রমজানে কোরআন চর্চা
প্রকাশিত : ১৬:৫৫, ৭ মে ২০২০
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা রোজা রাখো যেন সুস্থ থাকতে পার।’ অর্থাৎ- সবদিক থেকে যাতে আপনি ভালো থাকতে পারেন সেই জন্যেই রমজান মাসের এতো গুরুত্ব। রোজার প্রাথমিক প্রাপ্তি হচ্ছে- মনোদৈহিক সুস্থতা। রোজায় আপনি সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন তখনই, যখন নবীজী (স.) যে নিয়মে রোজা পালন করতেন, সেই নিয়ম আপনি অনুসরণ করবেন।
অন্য মাসের চেয়েও রমজান মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা জানি, এ মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসে একটা নফল এবাদত ফরজ এবাদতের সমান। আর একটি ফরজ এবাদত সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান।’
রোজাকে সুন্দর করার জন্যে নবীজী (স.) যেভাবে ইফতার করতেন, যেভাবে সেহরি করতেন - সেই আলোকে আমরা যদি আমাদের খাবারের ব্যবস্থাপনাটাকে সাজিয়ে নেই, তাহলেই রোজার যে শারীরিক উপকার, মনোদৈহিক উপকার- সেটা আমরা খুব সুন্দরভাবে পাব। ইফতার করব খেজুর-পানি দিয়ে। ইফতারে সব ধরনের ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার, বাজারের খাবারগুলো বর্জন করবেন।
কোরআনের মধ্য দিয়ে, কোরআন নাজিলের মধ্য দিয়ে আল্লাহ মানুষকে তার জীবনকে সুন্দর করার, জীবনকে কল্যাণময় করার, জীবনকে সফল করার, জীবনকে সুখী করার যে ম্যানুয়াল, সেই ম্যানুয়ালের পরিপূর্ণতা দান করেছেন। এইজন্যেই এই মাসে যে কোনো ভালো কাজের নেকি বা সওয়াব এতো বেশি। আমরা রমজান মাসে যতো বেশি বেশি কোরআন চর্চা করব, কোরআন অনুশীলন করব, ততোই ভেতর থেকে অন্তরের যে জটিলতা রয়েছে, অন্তরে যে নেতিবাচকতা রয়েছে, অন্তরের যে ভয় রয়েছে, অন্তরে যে বিভ্রান্তি রয়েছে, এই বিভ্রান্তিগুলো থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।
কোরআন এমন এক গ্রন্থ যা খুব সহজসরল, যা বোঝার জন্যে শুধু আন্তরিক চেষ্টাটাই যথেষ্ট। যা বোঝার জন্যে কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নাই আর কি। শুধু প্রয়োজন হচ্ছে আন্তরিক ইচ্ছা, আন্তরিক অভিপ্রায়। কোরআনে দুটো জিনিসের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে- বাণী এবং ধ্বনি –এ দুটোর সমন্বয়। কথা এবং শব্দ, বাণী এবং ধ্বনির এ অপূর্ব সমন্বয় যে-কোনো মানুষকে তার অন্তরের উৎকণ্ঠা, তার উদ্বেগ, তার মানসিক চাপ - এ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
সবচেয়ে বড় পাপ: কোরআনের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ যদি কিছু থাকে, সবচেয়ে বড় গুনাহর কাজ যদি কিছু থাকে, সেটি হচ্ছে- কোরআনের জ্ঞান অর্জন করার জন্যে প্রচেষ্টা না চালানো। কোরআনের জ্ঞান থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
আসলে কোরআনকে আত্মস্থ করতে হলে কোরআন যেভাবে বলে দিয়েছে সেই প্রক্রিয়াই আমাদের অনুসরণ করতে হবে। অন্য কোনোভাবে কোরআনের জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। আর এই সময়টা যখন আপনি কোরআনের বাণী এবং ধ্বনিতে এবং মর্মবাণীতে যখন ডুবে যাবেন, আপনার ভেতর থেকে যত উদ্বেগ যত উৎকণ্ঠা- সে করোনার হোক, সে পারিবারিক হোক, সে সামাজিক হোক, আর্থিক হোক - এ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কখন যে মিলিয়ে যাবে। কখন যে একটা প্রশান্তির সুবাতাস আপনার ভেতরে বইবে, আপনি সেই সুবাতাস প্রবাহিত হওয়ার পরে টের পাবেন যে, ভেতর থেকে কতকিছু ময়লা আবর্জনা বেরিয়ে গেছে। এই কোয়ারেন্টাইনে খতমে কোরআনে আন্তরিকভাবে নিজেকে নিমগ্ন করার ফলে।
রমজান মাসে রাসুলুল্লাহ (স) বেশি বেশি দান করতেন। রমজান একদিক থেকে শারীরিক সুস্থতার মাস। ইবাদতের মধ্য দিয়ে কোরআন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শারীরিক মানসিক পারিবারিক আত্মিক সুস্থতার মাস। আবার এ মাসে দানের সওয়াবও হচ্ছে অন্য যে-কোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ। যে কারণে রাসুলুল্লাহ (স) এই মাসে অনেক বেশি বেশি দান করতেন।
বোখারী এবং মুসলিম শরীফের হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন যে, নবীজী (স) আমাদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল ছিলেন, আর রমজান মাসে তার দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। তিনি অনেক বেশি দান করতেন। যে মাসে রাসুলুল্লাহ (স) বেশি বেশি দান করতেন, সেই মাসে প্রত্যেক বিশ্বাসীর উচিৎ বেশি বেশি দান করা এবং রাসুলুল্লাহ (স) রমজান মাসে কারও উপকার করা, কারও কল্যাণ করা, কারও সমস্যা দূর করা, কারও অভাব মোচন করার জন্যে কাজ করাকে এতেকাফের চেয়েও অনেক অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে বর্ণনা করেছেন।
আমরা প্রামাণ্য হাদিস গ্রন্থ থেকে বুঝতে পারি- রমজান মাসে অভাবীর প্রয়োজন পূরণে, বিপদগ্রস্তের প্রয়োজন পূরণে দান করা সাহায্য করা এগিয়ে আসা বেরিয়ে পড়া মসজিদে বসে ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়েও বেশি পুণ্যের, বেশি সওয়াবের।
নিজের খাবার এই রমজান মাসে তিন আইটেমে সীমিত করে ফেলুন। সেখান থেকে যা বাঁচে... ঈদের খরচ যাই করতেন, সমস্ত খরচ বাঁচান। যারা হজের নিয়ত করেছিলেন...এমনকি যারা হজের নিয়ত করেছেন, হজ এবার হওয়ার সম্ভাবনা আল্লাহ্ই জানেন। আগামী বছর যাবেন বলে এই টাকাটা যদি ধরে রাখেন... আপনি জানেন না আগামী বছর আপনি বেঁচে থাকবেন কি না। কিন্তু যারা ওমরায় যেতে পারেন নি, এই টাকা যদি অসহায় দুস্থ মানুষের কল্যাণে আপনি দান করেন, কারও অভাবকে মোচন করেন, কোনো এতিমের মুখের খাবার আপনি যোগান, তাহলে হয়তো এই অসিলায় আপনার হজও কবুল হয়ে যেতে পারে। যদি আন্তরিকভাবে অসহায় মানুষের পাশে আপনার এই অর্থ নিয়ে আপনি দাঁড়ান। তাদেরকে না খাইয়ে যেন আমাদের কখনো খেতে না হয়।
একে/এনএস