। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ। ওয়া লা আনা আবিদুনা মা আবাদতুম। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মাআবুদ। লাকুম দীনুকুম ওয়ালীয়া দ্বীন।
মর্মবাণী
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
(হে নবী! ওদের) বলো, হে সত্য অস্বীকারকারীরা! ২. আমি তার ইবাদত করি না, যার ইবাদত তোমরা করো। ৩. আর তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। ৪. তোমরা যার ইবাদত করছ আমি তার ইবাদত করতে প্রস্তুত নই। ৫. আর তোমরাও তাঁর ইবাদত করতে প্রস্তুত নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। ৬. অতএব তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্যে আর আমার ধর্ম আমার জন্যে।
ফজিলত ও গুরুত্ব
সূরা আল-কাফিরুন পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এই সূরা পবিত্র কোরআন শরীফের ৩০ নম্বর পারায় আছে। সূরা আল-কাফিরুনের পূর্ববর্তী সূরা হচ্ছে সূরা আল কাওসার, আর পরবর্তী সূরা হচ্ছে সূরা নাসর।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ তথা তাওহীদের বাণী প্রচার করেন। এই বাণী প্রচারের সময় এবং দাওয়াত দেয়ার সময়কালে মক্কার কুরাইশগণ বিভিন্নভাবে তার প্রচারে বাধা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন প্রচেষ্টা, ছক করেও যখন তারা ব্যর্থ হয়, তখন তারা মহানবী (সা.)-কে একটি প্রস্তাব দেয় যা ছিল অনৈতিক।
তারা নবীজিকে তাওহীদের দাওয়াত ও কুফরীর মধ্যে একটি আপোসের প্রস্তাব দিল। তারা প্রস্তাব দেয় যে, এক বছর তারা এবং সবাই তাদের মূর্তি পূজা করবে এবং আর এক বছর তারা এবং সবাই আল্লাহর ইবাদত করবে। (নাউজুবিল্লাহ) এই অনৈতিক ও হাস্যকর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কাছে পবিত্র এই সূরা নাজিল করেন এবং আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দেন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যেন তাদের প্রস্তাব আকিদা ও ধর্ম থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেন। এ সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর মক্কার কিছু মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং তারা আল্লাহর একত্ববাদ সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার কোনো শরিক নেই। মুসলমানদের জন্যে এককভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা প্রতি ইবাদতে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা থাকার জন্যে তাওহীদের প্রতি ঈমান তথা অবিচল বিশ্বাস প্রতিস্থাপন অতীব প্রয়োজনীয়।
সূরা আল কাফিরুনে সেই একত্ববাদের ইবাদত স্পষ্ট হয়েছে। এই সূরায় শিরক থেকে বাঁচার ও মুক্ত হওয়ার কথা বলা আছে।
সূরা আল কাফিরুন পাঠে বিশেষ ফজিলত রয়েছে। কাবা ঘর তাওয়াফের সময় এই সূরা পাঠে ফজিলত রয়েছে। জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরা কাফিরুন এবং সূরা ইখলাছ কাবা ঘরের তওয়াফ শেষের দু’রাকাআতে পাঠ করতেন। (মুসলিম)
ঘুমানোর পূর্বে সূরা কাফিরুন পাঠে রাসূল সালাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন। নবীজি বলেন, ‘যখন শয্যা গ্রহণ করবে তখন পাঠ করবে ‘ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফেরূন’- শেষ পর্যন্ত তা পাঠ করবে। কেননা উহার মধ্যে শিরক থেকে মুক্ত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে।’ (তবরাণী শরীফ)
ফজর এবং মাগরিবের সালাতের সঙ্গে এই সূরা আদায় করাতে সাওয়াব রয়েছে। ফজরের দুই রাকায়াত সুন্নাতের প্রথম রাকায়াতে সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ইখলাছ পড়াতে ফজিলত রয়েছে। একইভাবে মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজেও এই সূরা পড়ার ফজিলত রয়েছে।
হাদিস শরীফে এসেছে হজরত ইবনু ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পূর্বের দু’রাকাআতে এবং মাগরিবের পরের দু’রাকাআতে বিশের অধিকবার বা দশের অধিকবার পাঠ করেছেন- ‘ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফেরূন’ এবং ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ।’ (আহমাদ)
এসএ/