মাহে রমজানে দান-সাদকা বাড়িয়ে দিন
প্রকাশিত : ১৪:০০, ১৩ মে ২০২০
দানশীলতা ও বদান্যতা একটি মহৎ গুণ। পবিত্র রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদারের অন্তরে দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি সৃষ্টি হয়। রোজার দ্বারা মানুষ দানশীল ও আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তাই মাহে রমজানকে সহানুভূতির মাস বলা হয়েছে। এ মাস সমাজের গরিব-দুস্থদের প্রতি অর্থ দ্বারা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস।
প্রতিটি রোজাদার মুমিন বান্দা রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে খাদ্য-পানীয়ের অভাবে গরিব-দুঃখী ও দরিদ্র-অসহায় লোকেদের কষ্ট অনুভব করে থাকেন। এ জন্য তাদের মধ্যে দানের প্রবণতা সৃষ্টি হয়। ফলে সমাজের ধর্মপ্রাণ ধনী সামর্থ্যবান রোজাদার ব্যক্তি রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ গঠনে গরিব-দুঃখী, দুস্থ, অভাবী, অনাথ, এতিম, মিসকিন ও কপর্দকহীন পথচারীকে প্রয়োজনে অর্থ বণ্টন করে দেবেন। তারা ক্ষুধার্ত হলে প্রয়োজনে তাদের সেহরি-ইফতারের বন্দোবস্ত করবেন, এটা মাহে রমজানে দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের সুবর্ণ সুযোগ। মাহে রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি। অন্য ১১ মাসের তুলনায় এ মাসে অধিক দান-সদকা করা উচিত।
রোজাদার ব্যক্তিকে ইবাদতে মগ্ন থেকে সহানুভূতি, সদয় আচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম যেমন দানশীলতাকে উৎসাহিত করেছে, তেমনি পরনির্ভরশীল হওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছে।
দানশীলতা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ পাক বলেছেন, হে আদম সন্তান, তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করব।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সমগ্র মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে যখন হজরত জিবরাইল (আ.) নিয়মিত আসতে শুরু করতেন, তখন হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) দানশীলতা বহুগুণ বেড়ে যেত।’ -সহিহ বোখারি
হাদিসে বলা হয়েছে, ‘ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম, আর যারা তোমার অধীন আছে, তাদের থেকেই দান করা শুরু করো। আর উত্তম দান হচ্ছে তা, যা প্রাচুর্য থেকে প্রদান করা হয়। আর যে ব্যক্তি যাচ্ঞা থেকে পবিত্রতা চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন। আর যে ব্যক্তি অন্যের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করেন।’-সহিহ বোখারি ও মুসলিম
যিনি দাতা বা দানশীল তার হাত দানগ্রহীতা বা দান গ্রহণকারীর হাত থেকে উত্তম। দাতা শ্রেষ্ঠ এ জন্য যে, তিনি দানশীলতা ও বদান্যতার মাধ্যমে অন্যের উপকার করেন। যেহেতু দান গ্রহণহীন কাজ, সেহেতু স্বীয় অধীন অভাবগ্রস্ত আত্মীয়-স্বজন থেকে প্রথম দান শুরু করে নিজের বংশের লোককে অন্যের কাছে হাত পাতা তথা দান গ্রহণ থেকে রক্ষা করতে হবে। আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যারা আত্মমর্যাদাশীল অথচ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত, তারা প্রকাশ্যে সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ করলেও তাদের থেকে দান আরম্ভ করা অপরিহার্য। আর দান করে রোজাদার ব্যক্তি অন্তরে কষ্ট অনুভব করলে সেই দান আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় ও পছন্দনীয় হয় না। তাই প্রাচুর্য থেকে দান করলে অধিক পুণ্য হয়। কেননা এতে দাতার অন্তরে কোনোরূপ কষ্ট হয় না।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার উম্মতদের বাস্তব শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে রমজান মাসে দান-দক্ষিণা ও বদান্যতার হাত বেশি করে প্রসারিত করতেন। রমজান মাসে নবী করিমের (সা.) দানশীলতা অন্যান্য মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেত। এ পবিত্র মাসটিকে তিনি দানশীলতার ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি মাহে রমজানে অন্যান্য সময় অপেক্ষা অধিক দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতেন। প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থী দরিদ্রকেই তিনি দান করতেন। এ সময় কোনো প্রার্থী তার কাছ থেকে বঞ্চিত হতো না। কোনো কয়েদিও এ সময়ে বন্দি থাকত না।
এসএ/